বুধবার ● ১১ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » জাতীয় » ভারতীয় লোকসভায় সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল পাশের ঘটনায় গভীর উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির
ভারতীয় লোকসভায় সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল পাশের ঘটনায় গভীর উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির
ঢাকা :: বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আজ ১১ ডিসেম্বর বুধবার এক বিবৃতিতে ভারতীয় লোকসভায় সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল পাশের ঘটনায় গভীর উৎকন্ঠা প্রকাশ করে এই বিলের প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং বলেছেন এই বিল একদিকে চরম সাম্প্রদায়িক ও মুসলিম বিদ্বেষী আর অন্যদিকে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান ও বহুত্ববাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভিত্তিমূলে কুঠারাঘাতের সামিল। এই বিল আইনে পরিণত হলে তা ভারতকে পুরোপুরি একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করবে। এই বিল যে ভারতের বর্তমান শাসক দল বিজেপি ও তাদের আদর্শিক সংগঠন আরএসএস এর ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ তা অত্যন্ত স্পষ্ট। এই বিল ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ভারতের জনগণের সমঅধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। এই বিলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নাম উল্লেখ করে এসব দেশ থেকে যাওয়া মুসলিম জনগোষ্ঠি ব্যতিরেকে বাকি ধর্মাবলম্বীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে, তা দীর্ঘ বছর ধরে ভারতে অবস্থান করা ভারতের বিশাল সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠিকে রাষ্ট্রহীন নাগরিকে পরিণত করবে; মুসলমান সম্প্রদায়ের জানমালকে গুরুতর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ঠেলে দেবে। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ ও সহিংসতাকেও উস্কিয়ে দেবে এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরকে নিরাপত্তাহীন করে তুলবে।
বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, এই নাগরিকত্ব বিল ভারতে বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন বিভক্তি, বিভাজন ও উগ্র সাম্প্রদায়িক বিষাক্ত রাজনীতিকে যেমন পরিপুষ্ট করবে, তেমনি ভারতের বিরাট জনগোষ্ঠির মৌলিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের রাস্তা আরো প্রশস্ত করবে। এই বিল কার্যকরি হবার পর ভারতের পৃথিবীর বৃহৎ ‘গণতান্ত্রিক দেশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করার রাজনীতিকে বিরাট তামাশায় পর্যবসিত করবে।
বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের এই নাগরিকত্ব বিল কার্যকরি হলে এর প্রতিক্রিয়ায় এই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক বিভেদ, বিভাজন, সহিংসতা ও হানাহানি বৃদ্ধি পাবার আশঙ্কা দেখা দেবে এবং এই অস্থিতিশীল অবস্থার সুযোগে এই অঞ্চলের দেশগুলোতে চরম দক্ষিণপন্থী ধর্মান্ধ ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থানের জমিনও আরো উর্বর হবে।
বিবৃতিতে তিনি ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উগ্র হিন্দুত্ববাদী অমিত শাহ এর লোকসভায় প্রদত্ত বক্তব্যের (যেখানে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন না থামার কারণেই নাগরিকত্ব সংশোধন বিল আনা হয়েছে) তীব্র নিন্দা জানান এবং বলেন, বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক এজেন্ডাকে বাস্তবায়িত করার জন্যই উদ্ভট ও হাস্যকরভাবে বাংলাদেশের উপর দোষ চাপানো হয়েছে। তিনি অমিত শাহ এর এই ধরনের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি তুলতে এবং নাগরিকত্ব বিল বাতিলের দাবি তুলতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এসব সাম্প্রদায়িক তৎপরতাকে ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে দেখে তা এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই।
বিবৃতিতে তিনি বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের শান্তিপ্রিয় জনগণকে বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক উস্কানীর ফাদে পা না দিয়ে যেকোন ধরনের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান।