মঙ্গলবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » ধ্বংসের মুখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকিতে জনপদ
ধ্বংসের মুখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকিতে জনপদ
গাইবান্ধা :: গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও রক্ষানা-বেক্ষণ অভাবে এখন বিলিনের পথে। বাঁধের ওপর অবৈধ জনবসতি এবং বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠেছে। ফেলে বন্যার হুমকীর মধ্যে রয়েছে সাঘাটা উপজেলা জনপদ।
যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর ডানতীর রক্ষা কল্পে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর অর্থায়নে বিগত ১৯৬৬ সালে রংপুর তিস্তা ব্রিজ হতে সিরাজগঞ্জ হুলাসাগর পর্যন্ত ২১৪ কি:মি: বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পানিউন্নয়ন বোর্ডের এই বাঁধটির রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কার অভাবে দিন দিন বাঁধ দখল করে গড়ে ওঠেছে জনবসতিসহ বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য স্থাপনা। বিশেষ করে উপজেলার বাঁশহাটা হতে জুমারবাড়ী পর্যন্ত প্রায় ২২ কি: মি: বাঁধের অংশে লোকজনের ঘর-বাড়ি, দোকান, রাইচমিল সহ অসংখ্য কাঁচাপাকা স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
বাঁধে এ সব অবৈধ জনবসতি ও স্থাপনা সরিয়ে ফেলার জন্য কোন তাগিত এবং বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার ব্যাপারে সরকারী বা পানিউনয়ন বোর্ডের কোন উদ্যোগ না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ বাঁধটি এখন বিলিনের পথে। ফলে হুমকীর মধ্যে পড়েছে বাঁধের পশ্চিমাংশে অবস্থিত সাঘাটার বিস্তীর্ণ জনপদ।
সরেজমিনে দেখা গেছে উপজেলার জুমারবাড়ী ইউনিয়নের বসন্তের পাড়া গ্রাম হতে শুরু করে সাঘাটা ইউনিয়নের বাঁশহাটা পর্যন্ত বাঁধের কোথাও দু’পাশের ঢালু খাড়া করে কেটে সমতল করে সেখানে কোথাও আবার বাঁেধর ওপর, যার যেমন মন চায় নিজেদের ইচ্ছামত ঘর-বাড়ি তুলে লোকজন বসবাস করছে। এদের মধ্যে দুই-চারজনের বাড়িÑঘর করার মত জমি না থাকলেও সিংহ ভাগ পরিবারের রয়েছে জায়গা জমি। তারা এক সময় নদী ভাঙ্গনে গৃহহারা হয়ে এই বাঁধে আশ্রায় নিয়েছে। পরবর্তীতে তাদের ভেঙ্গে যাওয়া জমি গুলো চর উঠলেও তারা বাঁধ ছেড়ে সেই চরে আর ফিরে যায়নি। অনেকের মূলভুখন্ডেই যায়গা জমি থাকলেও সেখানে বাড়ি-ঘর না করে বাঁধেই বসবাস করছেন। বাঁধে বসবাসকারী লোকজনকে সরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কেউ কিছু না বলার সুবাদে নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী বাঁধ কেটে বাড়ি-ঘর তুলে বসবাস করছে।
বাঁধে বসবাসকারী আইয়ুব হোসেন (৬০), ফুল মিয়া (৫০), সাহেব মিয়া (৫৫) বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে তারা এই বাঁধে বসবাস করছেন। তাদেরকে বাঁধ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য কখনও কেউ বলেনি। একই ধরণের প্রতিক্রিয়া জানালেন বাঁধে বসবাসরত আরও অনেকেই।
সাঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইটের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই সব লোকজন দীর্ঘ দিন ধরে বাঁধে বসবাস করছে। লোকজনের বসবাসের কারণে বাঁধটি হুমকীর মধ্যে পড়েছে জরুরী ভাবে এবাঁধ সংস্কার প্রয়োজন। পাশাপাশি বাঁধে বসবাসকারী এসব লোকজনের মধ্যে কোন কোন পরিবারের জায়গা জমি নেই। তাদের পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রেজাউর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে বাঁধটি পূন:সংস্কার করার জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিভাগে অর্থ ছাড়ের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। অর্থ পেলে পর্যায় ক্রমে সংস্কার করা হবে। বাঁধে আশ্রায় নেয়া লোকজনকে তাদের বাড়ি-ঘর সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।