রবিবার ● ২৬ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » করোনা ভাইরাসে সাড়ে ৬ কোটি মানুষ মৃত্যুর আশঙ্কা
করোনা ভাইরাসে সাড়ে ৬ কোটি মানুষ মৃত্যুর আশঙ্কা
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর পরবর্তী ১৮ মাসের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সাড়ে ছয় কোটি মানুষ উজাড় হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার অন্তত তিন মাস আগেই এ ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা ভবিষ্যদ্বাণী করে জানিয়েছিলেন, নতুন এক ধরনের করোনা ভাইরাসে লাখ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে আত’ঙ্কের মধ্যে শনিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে ডেইলি মেইল।
গত বছরের অক্টোবর মাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার অংশ হিসেবে এমনটাই ধারণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিখ্যাত গবেষণা কেন্দ্র জন হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটি। মার্কিন বিশেষজ্ঞদের সতর্কতার মাত্র তিন মাস পরই (এখন থেকে মাসখানেক আগে) গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের তিন হাজার বয়সী শহর উহানে প্রথম করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়। সেখানে বন্যপ্রাণী কেনাবেচার একটি অবৈধ বাজার থেকে রোগ ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
এরপরই নিউমোনিয়া সদৃশ এ প্রাণঘাতী ভাইরাস দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়ে চীনের বাইরেও। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পর ইউরোপ-আমেরিকা এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার নেপালেও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। মহামারী ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের স্বা’স্থ্য কর্তৃপক্ষের তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে চীনসহ ১২ দেশে নতুন এ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে।
চীনা কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অতি সংক্রামক ভাইরাসটি চীনের ৪১ জনের প্রা’ণ কেড়ে নিয়েছে। নতুন আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার দুইশর বেশি। তবে ব্রিটিশ বিশেষ’জ্ঞদের মতে, আক্রান্তের সংখ্যা হাজার হাজার। জন হপকিন্স সেন্টারের সিনিয়র গবেষক ড. এরিক টোনার বিজনেস ইনসাইডারকে বলেছেন, ডিসেম্বরের শেষে ভাইরাসটি চীনে ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়ার পরও তিনি মোটেই অবাক হননি।
তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই মনে হয়েছে, নতুন একটা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর সেটা হবে একটা করোনাভা’ইরাস।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে এখনও জানি না কতটা সংক্রামক এ ভাইরাসটি। আমরা জানি, এটা একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়। তবে তার বিস্তার কতটুকু তা জানি না।’
এরিক টোনার আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটা সার্স ভাইরাসের চেয়ে কিছুটা নমনীয়। সেটাই ভরসার জায়গা। অন্যদিকে এটা সার্সের চেয়েও বেশি সংক্রামক হতে পারে। অন্তত স্থানীয় জনপরিসরে।
সর্দি, হাঁচি, কাশিতে হেলাফেলা নয়, হতে পারে করোনা ভাইরাস
নতুন আতঙ্ক করোনা। যা গত ডিসেম্বর থেকে চীনে বিরাট ভীতি সৃষ্টি করেছে। এই ভাইরাস সংক্রমণে মারা গেছে ১৭ জন এবং আক্রান্ত হয়েছে আরো অন্তত ৫০০ জনের চেয়েও বেশি।
যদিও কিছু স্বাস্থ্য বিশ্লেষকের ধারণা যে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি। ভাইরাসটিকে এক ধরনের করোনা ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এটি একটি কমন ভাইরাস যা নাক, সাইনাস বা গলার উপরিভাগে সংক্রমণ ঘটায়। কিন্তু এই ভাইরাস সংক্রমণ কতটা উদ্বেগজনক এবং কতটা দ্রুত ছড়ায় এই ভাইরাস?
