মঙ্গলবার ● ২১ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধ ধর্মের অতীত ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধ ধর্মের অতীত ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
আনন্দ মোহন চাকমা :: ঐতিহাসিক পর্যালোচনায় আমরা দেখতে পাই চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠীর বসতী গড়ে উঠার পর হতে অত্রাঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব অম্লান ছিল। অবশ্য এর মাঝে চাকমা সম্প্রদায়ের প্রাচীন বৌদ্ধ ধর্মগুরু রাউলীদের তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব যেমনি অস্বীকার যো নেই; ঠিক তেমনি চাকমারা যে বংশানুক্রমিক বৌদ্ধ মতবাদী ছিলেন তা’ অস্বীকার করার কোন যো নেই। এ প্রকৃত সাক্ষ্য বিভিন্ন লেখক, চাকমা জাতির ঐতিহাসিক ব্যক্তিবর্গ ব্যাতিরে স্বয়ং মাধ্যমিক পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক প্রনয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ-ঢাকা কর্তৃক প্রণীত নবম-দশম শ্রেণীতে “বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা” -নামক যে বইটি পড়ানো হয় তা’ তে পঞ্চদশ অধ্যায়ে বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে “প্রাগ আধুনিক ও আধুনিক যুগ” নামে দুটি অধ্যায়ে মূলত এদেশের চাকমা সম্প্রদায়ের বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারকেই উজ্জ্বভাবে তুলে ধরা হয়েছে। উক্ত বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা বইটি ১৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে “অষ্টাদশ শতাব্দীতে আরাকান বৌদ্ধরা চট্টগ্রাম শাসন করত। এ সময় চাকমা রাজ শেরমুস্ত খাঁন ছিলেন চট্টগ্রামের শাসক। তিনি আরাকান রাজা অধীনস্ত রাজা ছিলেন।” পরবর্তী অংশে আরো উল্লেখ আরো আছে-“শেরমুস্ত খাঁন ১৭৩৭ সাল থেকে ১৭৫৮ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। ১৭৫৭ সালে ইংরেজরা পলাশীতে সিরাজ উদ্দোলা-কে পরাজিত করে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভ করে। ১৭৮৭ সাল পর্যন্ত চাকমা রাজার সঙ্গে ইংরেজদের যুদ্ধ চলে। তখন চাকমা রাজ্যের সীমা ছিল উত্তরে লুসাই পাহাড়, দক্ষিণে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড, পূর্বে শঙ্খ নদী ও পশ্চিমে ফেনী নদী। এ সময় চট্টগ্রামে চাকমা, চাক, খিয়াং তঞ্চাঙ্গা ও বড়ুয়া বৌদ্ধরা বাস করত। তার সবাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী্। এছাড়া হিন্দু, মুসলমান এবং খ্রিস্টানরাও চট্টগ্রামে বাস করত। তখন চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল।” – এমনিভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বা্ঞ্চলে বৃহত্তর এলাকা জুড়ে বৌদ্ধদের স্বাধীন পদচারনা থাকলেও অত্রাঞ্চলে রাজনৈতিক উত্থান পতনের কারনে বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রভাবে ক্ষণে উজ্জ্বল আবার ক্ষণে ক্ষীন-দীন শিখায় পরিণত হতে বাধ্য হয়েছে। প্রসঙ্গত কারনে উক্ত বই এর ১৩৫ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃতি পুনঃরুল্লেখ করছি; এখানে উদ্ধৃত আছে-“ চট্টগ্রামে চাকমা রাজ্যের রাজধানী প্রথমে সাতকানিয়া বা রামুর কাছাকাছি কোথাও ছিল। সাতকানিয়া শব্দ এসেছে সাককন্যা বা চাকমা রাজকন্যা শব্দ থেকে। রামু থানাতে এখনো চাকমাকুল নামে একটি স্থান আছে। বোয়ালখালী থানার শকপুরা গ্রাম চাকমাপুর নাম থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়।” এ বই সমগ্র ভারতবর্ষে বৌদ্ধ ধর্মের চরম দুর্দিনের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে একই পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে “১৭৮৫ সালে চাকমা রাজ্যের রাজধানী রাঙ্গুনীয়া থানায় রাজানগর গ্রামে স্থাপিত হয়। ১৮৬৯ সালে রাজানগর থেকে চলে আসে-অষ্টাদশ শতাব্দীতে বৌদ্ধ ধর্মে তন্ত্র মন্ত্রের প্রভাব ছিল। মহাযান পন্থায় প্রভাবে সমগ্র উত্তর ভারতে তখন এই তন্ত্র মন্ত্রের আওতায় পড়ে। … চট্টগ্রামে বৌদ্ধদের মধ্যেও তখন এই প্রভাব পড়ে। এই দিকে চাকমারাও রাজ্য হারিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় নিয়েছে।”
যেহেতু ঐ প্রবন্ধের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মের অতীত ও বর্তমান প্রেক্ষাপট, সেহেতু ঐ প্রেক্ষাপটে আমার মনগড়া বক্তব্য না লিখে ঐতিহাসিক গতভাবে তথা স্বদেশের সরকার কর্তৃক স্বীকৃত বইয়ের উদ্ধৃতি আলোচ্য প্রবন্ধে সংযোজিত করার প্রয়াস নিয়ছি। প্রবন্ধের প্রাসঙ্গিক স্বার্থে এখানেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রকাশিত বইয়ের পুনঃরুল্লেখ করছি, এ বইয়ে ১৩৬ পৃষ্ঠায় আরও উল্লেখ আছে “ ১৮০০ সালে চাকমা রাজা জানবক্স খাঁনের মৃত্যু হয়। তিনি সারাজীবন-ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কাটান। তাঁর সহচর ছিলেন রনখাঁন। ১৭৮৭ সালে তিনি ইংরেজদের কর প্রদান করে বশ্যতা স্বীকার করেন। জান বক্স খাঁনের মৃত্যুর পর ধরম বক্স খাঁন রাজা হন। তাঁর মৃত্যুর পর রাণী কালেন্দী রাজত্ব শুরা করেন।” এই চাকম রাণী একদিকে যেমন প্রজাদের উন্নতির জন্য কাজ করেছেন; অপরদিকে তন্ত্র মন্ত্র যান বৌদ্ধ ধর্মকে মূলধারায় ফিরে আনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্ঠা করে গেছেন। এতদসঙ্গে উক্ত বইয়ে আরো উল্লেখ আছে; “ ১৮৫৬ সালে বার্মার (মায়ানমার) প্রসিদ্ধ ভিক্ষু সংঘরাজ সারমেধ চট্টগ্রাম আসেন।… রাণী কালেন্দী সংঘরাজকে রাজানগর রাজবাড়ীতে নিমন্ত্রণ করে আনেন। রাজ পরিবারেও তখন কুসংস্কারের প্রভাব পড়েছিল। সংঘরাজের কাছে রাণী নতুন করে থেরবাদ বৌদ্ধ ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করেন। চাকমাদের জীবনেও তার গভীন প্রভাব পড়ে”।
“কথায় বলে নানা মুনির নানা মত”। বিধায় এত কিছুর পরেও অত্র এলা্কায় তন্ত্রযানী বৌদ্ধ মতবাদ দুর হয়নি। বরং ১৮৬৪ সালে সংঘরাজ সারমেধ এক দল বৌদ্ধ ভিক্ষু নিয়ে চট্টগ্রামের আসার অব্যাবহিত পরেই চট্টগ্রামের ভিক্ষুসংঘ সংঘরাজ নিকায় এবং মহাস্থবির নিকায় নামে দু’মতবাদে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তবে গৃহী সমাজে সামাজিক আচার-আচরণে ইহার কোন প্রভাব পড়েনি। বরং গৃহীরা দু’মতবাদের ভিক্ষু সংঘকে সমানভাবে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন সহকারে যথাবিহিত কার্য্যাদি করে গেছেন।বৌদ্ধ ধর্মের অত্রাঞ্চলের প্রাক আধুনিক ইতিহাস উদ্ধৃতির সহযোগীতায় অত্রাংশে তুলে ধরার পরে পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধ ধর্মের বর্তমান প্রেক্ষিতে নিম্নে সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্ঠা করছিঃ-
