শনিবার ● ১১ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » পার্বত্যঞ্চলে থামছেনা চাঁদাবাজি : প্রশাসনিক নজরদারি বৃদ্ধির দাবি ব্যবসায়ীদের
পার্বত্যঞ্চলে থামছেনা চাঁদাবাজি : প্রশাসনিক নজরদারি বৃদ্ধির দাবি ব্যবসায়ীদের
স্টাফ রিপোর্টার :: পার্বত্যঞ্চলে কোনভাবে থামানো যাচ্ছেনা চাঁদাবাজি। তা রাঘব বোয়াল হোক বা চুনোপুটি। ১৯৯৭ সালের চুক্তি পরবর্তী প্রায় ২ যুগ পার্বত্যঞ্চল যেন চাঁদাবাজদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন চাঁদাবাজ সংস্কৃতি চলতে থাকায় এ এলাকার সাধারন মানুষের কাছে চাঁদা দেওয়া স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সারা দেশের নানা অনিয়মের ধাক্কা সামাল দিতে সরকার শুদ্ধি অভিযানের পাশাপাশি পার্বত্যঞ্চলের চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নেয় স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারনে বড়বড় রাঘব বোয়ালদের দৌঢ়াত্ম শহর এলাকায় একটু প্রশমিত হলেও চুনোপুটিরা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে চাঁদাবাজি।
স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি নির্ধারকরা পর্যন্ত কঠোর অবস্থানে থাকা সত্বেও রাঙামাটিতে প্রশাসনের নাগের ডগায় চলছে চাঁদাবাজি। ঠিকাদার থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বাদ পড়ছেনা। কেউই রেহাই পাচ্ছেনা চাঁদাবাজদের হাত থেকে। এমন চিত্র দেখা গেছে রাঙামাটি শহরে। রাঙামাটি জেলা শহরে ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স-ডিজিএফআই, ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স-এনএসআই, আর্মি সিকিউরিটি ফোর্স-এসইউ, ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ফোর্স- এফআইইউ, পুলিশের জেলা বিশেষ শাখা-ডিএসবি ও স্থানীয় পুলিশ ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকল আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় নজরদারি থাকা সত্বেও রাঙামাটি শহরের বাজারের দিনগুলিতে কোননা কোন ক্লাবের নাম দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব ধরনের ভোগ্য পণ্যের শাক বিক্রেতাও বাদ যাচ্ছেনা। শহর এলাকায় যদি এমন অবস্থা হয় দীর্ঘদিন বঞ্চিত শোষিত গ্রাম এলাকার সাধারন মানুষ যারা কৃষিপণ্য ফলিয়ে জীবন যাপন করেন যারা একটি মুরগী বা এক কাঁদি কলা বিক্রি করতেও চাঁদা দেয় তাদের অবস্থা কি হচ্ছে! তাদের কি অবস্থা কিঞ্চিৎ হলেও অনুমান করা যায়। কারণ ঐসব সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এলাকা গুলিতে প্রশাসনের নজরদারি নেই বললে চলে। এলাকার উন্নয়নমুলক কাজ হোক আর ক্ষুদ্র ব্যবসা হোক সব করতে হয় চাঁদার বিনিময়ে।
গত ৮ জানুয়ারী বুধবার শহরের কল্যাণপুর বাজার ও বনরুপা বাজারে অনুসন্ধানে দেখা যায় আলাদা আলাদা ক্লাবের নাম দিয়ে এসব ভ্রাম্যমান কাঁচাবাজার বিক্রেতাদের কাছ থেকে ক্লাবের নাম দিয়ে বিনা রশিদে প্রকাশ্যে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। অথচ এসব চাঁদাবাজরা আদৌ কোন ক্লাবের সদস্য কিনা তাতেও সন্দেহ রয়েছে।
এবিষয়ে কয়েকজন সবজিপণ্য বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত চাঁদা দিয়ে মালামাল ইত্যাদি বিক্রি করছি এটা নতুন কিছু নয়, আমাদের পণ্য বিক্রি প্রয়োজন আছে প্রতিবাদ করে নিজেদের রুটিরুজি বন্ধ করতে চাইনা।
শহরের স্থানীয় জনৈক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আপনি কি করতে চান? চাকরি করবেন তো চাঁদা দিবেন, ব্যবসা করবেন তো চাঁদা দিবেন, ঘরে বসে থাকতে চান তাও চাঁদা দিবেন কারণ বিভিন্ন দিবস কেন্দ্রিক নানা ক্লাব বা রাজনৈতিক সংগঠন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কথা বলে চাঁদাবাজরা ঘরে-ঘরে গিয়েও চাঁদা তুলে।
প্রশাসনের নাকের ডগায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে এমন চাঁদাজির দৃশ্য বলে দেয় তারা কারা কারো না কারো টিকেট পেয়ে এমন সাহস পেয়েছে।
এবিষয়ে রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, বাজারের দিন চাঁদাবাজি হয় আমি জানতাম না, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বাজারসহ সব এলাকায় আমাদের নজরদারি আরো বৃদ্ধি করা হবে। চাঁদাবাজ যেই হোক আমাদের নজরে আসলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পার্বত্যঞ্চলে চাঁদাবাজি শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনতে জেলা উপজেলা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রশাসনের সক্রিয় নজরদারিসহ সাধারন মানুষদের চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ।