রবিবার ● ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » সমাজে চরম অবক্ষয় ঝিনাইদহে ১২ জন পরকীয়া ও যৌতুকে বলি
সমাজে চরম অবক্ষয় ঝিনাইদহে ১২ জন পরকীয়া ও যৌতুকে বলি
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: সমাজে চরম অবক্ষয় ঝিনাইদহের বিভিন্ন গ্রামে গত ১১ মাসে পরকীয়া, দাম্পত্য কলহ ও যৌতুকের বলি হয়েছেন ১২ জন নারী ও পুরুষ। বর্তমান ফেসবুক ও প্রযুক্তির কুফলে ঘরে ঘরে বিবাদ কলহ ছড়িয়ে পড়েছে। সন্তান পিতামাতার সাথে, স্ত্রী স্বামীর সাথে বিবাদে জড়িয়ে সংসারে দ্বন্দ ফ্যাসাদ সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় স্বামী ও স্ত্রীদের পরকীয়ার জেরে নিহত হওয়ার ঘটনা যৌতুক বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এদিকে পুলিশ বলছে, সমাজে চরম অবক্ষয় শুরু হয়েছে। এটা থেকে বাঁচতে হলে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ও পারিবারিক বন্ধন দৃড় করতে হবে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারী কালীগঞ্জ উপজেলার বড় ডাউটি গ্রামে শিউলী খাতুনকে তার স্বামী হত্যা করে। হত্যার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যৌতুক। ৪ ফেব্রয়ারী শৈলকুপার গাবলা গ্রামে লিপা ওরফে সাথিকে হত্যার পর লাশ কাঠাল গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। যৌতুক না দিতে পারায় স্বামী, শ্বাশুড়ি ও ননদ মিলে তাকে হত্যা করে বলে অভিযোগ ওঠে। দাম্পত্য কলহের জের ধরে ২৭ ফেব্রয়ারী কালীগঞ্জ শহরে রেবা রানীকে হত্যার পর স্বামী আত্মহত্যা করেন। ৬ মার্চ একই উপজেলার ঘিঘাটি গ্রামে যৌতুক ও দাম্পত্য কলহের কারণে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী শিউলী খাতুনকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। ১৩ মার্চ হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাদিখালী গ্রামে স্ত্রীর পরকীয়ায় বাধা দিয়ে খুন হন জয়নুদ্দীন নামে এক কৃষক। নিহতর ছোট ভাই ছহির উদ্দীনের সাথে স্ত্রী আবেদা খাতুনের দৈহিক সম্পর্ক ছিল। ১৮ জুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বানয়াবহু গ্রামে সোহেল রানা নামে এক মসজিদের ইমাম ও হাফেজকে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশের ভাষ্য জুলিয়া নামে অন্যের এক স্ত্রীর সাথে পরকীয়ার কারণে খুন হন হাফেজ সোহেল রানা। ২ আগষ্ট শৈলকুপার আলমডাঙ্গা গ্রাম থেকে তানিয়া খাতুন নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৬ আগষ্ট কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা গ্রামে আয়েশা খাতুন মিমকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে তার স্বামী এখলাস উদ্দীন হত্যা করে। প্রেম করে বিয়ে কারার কারণে মিমকে বধু হিসেবে মেনে নেয়নি এখলাসের পরিবার। বাধ্য হয়ে মিমকে হত্যা করে স্বামী। ১৮ আগষ্ট মহেশপুর উপজেলার সেজিয়া গ্রামে পারিবারিক কলহ ও নেশার টাকা না পেয়ে স্ত্রী ফিরোজাকে কুপিয়ে হত্যা করে আব্দুল কুদ্দুস। ২৮ আগষ্ট ঝিনাইদহ এলজিইডির ড্রাইভার হাসানুজ্জামান জগলু স্ত্রীর পরকীয়র জের ধরে যশোরে খুন হন। ১৬ সেপ্টম্বর মহেশপুর উপজেলার খড়েমান্দারতলা গ্রামে পুত্রবধু আখি খাতুনের পরকীয়ায় বাধা দিয়ে খুন হন আজিজ মোল্লা। ৬ নভেম্বর মহেশপুর উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামে রিতু খাতুনকে হত্যা করে স্বামী সাগর। পুলিশ জানায়, রিতু ও সাগর প্রেমের সূত্র ধরে বিয়ে করে। বিয়ের পর সাগরের পরিবার রিতু খাতুনকে মেনে নিতে পারেনি। ঘটনার দিন পদ্ম রাজপুর গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে রিতু পিতার বাড়ি ডাকাতিয়া গ্রামে আসে। ওই দিন থেকেই সে নিখোঁজ হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস জানান, এ সব খুনের ক্লু ও মোটিভ উদ্ধারসহ আসামীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। তিনি বলেন সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে সমাজে আজ এসব ঘটছে। পিতামাতার সাথে সন্তানের সুসম্পর্ক নেই। স্কুল কলেজে জীবনমুখি নৈতিক শিক্ষা নেই। শিক্ষকদের নৈনিতক অধঃপতন ঘটেছে। তারাও ছাত্রীদের ধর্ষন ও হত্যা করছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে অশ্লিল ভিডিয়ো দেখে ছেলে মেয়েরা বিপথগামী হচ্ছে। মিলু মিয়া বিশ্বাস বলেন, অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। তারা ১৮ বছরের আগেই সন্তানের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছে।