শুক্রবার ● ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ শাবি বিশ্ববিদ্যায় দিবসে প্রশাসনের নানাবিধ কর্মসুচি পালন
ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ শাবি বিশ্ববিদ্যায় দিবসে প্রশাসনের নানাবিধ কর্মসুচি পালন
হাফিজুল ইসলাম লস্কর, সিলেট প্রতিনিধি :: শাবি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আর পহেলা ফাল্গুন একাকার হয়ে গেছে আজ। ১৯৯১ সালের বসন্তের এই দিনে শিক্ষা-কার্যক্রম শুরু করে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর এই বিশ্ববিদ্যালয়। এর পর কেটে গেছে ২৯টি বসন্ত। ৩০ বছরে পদার্পণ করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য। নতুন নতুন গবেষণা, শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন আর সাফল্যে প্রতিষ্ঠানটির গৌরব দেশের গণ্ডি পেরিয়েছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে স্থান করে নিয়েছে।
২৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কেক কাটা, বর্ণাঢ্য র্যালিসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। পরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মুক্তমঞ্চে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। পরবর্তীতে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে কেক কাটার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো আনোয়ারুল ইসলাম, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মস্তাবুর রহমান, নব নির্বাচিত শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম সাইফুল ইসলাম, উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলামসহ বিভিন্ন অনুষদের ডীন, প্রভোস্ট, দপ্তর প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিগত বছরগুলোতে ১৩ ফেব্রুয়ারি এ দিবস পালন করা হলেও এ বছর বাংলা দিনপঞ্জি পরিবর্তিত হওয়ায় ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলা পহেলা ফালগুনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, নানাবিধ সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত সুনাম ও সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা ও গবেষণায় এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে। চলমান উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে। পাশাপাশি অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সমস্যা দূরীভূত হবে। এজন্য সকলের সার্বিক সহযোগিতা কাম্য।
উল্লেখ্য, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ সিলেট শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে আখালিয়া এলাকায় ৩২০ একর জমির ওপর অবস্থিত। ১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনটি বিভাগ, ১৫ জন শিক্ষক ও ২০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠ। উত্তর উত্তর উন্নতির মাধ্যমে ছোট্ট পরিসরে যাত্রা করা সেই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্টান এখন বিশ্বের অন্যতম বিদ্যাপীঠ। রয়েছে ২৮টি বিভাগ এবং ২টি ইনস্টিটিউশন। শিক্ষাদান করছেন প্রায় সাড়ে ছয়শত শিক্ষক এবং শিক্ষা গ্রহন করছেন প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী।
ক্যাম্পাসে প্রবেশকালে ‘এককিলো রোড’, অসংখ্যা ছোট-বড় টিলা, পাহাড়ের পাদদেশে স্থাপিত আবাসিক হলগুলো, টিলার ওপর নির্মিত শত সোপান বিশিষ্ট শহীদ মিনার, জাতির পিতার প্রতিকৃতি, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘চেতনা-৭১’ প্রভৃতি স্থান ও স্থাপনা সবার নজর কাড়বে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত অনেক প্রযুক্তি দেশে প্রথম ও অনন্য স্থান দখল করে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথম সেমিস্টার পদ্ধতি চালু, মোবাইল ফোনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু, পুরো ক্যাম্পাস ওয়াইফাই সেবার আওতায় নিয়ে আসা, পুরো ক্যাম্পাস সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, নিজস্ব ডোমেইনে ই-মেইল চালু, প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ উদ্ভাবন, যানবাহন ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন, চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) উদ্ভাবন, বাংলায় কথা বলা সামাজিক রোবট ‘রিবো’ তৈরি, হাঁটতে চলতে সক্ষম রোবট ‘লি’ তৈরি, অনলাইনে টান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের সুবিধা চালু, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার কিবোর্ড তৈরি , রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার নির্ণয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবনসহ অসংখ্য উদ্ভাবন রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা নাসা আয়োজিত স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ৭৯টি দেশের বাছাইকৃত ২৭২৯টি দলের সঙ্গে লড়াই করে শীর্ষ চারে জায়গা করে নেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘টিম অলিক’। সর্বশেষ দেশের প্রযুক্তি খাতে অবদানের জন্য ঢাবি-বুয়েটকে পেছনে ফেলে দেশসেরা ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।