শুক্রবার ● ২৪ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » গুনীজন » গুণীজন সংবর্ধনা দিল “সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম”
গুণীজন সংবর্ধনা দিল “সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম”
স্টাফ রিপোর্টার :: পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত প্রথম জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল “সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম” এর ৫ম বছরপূর্র্তি ও ৬ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে গুনীজন সংবর্ধনা দিল পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষ। আজ ২৪ জানুয়ারি সকাল ১০টা কাঁঠালতলী, রাঙামাটি চারুকলা একাডেমীতে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর মুখ্য সম্পাদক নির্মল বড়ুয়া মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. গৌরব দেওয়ান। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন, রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা স্বপন কিশোর চাকমা, রাঙামাটি নদী উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিএম শাহীনুর রহমান, আইএফআইসি ব্যাংক রাঙামাটি শাখা ব্যাবস্থাপক শোয়েব রানা ও রাঙামাটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র জামাল উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও সংবর্ধিত গুণীজনদের উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর বার্তা সম্পাদক জুঁই চাকমা।
“সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম” এর ৫ম বছরপূর্র্তি ও ৬ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে গুনীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রাঙামাটি চারুকলা একাডেমীর শিক্ষক সৌরভ তঞ্চঙ্গ্যা।
এসময় কবি উত্তম কুমার বড়ুয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রেস সচিব সাংবাদিক জাহাঙ্গির আলম, বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ আব্দুল মান্নান রানা, সমাজ সেবক রুপায়ন তঞ্চঙ্গ্যা, রাঙামাটির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩০০ জনের অধিক ছাত্র-ছাত্রী, অভিবাবকগণ, রাঙামাটি চারুকলা একাডেমীর শিক্ষকগণ, রাঙামাটিতে কর্মরত অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সমাজ সেবায় ৫০ বছর পূর্তি করায় পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রবীন ব্যাক্তিত্ব কাজী নজরুল ইসলাম, সাংবাদিকতা পেশায় ৫০ বছর পূর্তি করায় পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রবীন সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহমেদ, চারুশিল্প পেশায় ৫০ বছর পূর্তি করায় পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রবীন ব্যাক্তিত্ব রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা,আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমাজ সেবায় বাঙালী বৃটিশ নাগরিক অহিদ উদ্দিন ও গ্রামীণ পর্যায়ে চিকিৎসা সেবায় ৫০ বছর পূর্তি করায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. বাদল বরণ বড়ুয়াকে গুনীজন সংবর্ধনা এছাড়া জাতীয় শিশু পুরস্কার-২০১৯ অর্জন করায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলার দিব্য চাকমাসহ ৬ জনকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
এর আগে “সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম” এর ৫ম বছরপূর্তি ও ৬ বছরে পদার্পন উপলক্ষে শিশু কিশোরদের উম্মুক্ত চিত্রাংকন, নৃত্য, গান, আবৃতি প্রতিযোগিতা ও মনোজ্ঞ সাংকৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সংবর্ধিত ৬ গুণীজনের সংক্ষিপ্ত জীবণী:
কাজী নজরুল ইসলাম : ১৯৪১ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার বর্তমান রাঙামাটি ১১৪ নং বালুখালী মৌজায় জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতার নাম মৃত ফাতেমা খাতুন, পিতার নাম মৃত হাজী আব্দুল কুদ্দুস ।
তিনি ১৯৫৬ সালে রাঙামাটি সরকারি স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ, ১৯৬১ চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।
কর্মময় জীবণে তিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথে লিপ্ত ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) জেলায় পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।
পরে ব্যাবসা শুরু করেন সাথে নানা সামাজিক কাজে জড়িয়ে পরেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, সমাজ কল্যাণ মুলক অপরাধী সংশোধন কমিটি, শিশু একাডেমি, শিশু অপরাধী সংশোধন, রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থা, রাঙামাটি রাইফেলস ক্লাবের সেক্রেটারি, জেলা আইন শৃংখলা কমিটি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জড়িত রয়েরেছন। তিনি ১৯৬১ সালে শিক্ষা জীবন শেষ করে আজ আবধি দীর্ঘ ৫০ বছরের অধিক সময় সমাজসেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।
রতি কান্ত তঞ্চঙ্গ্যা : ১৯৪২ সালে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় ১২২ নং কুতুবদিয়া মৌজায় (বর্তমান বিলাইছড়ি উপজেলা) জন্ম গ্রহন করেন। তার মাতার নাম মৃত তুন্যাপুদি তঞ্চঙ্গ্যা, পিতার নাম মৃত শিখল চান মহাজন তঞ্চঙ্গ্যা।
তিনি কাঙারা ছড়ি এম ই স্কুল (এম ই অর্থ ৬ষ্ঠ শ্রেনী থেকে ১০ম শ্রেণি) পড়াশোনা করেন।
কর্মময় জীবনে তিনি শিল্পকর্মের পাশাপাশি ১৯৬৮ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন । পার্বত্য চট্টগ্রামের এই জীবন্ত কিংবদন্তী সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে এবং নিজ অর্থায়নে ১৯৮২ সালে রাঙামাটি চারুকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠাতা করেন। তিনি ১৯৮২ সাল থেকে আজ অবধি রাঙামাটি চারুকলা একাডেমির অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন।
