শনিবার ● ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » মানুষ বেঁচে থাকে তাঁর কর্মের মাধ্যমে : পার্বত্য মন্ত্রী
মানুষ বেঁচে থাকে তাঁর কর্মের মাধ্যমে : পার্বত্য মন্ত্রী
রাঙামাটি :: রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালীর ঐতিহ্যবাহী পুরনো নারানগিরি রায় সাহেব বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রয়াত ভদন্ত উ-পঞঞাকাওয়ি মহাস্থবির ভান্তের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে প্রধান দায়েকের বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন দেশের সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বসবাস করবে, তাঁর সেই স্বপ্ন পূরনে তারই সুযোগ্য কন্যা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এই পার্বত্য জেলার সকল সম্প্রদায়ের মানুষের শান্তির কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শান্তি চুক্তি করেছিলেন, যার সুবাতাস এখনোও বিরাজমান। তাই সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ আজ এই প্রয়াত বৌদ্ধ ভান্তের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় একত্র হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, মানুষ পৃথিবীতে বেঁচে থাকে তার সুকর্মের মাধ্যমে, তাই ভালো কাজ মানুষকে মৃত্যুর পরও বাঁচিয়ে রাখে।
আজ শনিবার ২৮ ডিসেম্বর রাইখালীর স্বর্গীয় অংথোয়াইচিং চৌধুরী খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত রায় সাহেব বৌদ্ধ বিহারের দায়ক দায়িকাদের আয়োজনে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নারানগিরি বড়পাড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত নাগাওয়াসা মহান্তবির। এসময় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ি বৌদ্ধ বিহারের বিহারধ্যক্ষ ভদন্ত আসবা মহাস্থবির।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাঙ্গালহালিয়া ডাকবাংলা পাড়া বৌদ্ধ বিহারের বিহারধ্যক্ষ ভদন্ত ঞানাওয়াইসা মহান্তবির, চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারের বিহারধ্যক্ষ ভদন্ত পামোক্ষা মহাস্থবির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক জিনবোধী ভিক্ষু।
এছাড়া অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে বিশেষ দায়ক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য চিংকিউ রোয়াজা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইপ্রু চৌধুরী, পরিষদ সদস্য প্রকৌশলী থোয়াইচিং মং মারমা, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মফিজুল হক, রাজস্থলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উবাচ মারমা, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল, চন্দ্রঘোনা থানার ওসি আশরাফ উদ্দিন, ৩২১ নং রাইখালী মৌজার হেডম্যান উচিংথোয়াই চৌধুরী বাবলু।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের আহবায়ক থোয়াইসাপ্রু চৌধুরী রুবেল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হরিনছড়া ভাইজ্যাতলী মৌজার হেডম্যান থোয়াই অং মারমা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ দায়ক হিসেবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, সকল ধর্মেই শান্তির কথা লেখা রয়েছে। কোন ধর্মে লেখা নেই হিংসা, লোভ বা মানুষের ক্ষতি করা। তাই সমাজের প্রতিটি মানুষের কল্যাণে এই ভিক্ষুটি যেসকল শান্তির বানীগুলো আমাদের দিয়ে গেছেন সেগুলো মনে ধারন ও লালন করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে যতটুকু সময় পর্যন্ত বাঁচবো মানব সেবা ও রাষ্টের জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে।
এদিকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষ্যে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) হতে শুরু হয়েছে রাইখালী স্বর্গীয় অংথোয়াইচিং চৌধুরী খেলার মাঠে ২দিনব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় অন্ষ্ঠুানসুচী। জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন এর মাধ্যমে কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়। এর পর শোভাযাত্রা সহকারে শবদেহ আলং চাইংক্যই এ স্থানান্তর করা হয়, এছাড়া মারমা সম্প্রদায়ের সইং নৃত্য এবং ধর্মীয় নাটক পরিবেশিত হয়। উল্ল্যেখ যে, প্রয়াত ভদন্ত উ পঞ্ঞাকাওয়ি ৮৮ বছর বয়সে ৬৮ টি বর্ষা বাস করেন, তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একজন পূজনীয় ভান্তে হিসাবে সু পরিচিত ছিলো।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম এবং দেশের অন্যান্য জায়গা হতে বিভিন্ন বিহারে পুজনীয় ভিক্ষু সংঘ এবং হাজার হাজার দায়ক দায়িকা উপস্হিত ছিলেন। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ক্রীয়া উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান স্থলের আশেপাশে মেলা বসে।
পরে আতশবাজি ও ফানুস উড়ানোর মাধ্যমে ২দিনব্যাপী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।