শুক্রবার ● ২০ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » গাইবান্ধায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত
গাইবান্ধায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত
গাইবান্ধা :: গাইবান্ধা জেলার সর্বত্র গত দু’দিন থেকেই হঠাৎ করেই তীব্র কুয়াশা পড়তে শুরু করে। বুধবার সারাদিন কোথাও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে গোটা গাইবান্ধা জেলা। গুগল সুত্রে জানা গেছে, তাপমাত্রা দিনের বেলাতেই ১৯ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে। সেই সাথে হিমেল হাওয়া বইতে থাকে। হঠাৎ করে শীত শুরু হওয়ায় মানুষ চরম বিপাকে পড়ে। রাতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মত ঝড়েছে কুয়াশা। হঠাৎ শুরু হওয়া এই শীতে জেলার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে আশ্রিত এবং চরাঞ্চলের মানুষ দুর্ভোগের কবলে পড়ে। শীতে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্করা এতে কষ্ট পাচ্ছে বেশি। শহরের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে এখন মানুষের উপচে পড়া ভীড়। এই সুযোগে গাউন মার্কেট ও গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ব্যবসায়িরা কাপড়ের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েছে। ফলে অর্থাভাবে দরিদ্র মানুষদের পক্ষে শীতের কাপড় সংগ্রহ করা খুব কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে। হঠাৎ করে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় লেপ তোষক বানানোরও হিড়িক পড়েছে।
ঘন কুয়াশার কারণে ব্রহ্মপুত্র-যমুনাসহ অন্য নদ-নদীতে নৌ চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। ফলে মূল ভূমির সাথে চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘন কুয়াশার কারণে অনেকে দিনের বেলায় গাড়ির হেড লাইড জ্বালিয়ে চলাচল করছে। ফলে চরাঞ্চলের মানুষরা যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম বিপাকে পড়ে। ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকায় সরিষা গাছের ফুল ঝড়ে পড়তে শুরু করেছে।
চিনিকলে অবৈধভাবে আখ মাড়াই ক্ষতিকারক হাইড্রোজ মিশিয়ে গুড় উৎপাদন
গাইবান্ধা :: গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জস্থ রংপুর চিনিকল জোনে অবৈধভাবে আখ মাড়াই করে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক হাইড্রোজ মিশিয়ে গুড় উৎপাদন করা হচ্ছে। এভাবে গুড় উৎপাদন করায় মিল কর্তৃপক্ষ যেমন আখের ঘাটতির আশংকায় যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনি ওই গুড় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক বলে জানা গেছে।
রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা গেছে, মিলজোন এলাকায় যন্ত্রচালিত মাড়াই কল দিয়ে আখ মাড়াই করে গুড় উৎপাদন নিষিদ্ধ করেছেন সরকার। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করে আসছেন নিয়মিত। কিন্তু প্রতি বছরই চিনিকলে সরবরাহের জন্য উৎপাদিত আখের একটি বড় অংশ অবৈধ পন্থায় গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষকরা আগাম বেচে দেয়। এ কারণে চিনিকলের মাধ্যমে আখ চাষের জন্য সরকারের দেয়া ঋণ যেমন শোধ হয় না, তেমনি প্রচুর জনবল খাটিয়ে, দফায়-দফায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ঋণ সহায়তা দিয়ে উৎপাদিত আখ চিনিকলে সরবরাহ না পেয়ে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয় না।
চলতি বছর আখ উৎপাদন মৌসুমে রংপুর চিনিকলের আটটি সাব-জোনের মধ্যে পাঁচটি সাব-জোনেই প্রায় অর্ধশত যন্ত্রচালিত আখমাড়াই কল চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এসব কলে প্রতিদিন প্রায় দেড়শ’ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করা হচ্ছে। গত এক মাস ধরে এভাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করা হয়েছে। চলতি বছর চিনিকল কর্তৃপক্ষের দেয়া বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরী ও সেচ বাবদ নগদ অর্থ ঋণ এবং পরামর্শ সহায়তা দিয়ে মিল জোন এলাকায় উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন আখ। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক এ আখের সবটুকুই রংপুর চিনিকলে সরবরাহের কথা থাকলেও চলতি মৌসুমে পাঁচটি সাবজোনের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ৫৮টি যন্ত্রচালিত মাড়াই কল চালু করে গুড় তৈরি করা হচ্ছে।
সম্প্রতি এসব মাড়াইকল বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগের ফলে কিছু কল বন্ধ হলেও এখনও চলছে ৪৪টি আখ মাড়াই কল। গত প্রায় একমাস ধরে নলডাঙ্গা সাব-জোনে ১২টি, পীরগঞ্জ সাব-জোনে ২০টি, গোবিন্দগঞ্জ সাব-জোনে ৫টি, সাহেবগঞ্জ সাব-জোনে ৫টি ও মোকামতলা সাব-জোনে ২টিসহ মোট ৪৪টি আখ মাড়াইকলে প্রতিদিন প্রায় একশ’ ৩২ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে গুড় উৎপাদন করা হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি মাড়াইকলে আখের রসের গুড় সাদা করার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক ‘হাইড্রোজ’।
গাইবান্ধার সিভিল সার্জন এবিএম আবু হানিফ এ বিষয়ে জানিয়েছেন, মাত্রাতিরিক্ত হাইড্রোজ মানবদেহে ক্যান্সারসহ নানা প্রকার জীবনঘাতি রোগের সৃষ্টি করতে পারে। শিশুদের জন্য এ উপাদানটি একেবারেই বিষ হিসেবে বিবেচনা করে তা পরিহার করা উচিৎ।
রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, গত এক মাসে অবৈধ পাওয়ার ক্রাশার ব্যবহার করে এ চিি এতে জাতীয় ক্ষতির পাশাপাশি মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হাইড্রোজ ব্যবহার করে তৈরি গুড় বাজারজাত করা হয়েছে। এরফলে চিনিকলে আখ না পেয়ে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়তো সম্ভব হবে না। নকলের ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত আখের একটি বড় অংশ মাড়াই করে অস্বাস্থ্যকরভাবে গুড় তৈরি করা হয়েছে।