বুধবার ● ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » প্রধান শিক্ষকের অবহেলায় আমি পরীক্ষা দিতে পারলাম না : সিমা
প্রধান শিক্ষকের অবহেলায় আমি পরীক্ষা দিতে পারলাম না : সিমা
পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মনোহরখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী মোসা. সিমা আক্তার।প্রধান শিক্ষকের অবহেলায় টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বোর্ডের নির্ধারিত ফি দিয়ে ফরম পূরণ করেও এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।
এর আগে গত শনিবার পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মির্জাগঞ্জ উপজেলার মির্জাগঞ্জ গ্রামের আব্দুল লতিফ সিকদারের মেয়ে সিমা আক্তার ২০১৭ সালে পূর্ব মির্জাগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪.২৫ পয়েন্ট পেয়ে জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এরপর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মনোহরখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন সিমা আক্তার। তার ক্লাস রোল ৮৩। সেখানে নবম ও দশম শ্রেণির কোর্স শেষ করে ২০২০ সালের অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচনি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বোর্ড নির্ধারিত টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করেন সিমা আক্তার। অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সোমবার অনুষ্ঠিত ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিলো তার, কিন্তু পরীক্ষার দুদিন আগে শনিবার প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাসুদ আলম জানান, নবম শ্রেণিতে তার নিবন্ধনই করা হয়নি। এতে হতাশ হয়ে পড়েন সিমা এবং তার অভিভাবকরা।
তারা প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চান নবম শ্রেণিতে যার নিবন্ধনই হয়নি, সে কিভাবে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষ করে নির্বাচনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়? এবং বোর্ডের নিয়মানুযায়ী ফরম ফিলাপ করে? প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাসুদ আলম-এর কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় সিমা আক্তার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
সিমা আক্তার বলেন, আমি নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন করার জন্য অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো কাগজপত্র এবং ছবি জমা দেই। বিদ্যালয়ের সকল নিয়মকানুন মেনে টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বোর্ড নির্ধারিত দুই হাজার টাকা ফি দিয়ে ফরম পূরণ করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি, শনিবার পরীক্ষার প্রবেশপত্র আনতে গিয়ে আমি জানতে পারি নবম শ্রেণিতে আমার নিবন্ধনই (রেজিস্ট্রেশন) হয়নি।
সীমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যদি আমার রেজিস্ট্রেশনই না হয় তাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণের সময় বোর্ড নির্ধারিত টাকা নিয়েছে কিভাবে আর বিদ্যালয়ে নিয়মিত কোচিং ক্লাস করিয়েছে কিভাবে? প্রধান শিক্ষকের অবহেলায় আমার শিক্ষাজীবন থেকে দুটি বছর হারাতে বসেছি। আমার একটাই দাবি আমি এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে চাই।
এ বিষয়ে মনোহরখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাসুদ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল কি না তা আমার জানা ছিলো না। ‘রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন নিশ্চিত না হয়ে আপনি কিভাবে তাকে টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণসহ কোচিং করালেন?’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম তার রেজিস্ট্রেশন হয়েছে, এটা ভুলে হয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর একটি অভিযোগ পেয়েছি, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সাইফুদ্দীন ওয়ালীদ বলেন, প্রাথমিকভাবে সিমা আক্তারের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্পূর্ণ দায়িত্ব অবহেলা বলে মনে হচ্ছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।