শুক্রবার ● ৩১ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » গাইবান্ধায় কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকরা কাজ শেষেও পায়নি পারিশ্রমিক
গাইবান্ধায় কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকরা কাজ শেষেও পায়নি পারিশ্রমিক
গাইবান্ধা :: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (৪০ দিনের) কাজ শেষ হলেও চেকে স্বাক্ষর না হওয়ায় শ্রমিকরা তাদের পারিশ্রমিক পায়নি। প্রতি সপ্তাহে পারিশ্রমিক দেয়ার বিধান থাকলেও বরাদ্দকৃত টাকার এক টাকাও ছাড় করা হয়নি। ফলে শ্রমিকরা অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে,অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার ৪০ দিনের কাজের কর্মসূচি ‘কর্মসৃজন’ প্রকল্প চালু করে। এ উপজেলায় প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর। দৈনিক ৮ ঘন্টা করে সপ্তাহে ৫ দিন হিসেবে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি শ্রমিকদের ৪০ দিনের কাজ শেষ হয়। পাঁচ হাজার ৬৩১ জন উপকারভোগির জন্য ৪ কোটি ৫০ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। এ উপজেলায় প্রতি ইউনিয়নে ৯টি করে ১৫ ইউনিয়নে মোট ১৩৫টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। প্রকল্পগুলো হচ্ছে রাস্তা-ঘাট সংস্কার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,মসজিদ-মন্দিরের মাঠ ভরাট ও ঝোপ-জঙ্গল পরিস্কার। কাজ শেষেও পারিশ্রমিক না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা।
তারাপুর ইউনিয়নের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক কাওছারসহ শ্রমিকরা জানান, পারিশ্রমিক না পেয়ে অভাব-অনটনে আছি।
বামনডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান নজমুল হুদা জানান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বিল দাখিল করলেও সেই চেকে স্বাক্ষর হয়নি। কেন স্বাক্ষর হয়নি তা সঠিক জানি না।
ধোপাডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান রাজু জানান, শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে যন্ত্রণায় পড়েছি। শ্রমিকরা চেয়ারম্যানের বাড়ি ঘেরাও করতে চাচ্ছে। তিনি আরো জানান, আইনগত জটিলতা থাকায় ইউএনও চেকে স্বাক্ষর করেননি বলে জেনেছি।
দহবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কবির মুকুল জানান, শ্রমিকরা তাদের পারিশ্রমিকের জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে ঘুরছে। তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিছিল করতে চাচ্ছে।
শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, জটিলতা কাটিয়ে খুব তাড়াতাড়ি শ্রমিকদের মজুরী দেয়া দরকার।
ছাপড়হাটী ইউপি চেয়ারম্যান কনক কুমার গোস্বামী জানান, বর্তমানে এ উপজেলায় দুইজন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রয়েছেন। যেহেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী সরকার আগে থেকেই ছিলেন এবং হঠাৎ করে ওনাকে বদলী করায় উনি উচ্চ আদালতের আদেশের বলে পুনরায় বহাল হয়েছেন। নুরুন্নবী সরকারকে বদলীর সময় আরেকজন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ের আদেশে সুন্দরগঞ্জে যোগদান করেন। এখন এ দুই কর্মকর্তার মধ্যে কার মাধ্যমে শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের টাকা দিবেন তা নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দেয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার চেকে সই করেননি।
নতুন যোগদানকৃত পিআইও মোশাররফ হোসেন জানান,আমার যোগদানের পর নুরুন্নবী সরকার উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে পুনরায় বহাল হয়েছেন। যেহেতু এটা আইনি ব্যাপার তাই মন্তব্য করতে চাই না।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী সরকার জানান, শারীরিকভাবে অসুস্থ্য থাকায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর/২০১৯ হতে ৭ ডিসেম্বর/২০১৯ অর্জিত ছুটিতে ছিলেন। কর্মস্থলে যোগদান করা মাত্রই সকল কাজ-কর্ম হালনাগাদ পূর্বক অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির বিল স্বাক্ষর করে গত পহেলা জানুয়ারি/২০২০ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নিকট উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, কোন কারণ ছাড়াই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিলে স্বাক্ষর করছেন না। একদিন পর পর বিল উপস্থাপন করা হলেও স্বাক্ষর করছেন না। এ টাকা ফেরত যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোলেমান আলী জানান, বর্তমানে দুইজন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রয়েছেন। এ কারণে আইনি জটিলতা রয়েছে। একজন মন্ত্রণালয়ের আদেশে যোগদান করেছেন। আর একজন আদালতের আদেশে এসেছেন। আসলে এখানে কে দায়িত্ব পালন করবেন তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পত্র লেখা হয়েছে। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ-কর্ম করা হবে।