রবিবার ● ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » উখিয়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি : নাগরিক সমাজ উদ্বিগ্ন
উখিয়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি : নাগরিক সমাজ উদ্বিগ্ন
উখিয়া প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের উখিয়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। রাত-দিন চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, খুন-খারাবি লেগেই আছে। ফলে সাধারণ মানুষ জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সীমান্ত উপজেলা উখিয়ার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ।
সরেজমিন ঘুরে ও প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আবুল মনসুর যোগদানের এক সপ্তাহের মাথায় একজন ইয়াবা মামলার আসামী ক্রস ফায়ারে নিহত হয়। সে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের টাইপালং গ্রামের শামশুল আলম সিকদারের ছেলে নজরুল ইসলাম সিকদার। এ ঘটনার পর ইয়াবা কারবারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও পরবর্তীতে নিষ্কিয় হয়ে যায় পুলিশ প্রশাসন। ফলে রাঘব-বোয়াল ও ইয়াবা গডফাদাররা বহাল তবিয়তে রয়েছে। অথচ সচেতন জনগণ আশা করছিল পর্যায়ক্রমে সব ইয়াবাকারবারীকে আইনের আওতায় আনা হবে। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবাকারবারীরা পুরোদমে অবৈধ মাদক ব্যবসা চালিয়ে গেলেও প্রশাসনের ধর পাকড় পরিলক্ষিত হচ্ছে না
গত ৩০ নভেম্বর রাতে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ইয়াবা কারবারী ত্রাস বেলাল বাহিনীর হাতে নির্মম ভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হয় নিরীহ টমটম চালক মাহবুল আলম। সে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের পূর্ব দরগাহ বিল গ্রামের প্রবাসী গুরা মিয়ার ছেলে। ঘটনার ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও সন্ত্রাসী কানা বেলাল ও তার সহযোগিদের পুলিশ গ্রেপ্তার করতে চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ করেন নিহতের মা বয়বৃদ্ধ রাবেয়া বেগম। গত ১৪ ডিসেম্বর উখিয়া প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে উখিয়া থানার ওসি আবুল মনসুরের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাবেয়া বেগম বলেন, আসামীরা প্রভাবশালী ও কালো টাকার মালিক হওয়ায় পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে না। আমি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এদিকে কক্সবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকান্ড একই পরিবারের ৪জন। সেই হত্যাকান্ডটি ঘটেছে উখিয়ার রতœাপালং ইউনিয়নের পূর্বরতœা গ্রামে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে প্রবাসী রোকেন বড়–য়ার বাড়িতে এই নারকীয় হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়। একই পরিবারের নারী-শিশুসহ ৪জনকে হত্যা করলেও ঘটনার এখনো কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। থানা পুলিশের ব্যর্থতার ফলে মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)-এ তদন্তাধীন রয়েছে।
অপরদিকে গত ১০ ডিসেম্বর রতœাপালং ইউনিয়নের ভালুকিয়া তুলাতলী গ্রামে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত হলেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। যদিও এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ জনতা এক ঘাতককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
এছাড়াও প্রেম ও আর্থিক লেনদেন জনিত কারণে গোয়ালিয়াপালং এলাকায় এক এনজিও কর্মীকে ছুরিকাঘাত খুন করে আলাউদ্দিন নামে এক যুবক।
উখিয়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী। তিনি বলেছেন, বাহ্যিক ভাবে ভালো দেখা গেলেও সার্বিক পরিস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে। সম্প্রতি উখিয়ায় বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটলেও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উখিয়ার শান্তিপ্রিয় মানুষের মাঝে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ প্রশাসনকে আন্তরিকতা এবং পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, উখিয়ার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। এই এলাকা রোহিঙ্গা অধ্যুষিত হওয়ায় আমরা সব সময় শংকিত থাকি। উখিয়ায় মাদকের করাল ঘ্রাসে পতিত হলেও মাদকের কোন গডফাদারকে ধরছে না পুলিশ । ধরলেও রাতের আঁধারে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, উখিয়ায় ওসি আবুল মনসুর যোগদানের পর টেকনাফের মতো মাদক কারবারীরা গ্রেপ্তার হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন তালিকাভুক্ত ইয়াবাকারবারীকে পুলিশ আটক করতে পারেনি। এছাড়া উখিয়ার পূর্বরতœা গ্রামে প্রবাসী রোকেন বড়–য়ার পরিবারের ৪জনকে হত্যা করা হলেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। সম্প্রতি পুলিশের নাকের ডগায় দরগাহ বিল গ্রামের বেলাল বাহিনীর হাতে টমটম চালক মাহবুব নিহত হওয়ার ২ সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও কোন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
সর্বোপরি উখিয়ার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য উখিয়া থানার ওসি আবুল মনসুর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি উখিয়া থানা পুলিশে রদ বদলের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিআইজ ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন উখিয়া শাখার সহ-সভাপতি গফুর মিয়া চৌধুরী বলেন, উখিয়ার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অতীতের সব রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে। খুন-খারাবি নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। উখিয়ায় একের পর এক হত্যাকান্ড সংঘটিত হলেও পুলিশ এখনো ঘাতককে গ্রেপ্তার করতে পারছে না।
উখিয়ার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির প্রসঙ্গে জানতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিহাদ আদনান তাইয়ান, উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আবুল মনসুরের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ না করায় তাঁদের বক্তব্য জানা যায়নি।