রবিবার ● ১২ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » নওগাঁ » আত্রাইয়ে বেপরোয়া ট্রাক্টর চলাচলে দুর্ভোগে জনজীবন
আত্রাইয়ে বেপরোয়া ট্রাক্টর চলাচলে দুর্ভোগে জনজীবন
আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: নওগাঁর আত্রাইয়ে রুট পারমিট না থাকলেও প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে অনুমোদনহীন শত শত ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে অতিষ্ঠ জনসাধারণ। বিশাল চাকার ট্রাক্টরগুলো নিয়ম বহির্ভূত চলাচলের কারণে যে কোনো সময় কেড়ে নিতে পারে জীবন্ত প্রাণ। এ পর্যন্ত ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে অনেক স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী। এসব ট্রাক্টরের বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে অকালে ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। কাউকে আবার সারা জীবনের মত বরণ করতে হচ্ছে পঙ্গুত্ব।
অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া গতির ট্রক্টর প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত অবাধে বিচরণ করছে। কিন্তু চোখের সামনে অবৈধ এই যানের অবাধ চলাচল দেখেও অদৃশ্য কারণে কার্যকর তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। ফলে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উপজেলা সদর ও গ্রামীণ সড়কগুলোতে ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে আতংকে রয়েছে পথচারীসহ স্থানীয় বাসীন্দারা। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীণ সড়কগুলো ক্ষত বিক্ষত হয়ে খানা-খন্দে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সর্বত্র পরিবেশ দূষণ ঘটছে, রাস্তার পাশের বাড়ী ঘর ধুলোয় ধুসর ব্যহত হচ্ছে জীবন যাত্রা।
আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে বছর জুড়েই মাটি বহন করে বাঁধের সর্বনাশ করছে একশ্রেণীর ইটভাটা মালিক। বাঁধের আশপাশের বাসিন্দাদের অনেকটাই জিম্মি করে বালু ব্যবসায়ী ও ইট ভাটা মালিকরা অবাধে বহনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এমনি অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসীন্দারা।
এদিকে অনভিজ্ঞ চালক লক্কড় ঝক্কড় যান দিয়ে বালু ও মাটি বহন করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ধুলাবালির কারণে সড়কে হেঁটে চলাচলকারী জনসাধারণ এবং স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ নানা প্রকার সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ এ যানবাহন চলাচলে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো এসব চলাচল করতে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, কৃষি জমি চাষাবাদে গরুর লাঙ্গলের বিকল্প হিসেবেন প্রায় তিন দশক পূর্বে সারা দেশের ন্যায় আত্রাইয়েও আবির্ভাব ঘটে ট্রাক্টর নামক যান্ত্রিক লাঙ্গলের। কিন্তু সে কৃষি ট্রাক্টর মাঠের জমিতে খুব একটা বেশিদিন টিকেনি। আবাদি জমি ছেড়ে স্থান করে নিয়েছে উপজেলা সদরসহ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও বাজার কেন্দ্রিক সড়কগুলোতে। চাষাবাদের জন্য আমদানিকৃত ট্রাক্টরগুলো পরিবহণে রূপান্তরের পর থেকেই গ্রামীণ জনপদে সর্বনাশ ঘটাতে শুরু করে। যদিও তা মাত্রায় ছিল সহনশীল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে চাহিদা মেটাতে ট্রাকের চেয়ে ট্রাক্টরের ভাড়া তুলনামূলক কম হওয়ায় তার সংখ্যাটা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিক তখনি তা জনসাধারণের কাছে এক অজানা ভয়ে রূপান্তর হয়।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমান ইট ভাটাগুলো পুরোদমে উৎপাদনে আসার ফলে ট্রাক্টরগুলোর চাহিদা বছরের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন অত্যাধিক। আর সে সুযোগেই তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এখানকার প্রায় সমস্ত সড়কগুলোতে। চলাচলকারী মালবোঝাই ট্রক্টরের লাইসেন্স নেই। কোন কোন ট্রাক্টর ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মালামাল বোঝায় করে বেপরোয়া চলাচল করছে। চালকের নেই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং কিছু চালকের বয়সও খুব কম।
পথচারী খালেক, ওয়াজেদ আলী ও আজাদ সরদার জানায়, অদক্ষ চালক ও বৈধ কোনো কাগজপত্র ছাড়াই ট্রাক্টরগুলো সড়কে চলাচলের ফলে প্রায়ই নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। বেপরোয়া গতির এসব ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে বিগত কয়েক বছরে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
তারা আরো জানান, ট্রাক্টর চলাচলে সৃষ্ট ধুলাবলির কারণে চরম অসুবিধায় চলা ফেরা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে খোলা অবস্থায় বালু বহনের ফলে চোখ নষ্টের ভয় থেকেই যাচ্ছে বলেও জানান তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছানাউল ইসলাম জানান, অবৈধ্য যানবাহনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত এ যানবাহনটির বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারের আত্রাই থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোসলেম উদ্দিন জানান, অতি শীগ্রই অবৈধ ভাবে চলাচলকারী ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হবে।