শুক্রবার ● ৩ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » গঙ্গা পদ্মা নাট্যোৎসবে প্রশংসিত গোলাপজান
গঙ্গা পদ্মা নাট্যোৎসবে প্রশংসিত গোলাপজান
বিনোদন প্রতিনিধি :: আদি ঢাকার জীবন-জীবিকার দৃশ্যকাব্য ‘গোলাপজান’ এবার ঝড় তুলেছে ভারতের আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে। থিয়েটার আর্ট ইউনিট প্রযোজিত ঢাকার মঞ্চের আলোচিত এ নাটকটি প্রদর্শিত হয়েছে গঙ্গা পদ্মা নাট্যোৎসবে।
এ নাটকে পুরনো ঢাকার লড়াকু এক নারী গোলাপজান পরম মমতার সঙ্গে বর্ণনা করেছেন তার শৈশব-কৈশোর, যৌবন থেকে পৌঢ়ত্বে পৌঁছার গল্পগাঁথা । আবু তাহেরের মূল গল্প অবলম্বনে প্রযোজনাটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রয়াত নাট্যজন এস এম সোলায়মান।‘গোলাপজান’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকেয়া রফিক বেবী।
দুই বাংলার মিলনমেলায় মধ্যমগ্রাম ভারতের নজরুল শতবার্ষিকী সদন পৌরসভা মিলনায়তনে চলছে গঙ্গা-পদ্মা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে মঞ্চস্থ হয়েছে নাটকের প্রদর্শনী। বিশ শতকের মধ্যভাগে ঢাকার শ্রমজীবি এক নারী গোলাপজানের ধনবাদী সমাজ ব্যবস্থা বিকাশের ধারায় ক্রমাগত সংগ্রামী হয়ে ওঠার গল্প ছুঁয়ে গেছে দর্শকদের প্রাণ।কানায় কানায় পূর্ণ মিলনায়তনে দর্শকদের অভূতপূর্ব অভিনন্দন বার্তায় স্নাত হয়েছে থিয়েটার আর্ট।
নাটকের গল্পে দেখা যায়, তিরিশের দশকে ঢাকা শহরের এক অতি দরিদ্র পরিবারে গোলাপজানের জন্ম। তার শৈশব-কৈশোর স্মৃতি মধুরতায় ভরপুর। মক্তবে পড়াশোনার সময় প্রায় শৈশবেই তার বিয়ে হয় এক ঘোড়ার গাড়ির কোচোয়ানের সঙ্গে। গাড়ি টানা ঘোড়াটির নাম লাল্লু, যে কিনা গোলাপজানের কাছে সন্তানের মতো প্রিয়। লাল্লুর সঙ্গে নাম মিলিয়ে গোলাপজান তার একমাত্র সন্তানের নাম রাখে সাল্লু। যার পুরো নাম সালাউদ্দিন। লাল্লু, সাল্লু, কোচোয়ান স্বামীকে নিয়েই গোলাপজানের এক জীবন।
একদিন কিশোর সাল্লু তৎকালীন ঢাকার অতি জনপ্রিয় ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা ‘সাকরাইন’-এ অংশ নিতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হয়। আহত ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিক্রি করে দিতে হয় লাল্লুকে—জকি এরফানের কাছে। সন্তানসম লাল্লুকে বিক্রির কষ্ট সইতে না সইতেই মারা যায় সাল্লু। এ অবস্থায় প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়ে গোলাপজান। ইতিমধ্যেই ঢাকার সমাজচিত্র বদলাতে শুরু করেছে। বিশ শতকের মধ্যভাগে বিশ্বব্যাপী নতুন প্রযুক্তি বিকাশের দোলা এসে লাগে ঢাকা শহরেও। ঘোড়ার গাড়ির বদলে ঢাকায় শুরু হয় রিকশার প্রচলন। গোলাপজানের স্বামী কোচোয়ান থেকে হয়ে যায় রিকশাচালক। কিন্তু একদিন সে মোটরগাড়ির ধাক্কায় হারিয়ে ফেলে একটি পা। স্বামীর পঙ্গুতে অসহায় পরিবারটির বোঝা নেমে আসে গোলাপজানের ওপর।
শুরু হয় গোলাপজানের আরেক জীবন। রাষ্ট্র এবং সমাজের কাছে পরিত্যক্ত গোলাপজান হয়ে ওঠে জীবনসংগ্রামের প্রতীক। নেমে আসে রাস্তায় ‘ঘুগনি’ বিক্রির পেশায়। সমাজের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে গোলাপজান শামিল হয় সর্বহারা শ্রেণির শ্রমজীবীদের সংগ্রামের কাতারে।
এ সময় সমাজের প্রযুক্তি বিকাশ হতে থাকে দ্রুত। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত বদল হতে থাকে গোলাপজানের পেশাও। গভীর বিস্ময়ে গোলাপজান লক্ষ করে দ্রুত থেকে দ্রুততার সঙ্গে বদলে যাচ্ছে ঢাকা শহরের সমাজ ও সামাজিক ব্যবস্থা। আর ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক মূল্যবোধ। নব্য ধনপতিদের দৌরাত্ম্যে তিন পুরুষের অতি আপন ঢাকা শহর গোলাপজানের কাছে ক্রমাগত অচেনা হতে থাকে।
তার পেশা থেকে শুরু করে আপন জীবন পর্যন্ত বাঁধা পড়ে যায় সমাজপতিদের হাতে। নিজের চোখের সামনে তথাকথিত সামাজিক উন্নয়নের জাঁতাকলে মানবিক মূল্যবোধের পিষ্টতা দেখে হতাশ হয়ে পড়ে গোলাপজান।
ঢাকার থিয়েটার আর্টের ‘গোলাপজান’ ছাড়াও গঙ্গা-পদ্মা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব এ ছাড়া মঞ্চস্থ হয়েছে ক্যালকাটা পাপেট থিয়েটারের নাটক ‘আলাদীন’, পূর্বরঙ্গের ‘পাঁচ অধ্যায়’, ভূমিসূতের ‘চর্যাপদের কবি’, সায়কের ‘ভালো লোক’, চাকদার ‘ভানু সুন্দরীর পালা’, নাট্যজনের ‘বিল্বমঙ্গল কাব্য’, নটধার ‘মহাভারত-২’, রঙ্গলোকের ‘লম্বকর্ণ পালা’, ক্যালকাটা কায়ার ‘আলিবাবা’ এবং নয়ে নাটুয়ার ‘মাটির গাড়ি মৃচ্ছকটিক’।