পার্বত্য এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মের বর্তমান প্রেক্ষিতে বিশেষ করে মিগিনি চাগালার বৌদ্ধ ধর্মের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করতে গিয়ে এলাকায় বর্তমানে যারা প্রবীণ ব্যক্তিত্ব আছেন অন্ততঃ তাঁরা সবাই অবগত আছেন যে, ঊনবিংশ শতাব্দীর ষাট দশকের আগে সমগ্র মিগিনি চাগালার হাতেগোনা দু’তিনটি বৌদ্ধ বিহার ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তৎমধ্যে বোয়ালখালী দশবল বৌদ্ধ বিহারটি ছিল সবার কেন্দ্রবিন্দু। ষাট দশকের পরবর্তী সময়ে একদিকে কাপ্তায় বাধের কবলে পড়ে পার্বত্য এলাকার লোকজন বাস্তুহারা হয়ে দিক বিদিক হারিয়ে হাহাকার করতে থাকে; অপরদিকে সুষ্ট পুনর্বাসনের অভাবে দরিদ্র পার্বত্য জনগোষ্ঠি দরিদ্র সীমার নিচে গিয়ে বিপদ হতে পরিত্রাণের জন্য নানা তন্ত্র মন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকে। মহান কঠিন চীবর দান, সংঘদান ইত্যাদি ছিল অত্রাঞ্চলে জন্য অতল গভীরে নিমজ্জিত। ঠিক এমনি সময়ে রাঙ্গামাটি রাজ বিহারে সুযোগ্য অধ্যক্ষ তথা রাজগুরু শ্রদ্ধেয় অগ্রবংশ ভান্তের ঐকান্তিক পরিশ্রম ও সাধনায় তথা বোয়ালখালী দশবল বৌদ্ধ রাজ বিহারের সুযোগ্য অধ্যক্ষ শ্রদ্ধেয় জ্ঞানশ্রী ভান্তের সর্বময় প্রচেষ্ঠায় অত্র এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারতা লাভ করে। উনাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে অত্র এলাকার বৌদ্ধদের মধ্য হতে ভিক্ষু শ্রমনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত শেষ হওয়ার পর পরেই উনারা পায়ে হেটে দিবসের ক্রমানুসারে সমগ্র এলকায় একটার পর আরেকটা মহান কঠিন চীবর দানে উপস্থিত থেকে তথাগত বুদ্ধের অমৃতময় বাণী প্রচার করেছিলেন। এতদসঙ্গে বিশ্বের অপরা-পর বৌদ্ধদের কাছে পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধদের পরিচিতি ও সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে শ্রদ্ধেয় শ্রীমৎ অগ্রবংশ ভান্তে বা রাজগুরু ভান্তের উদ্যোগে ও তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় পার্বত্য বৌদ্ধ সমিটি, পার্বত্য ভিক্ষু সমিটি বা পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ। এতদসঙ্গে উনারা উপলদ্ধি করেছিলেন যে, শুধুমাত্র ধর্মীয় আচ্ছাদন দিয়ে সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। যেহেতু কর্মবাদী বৌদ্ধধর্মে মানবের মঙ্গলের জন্য বহুশাস্ত্র ও শিল্পে সুশিক্ষিত হওয়াকে তথাগত কর্তৃক উত্তম মঙ্গল হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে’ সেহেতু উনারা ধর্মীয় শিক্ষায় পাশাপাশি সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্যে সমাজকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার কাজেও আত্মনিয়োগ করেছিলেন; গড়ে তুলেছিলেন বিদ্যালয় এবং অনাথ শিশুদের জন্য অনাথালয়। সৎ কারণে উনাদের শিষ্যমন্ডলীর মধ্যে বেশ কয়েকজন বর্তমানে দেশে বিদেশে একদিকে ধর্মীয় প্রচারণা অপরদিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তথ্য প্রযুক্তির আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার কাজে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, উনাদের শিষ্যমন্ডলীর মধ্যে সাধক প্রবর শ্রদ্ধেয় বনভান্তেও বাদ যাওয়ার কথা নয়। কারণ উনান শ্রমণ্য জীবন থেকে ভিক্ষু জীবনের উপসম্পদাকালে শ্রদ্ধেয় রাজগুরু অগ্রবংশ ভান্তে এবং শ্রদ্ধেয় জ্ঞানশ্রী ভান্তে ঘ্যাংগুরু হিসেবে ঘ্যাং বা সীমাঘরে উপস্থিত থেকে উপসম্পদা প্রদান করেছিলেন। