সোমবার ● ২৫ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরে বয়লার বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬
গাজীপুরে বয়লার বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: গাজীপুরের পূবাইল কলেজ গেইটএলাকায় স্মার্ট মেটাল অ্যান্ড কেমিক্যাল লিমিটেড নামের টায়ার থেকে তেল তৈরি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে৷ তার নাম আবদুল কাদের (৬০)৷
২৪ জানুয়ারি রবিবার সকাল ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান৷
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিত্সক পার্থ শংকর পাল জানান, আবদুল কাদেরের শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল৷ তিনি রবিবার সকালে ৬টার দিকে মারা যান৷
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোজাম্মেল হোসেন দগ্ধ আবদুল কাদেরের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন৷
এ নিয়ে ওই কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ছয়জনে৷
কারখানার বয়লার বিস্ফোরণে নিহতরা হলেন- খুলনার দাকোপ উপজেলার নলিয়ান গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে শফিকুল ইসলাম (২১), মাদারীপুর সদরের খামারবাড়ি এলাকার সোবহান তালুকদারের ছেলে আলহাজ (২৩), স্থানীয় বারইবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সিদ্দিকা জেবুন্নেসা (৩০), তিনি নেত্রকোনার মদন উপজেলার চানগাঁও গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী; কারখানার নিরাপত্তাকর্মী স্থানীয় বসুগাঁও এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে সেলিম মোল্লা (৪৫), মাদারীপুরের ডাসার থানার ভাগুরিয়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে কাওসার বিশ্বাস (৩৪) এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রবিবার সকালে মারা যান কারখানার সুপারভাইজার আবদুল কাদের (৫৫)৷
২৩ জানুয়ারি শনিবার বিকেলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পূবাইল কলেজ গেইট এলাকায় স্মার্ট মেটাল অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ ঘটে৷ বিস্ফোরণে টিনশেডের ওই কারখানার চালাসহ ধসে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়৷ এ সময় কারখানার পার্শববর্তী জয়দেবপুর-পূবাইল সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় অটোরিকশাযাত্রী স্কুলশিক্ষিকাসহ ৫ জন অগি্নদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান৷ অগি্নদগ্ধ হন আরো তিনজন৷ টঙ্গী ও জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় দেড় ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে৷ আগুনে ওই কারখানার একটি লরি, তেলের ড্রাম ও সমস্ত মেশিনপত্র পুড়ে গেছে৷
রবিবার সকালেও কারখানার ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে৷ দমকল কর্মীরা ড্যাম্পিংয়ের কাজ করছিলেন৷ বেলা ১১টার দিকে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷ লাশ দাফনে সহযোগীতার জন্য জেলা প্রশাসন ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
এর আগে ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত তিন সদস্যের কমিটির প্রধান গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলামের নেতৃত্বে কমিটির সদস্য গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান লিটন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান এবং তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন৷ এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুর জেলার উপপরিচালক সোনিয়া সুলতানা উপস্থিত ছিলেন৷
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলাম জানান, কারখানাটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চলছিল৷ অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল কারখানা৷
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সোনিয়া সুলতানা জানান, ইতিপূর্বেও এ কারখানাটিকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর৷ পরে তাদের কারখানাটি চালানোর জন্য আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু শর্ত পূরণ করতে বলা হয়৷ গত ১৯ জানুয়ারি কারখানা পরিদর্শন করতে এসে দেখা গেছে ওই সব শর্ত পূরণ হয়নি৷ পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় শনিবার বিকেলে বয়লার বিস্ফোরণ ঘটে৷
অন্যদিকে, ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস আরো একটি তদন্ত কমিটি করেছে৷ গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, শনিবার রাতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জেলা সহকারী পরিচালক মো. মাসুদ আকন্দকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷
এদিকে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন পূবাইল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক ফায়জুর রহমান৷ পূরাতন টায়ার সংগ্রহ করে ওই কারখানায় উচ্চ মাত্রার তাপে গলিয়ে তৈল উত্পাদন করা হত বলেও জানান তিনি৷ অগি্নকাণ্ডে এতগুলো প্রাণহানির কারণে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷
শনিবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘অগি্নকাণ্ডের ঘটনায় দায়িদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ আর নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেন শ্রম সচিব মিকাইল সিফাত৷
এসময় উপস্থিত ছিলেন শিল্প পুলিশের ডিআইজি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহমুদ হাসানসহ পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা৷
২৩ জানুয়ারি শনিবার বিকেল ৪টার দিকে টায়ার কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করার সময় হঠাত্ করেই বয়লারের বিস্ফোরণ ঘটে৷ এতে আগুন ধরে যায় কারাখানাটিতে৷ এতে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মহিলাসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়৷ আহত ও দগ্ধ হয় আরো অন্তত ১০ জন৷ এছাড়া ঘটনার সময় কারাখানার শ্রমিক কর্মকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি করেন৷ এতেও আহত হন অনেকেই৷ স্থানীয়রা এসে হতাহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করান৷ সন্ধ্যা ৬টার দিকে কারাখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে৷