এই ভাইরাসের উৎপত্তি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা ভাইরাসটি উৎস কোনো প্রাণী। যতটুকু জানা যায়, মানুষের আক্রান্ত হবার ঘটনাটি ঘটেছে চীনের উহান শহরে সামুদ্রিক মাছ পাইকারি বিক্রি হয় এমন একটি বাজারে।
এ ধরনের ছয়টি ভাইরাস আগে পরিচিত থাকলেও এখন যেটিতে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ সেটি নতুন। বেশিরভাগ করোনা ভাইরাসই বিপজ্জনক নয় কিন্তু আগে থেকে অপরিচিত এই নতুন ভাইরাসটি ভাইরাল নিউমোনিয়াকে মহামারীর দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
করোনা ভাইরাসের লক্ষণ সমূহ
রেসপিরেটরি লক্ষণ ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অনেককে সার্স ভাইরাসের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। যা ২০০০ সালের শুরুতে প্রধানত এশিয়ার অনেক দেশে ৭৭৪ জনের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। নতুন ভাইরাসটির জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এটি অনেকটাই সার্স ভাইরাসের মতো।
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মার্ক উলহাউস বলেছেন, আমরা যখন নতুন কোনো করোনাভাইরাস দেখি, তখন আমরা জানতে চাই এর লক্ষণগুলো কতটা মারাত্মক। এ ভাইরাসটি অনেকটা ফ্লুর মতো কিন্তু সার্স ভাইরাসের চেয়ে মারাত্মক নয়।
কত দ্রুত ছড়াতে পারে এই ভাইরাস?
ডিসেম্বরে উহান শহরে প্রথম এ ভাইরাসটি তার অস্তিত্ব জানান দিয়েছিল এবং এ পর্যন্ত মারা গেছে ১৭ জন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদ্বেগের কারণ হলো লুনার নিউ ইয়ার বা চান্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে যখন লাখ লাখ মানুষ বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করে, সেই সময়ে নতুন এই ভাইরাসে বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকবে।
দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও থাইল্যান্ডে নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত হবার খবর নিশ্চিত করেছে।
লন্ডনে ইমপেরিয়াল কলেজের এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশাস ডিজিজ এনালাইসিস এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, তারা মনে করেছে ইতোমধ্যেই এক হাজার ৭০০ মানুষ নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
এটি কি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে?
এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়ার কিছু ঘটনা ঘটেছে। সিঙ্গাপুরের ডিউক-নুস মেডিকেল স্কুলের ওয়াং লিন ফা সম্প্রতি উহান সফরে করে এসেছেন। তিনি বলছেন, মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের লক্ষ্মণগুলোর দিতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, চাইনিজ নিউ ইয়ার আসছে। চীনে অন্তত ৪০ কোটি মানুষ এ সময় ভ্রমণ করবে বিভিন্ন জায়গায়। প্রত্যেকেই উদ্বিগ্ন। এটার দিকে ভালো ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে আমাদের।
আক্রান্ত হওয়া ঠেকানো যাবে যেভাবে
ইতোমধ্যেই সংক্রমিত ব্যক্তিকে আলাদা করে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে অন্যকে সংক্রমিত করার ঝুঁকি পার হওয়া পর্যন্ত। ইতোমধ্যেই উহান প্রদেশের সেই মাছের বাজার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং সেখানে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে।
মানুষজনকে অরক্ষিত প্রাণী থেকে সাবধানতার পাশাপাশি ডিম ও মাংস রান্না এবং ঠাণ্ডা বা ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। চীনা নববর্ষের সময় যারা ভ্রমণ করবে তাদের শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা আছে কিনা সেটি দেখা হবে।
উহান থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু করেছে সিঙ্গাপুর ও হংকং। যুক্তরাষ্ট্রও বড় বিমানবন্দরগুলোতে একই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো যোগাযোগ থাকায় বিশেষ সতর্কতা নেয়া হয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও। বিশ্বজুড়ে এটি ছড়িয়ে পড়ার আশংকা নিয়ে হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
আমাদের কী উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?
ওয়েলকাম ট্রাস্ট এর ড. জোসি গোল্ডিং বলেন, নতুন করে সংক্রমণের খবর না পাওয়া পর্যন্ত এটা বলা কঠিন যে এ মূহুর্তে আমাদের কতটা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। তিনি বলেন, সার্সের বিষয়টা আমাদের ভালোভাবেই মনে আছে এবং সেজন্যই বেশি ভয় হচ্ছে। কিন্তু এখন আমরা অনেক বেশি প্রস্তুত এ ধরনের রোগের সঙ্গে লড়াই করার জন্য।
নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জোনাথন বল বলছেন, আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত এ কারণে যে, যেকোনো ভাইরাসই মানুষকে আক্রমণ করতে পারে। আর একবার মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারলে এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ভাইরাসকে সে সুযোগ দেয়া উচিত নয়।