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে পার্বত্য এলাকায় আজ পার্বত্য সংঘ ও বন সংঘ নামে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে অনেকটা সাংঘর্ষিক অবস্থায় বৌদ্ধ ধর্মের চর্চা অব্যাহত রয়েছে। অপ্রিয় সত্য হলেও সুধীজন অবশ্য স্বীকার করতে বাধ্য হবেন ভূতপূর্ব বিরাজিত পার্বত্য পরিস্থিতিতে তৎকালীন সময়ে সাধক প্রবর শ্রদ্ধেয় বনভান্তেকে সামরিক অফিসারেরা ব্যবহার করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। শ্রদ্ধেয় বনভান্তেও এক সময় বিশ্বের বৌদ্ধ প্রধান দেশগুলোর ভিক্ষু-সংঘ যখন বর্ষাবাস যাপনে রত ছিলেন ঠিক এমনি সময়ে তিনি বর্ষাব্রত ভেঙ্গে কঠিন চীবর দানোৎসব করেছিলেন। অপরদিকে বিভিন্ন প্রতিকুল অবস্থায় সাথে মোকাবেলা করে শ্রদ্ধেয় অগ্রবংশ ভান্তে ও শ্রদ্ধেয় জ্ঞানশ্রী ভান্তেদ্বয়ের অন্যান্য শিষ্যমন্ডলী ধর্মীয় শিক্ষায় পাশাপাশি জ্ঞাতীগণের রক্ষার্থে বুদ্ধ নির্দেশিত অহিংসার বাণী নিয়ে রাজপথে মৌনমিছিল বাহির করতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না।
পার্বত্য এলাকার দ্বিবিভক্ত পার্বত্য ও বন নামক শব্দ দুটি শুধুমাত্র এদেশে সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে বাংলাদেশের ভূখন্ড পেড়িয়ে ভারতের ভূখন্ডেও উল্লেখিত বিভেদ কোননা-কোন ভাবে বহন করে নিয়ে গিয়ে “চোখ খাত্যা ও চোখ মেল্যা” নাম ধারণ করে প্রবাহমান গতিতে এগিয়ে চলছে। এক সময় শুনেছি ভারত ভূমে অরুণাচল প্রদেশের কোন এক খামতি বা চিম্পু গোত্রের প্রভাবশালী এক নেতা নাকি কয়েক’শ একর জমি নন্দপাল ভান্তেকে দান করেছিলেন। বিধায় ভান্তের মাহাত্ম্য প্রচার দানের স্বাক্ষ্য হিসেবে উক্ত দানবীরকে এখানে এনে দানের মাহাত্মও প্রচার করা হবে। এখানে আমার একটি অপ্রিয় সত্য বক্তব্য হচ্ছে; উক্ত নেতার গোত্ররাতো বুড্ডিষ্ট। বৌদ্ধ হয়েও যদি এতদিন সঠিক পথের সন্ধান না পেয়ে বর্তমানে সঠিক পথের সন্ধান পেয়ে থাকেন এবং সত্যিকার অর্থে উনার প্রদেশে অর্ধশতাব্দীর ও বেশী সময় ধরে যে চাকমা বুড্ডিষ্ট রিফিউজিরা অবস্থান করছেন-তাদের জন্য বুদ্ধর অহিংসা বাণী নিয়ে অপরাপর দানবীরদের সমন্বয়ে উক্ত চাকমাদের নাগরিকত্বের সু-ব্যবস্থায় হাত দিলেইতো বুদ্ধ নির্দেশিত স্বধর্ম ও স্বজাতি রক্ষায় মহাব্রত পালিত হবে। এখানে এসে অহিংসার বাণী প্রচারের কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
প্রবন্ধের শেষান্তে এসে বলত হচ্ছে ভগবান তথাগতের অহিংসা ধ্বজাধারী ভিক্ষু সংঘের মাঝে যদি বিভেদ নীতি পালিত হয় তাহলে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনও কিভাবে ঐ বিভেদের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাবে? বরং ধর্মে স্বকীয়তার প্রাধান্য দিয়ে উৎসাহ করা হচ্ছে বিভেদ নীতিকে; পরোক্ষভাবে ধর্মীয় ভাবধারায় ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতকে। বিধায় উপসংহারে আহ্বান জানাচ্ছি বৌদ্ধদের বিরাজমান আত্ম-অভিমানী নীতিকে পরিহার করে পবিত্র-অপবিত্রের প্রচারণার কাজ বন্ধ করে ধর্মীয় দৃষ্টি কোন থেকে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ করার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পদক্ষেপ নেওয়া হোক। বিধাতার কাছে প্রার্থনা করছি, দ্বন্ধের বৈতরনীর পার হয়ে অহিংসার স্রোতে মিলিত হোক। এলাকার বর্তমান বৌদ্ধ ধর্মের প্রেক্ষাপট এবং অহিংসার মহান মন্ত্রে উজ্জিবীত হয়ে বন্ধ হোক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আদিবাসী জাতি সমূহের ভ্রাতৃঘাতী রাজনৈতিক সংঘাত।
লেখক-প্রাবন্ধিক, চাকমা ভাষা ও সংস্কৃতির গবেষক ও সদস্য, বাংলাদেশ চাকমা লেঙ্গুয়েজ কাউন্সিল।