একেএম মকছুদ আহমেদ : ১০জুলাই ১৯৪৫ সালে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায়। তার মাতার নাম মৃত জমিরা খাতুন, পিতার নাম মৃত জামাল উল্লা।
তিনি ১৯৬৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।
কর্মময় জীবনে তিনি ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত কাউখালী উপজেলার বেতছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লংগদুর সোনাই প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বরকলের গৌরস্থান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি ১৯৬৯ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত দৈনিক আজাদী সংবাদপত্রে কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি নিউনেশান,ইন্ডিপেনডেন্ট, টেলিগ্রাফ, এনা ও বাসস’সহ বিভিন্ন সংবাদসংস্থা ও সংবাদপত্রে কাজ করেন। তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত বিবিসি’তে কাজ করেন,এবং সাপ্তাহিক বনভূমি পত্রিকায় ও কাজ করেন। বনভূমি পত্রিকাটি ১৯৭৮ সালের ২৬ শে মার্চ শুরু হয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর ২০০৫ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। ১৯৮৩ থেকে বর্তমানে দীর্ঘ ৩৭ বছর পর্যন্ত দৈনিক গিরিদর্পন পত্রিকায় সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে রয়েছেন। বৈচিত্র্যময় কর্মজীবনের ৫০ বছর পার করেছেন সমাজের অংগতি জনসম্মুখে তুলে আনার কলম সৈনিক সাংবাদিক হিসেবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. বাদল বরণ বড়ুয়া : ১৯৪৪ সালে রাউজান উপজেলার উত্তর গুজরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতার নাম মৃত নিরুপমা বড়ুয়া, পিতার নাম মৃত হরিশচন্দ্র বড়ুয়া।
তিনি ১৯৬৪ সালে মেট্রিক পাশ, ১৯৬৬ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।
তিনি ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত উত্তর গুজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি জনস্বাস্থ্য বিভাগে থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পালাডানা ক্যাম্প থেকে গ্যারিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় তিনি ১নং সেক্টরের আওতায় রাউজান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কল্যাণমিত্র বড়ুয়ার অধিনে তিনিও সাব কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. বাদল বরণ বড়ুয়ার ব্যাচ নং -২৬০৮৬৭১ (জেনারেল ওসমানীর অধিনে)। তার বাবা মৃত হরিশচন্দ্র বড়ুয়া পেশায় ডাক্তার ছিলেন বলে তিনি ১৯৭৩ সালে চিকিৎসা শিক্ষা অর্জন করেন। ঢাকা, মানিক নগরের বায়োস মেডিক্যাল থেকে ডাক্তারী পাশ করেন। বর্তমানে তিনি রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া চাইঞেরী বাজারে দীর্ঘ ৫০ বছর চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
মোহাম্মদ অহিদ উদ্দিন : মোহাম্মদ অহিদ উদ্দিন সিলেট জেলার বিয়ানী বাজার দেউলিগ্রামে ১৯৬৫ সালে জন্ম গ্রহন করেন।
মাতা মৃত মিসেস তাসলিমা খাতুন পিতা মৃত আলহাজ্ব ফার্মুজ আলী মাস্টার । তিনি স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ে ডিপ্লোমা পাশ করেন। তিনি ব্যবসা, সামাজিক কাজ এবং রাজনীতি করতে পছন্দ করেন। তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে বৃটেন এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেব মুলক কাজে সক্রিয়ভাবে জড়িত এছাড়া তিনি বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের অনেক অলাভজনক দাতব্য সংস্থার সাথে জড়িত রয়েছেন। ১৯৯০ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে সাফল্যের সাথে নিজস্ব রেস্টুরেন্ট ও বিনিয়োগ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। বর্তমানে তাঁর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের জীবনমান উন্নয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সমাজে বঞ্চিত, অভাবী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করা। তিনি সিলেটের বিয়ানী বাজার জেনারেল এন্ড ক্যানেসার হাসপাতাল, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশননের দাতা, রেড ব্রিগ্রেড কমিউনিটি ট্রাষ্ট এর চেয়ারম্যান, এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দাতা হিসাবে বিগত ৪০ বছর ধরে মানব সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৭৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত এ বৃটিশ বাংলাদেশী নাগরিক একাধারে লেখক, সম্পাদক, ইতিহাস ও রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করছেন।তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে হানাদার বাহিনী দ্বারা জান-মালের বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করায় পাকিস্থানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ৫০ বিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরন মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে তিনি সাক্ষ্য-প্রমান এবং যুদ্ধচলাকালিন হানাদারদের দ্ধারা নিরীহ শহীদ পরিবার ও ব্যক্তিদের চিহৃতকরণের কাজ করছেন। এসব দলীলপত্র সংগ্রহের কাজ শেষ হলে নেদারলেন্ডের হেগ এ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস বিরোধী আদালতে পাকিস্থানের বিরুদ্ধে ১০০ বিলিয়ন পাউন্ড এর ক্ষতিপুরণ মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এমন মহৎ কাজ নিজের অর্থ খরচ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের পক্ষে আইনী লড়াই করার উদ্যোগ নিয়েছেন গুনী এ সমাজ সেবক অহিদ উদ্দিন।
দিব্য চাকমা : ২০০৪ সালে ১৫ এপ্রিল রাঙামাটি জেলার ৫ নং বন্ধুক ভাঙা ইউনিয়নে জন্মগহন করেন।
তার মাতার নাম যশী চাকমা, পিতার নাম রবীয়া চাকমা।
রাঙামাটি লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ- এ দশম শ্রেণীর এ কৃতি শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে চারুকলা বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।