রবিবার ● ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » ঢাকা » যুবলীগ নেত্রী পাপিয়ার বাসায় বান্ডিল বান্ডিল টাকা
যুবলীগ নেত্রী পাপিয়ার বাসায় বান্ডিল বান্ডিল টাকা
রাজধানীর গুলশানের অভিজাত একটি হোটেলে মাসে কোটি টাকা ব্যয় করা যুবলীগ নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া ও সুমন দম্পতির বাসা থেকে অস্ত্র, মদসহ বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১)।
রবিববার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় তার বাসায় অভিযান চালিয়ে এসব উদ্ধারের কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম।
সারোয়ার বিন কাশেম জানান, র্যাব-১-এর একটি বিশেষ দল অভিযান চালায় পাপিয়া-সুমন দম্পতির বাসায়। এ সময় বাসা থেকে বিদেশি অস্ত্র, ম্যাগজিন, গুলি, বিদেশি মদ ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ টাকা উদ্ধার করা হয়।
আজ বিকেলে রাজধানীর কাওরানবাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানায় বাহিনীটি।
এর আগে গতকাল শনিবার পালিয়ে দেশত্যাগের সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শামিমা নূর পাপিয়া (২৮) এবং তার স্বামী ও অপরাধের সহযোগী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯), ও শেখ তায়্যিবাকে (২২) গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার টাকা মূল্যের জালনোট, ৬০০ ভারতীয় রুপি ৩১০, ৪২০ শ্রীলঙ্কান মুদ্রা, ১১ হাজার ইউএস ডলার এবং সাতটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
গতকাল সন্ধ্যায় কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল।
সুন্দরীদের চাকরির কথা বলে হোটেলে অনৈতিক কাজ বাধ্য করাতো পাপিয়া
আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সদ্য বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পাপিয়া নামে রাজধানী ঢাকা ও নরসিংদীতে বিলাশবহুল বাড়ি-গাড়িসহ নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রাজধানীর বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেলে নারীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করে অর্থ আয়ের মাধ্যম ছিলো তার। এছাড়া, রেলওয়ে ও পুলিশে এসআই পদে চাকরির কথা বলে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব কথা জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে ১ টি বিদেশি পিস্তল, ২ টি ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশকিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করেছে র্যাব।
তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ফার্মগেটে পাপিয়ার ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে ২টি ফ্ল্যাট, ২ কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লট, চারটি বিলাসবহুল গাড়ি এবং গাড়ি ব্যবসায় প্রায় দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে নামে-বেনামে অনেক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত থাকার কথা জানা গেছে।
পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমন রেলওয়ে ও পুলিশের এসআইতে চাকরির প্রলোভনে ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর বাইরে নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছে বলে জানা গেছে।
র্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, পাপিয়ার আয়ের আরেকটি অন্যতম উৎস নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। ঢাকার বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করে কম বয়সী মেয়েদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হতো। যাদের অধিকাংশ জনকেই নরসিংদী এলাকা থেকে চাকরির প্রলোভনে ঢাকায় আনা হয়েছিলো। অনৈতিক কাজে বাধ্য না হলে তাদেরকে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো।
পাপিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন বিশিষ্ট জনের ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমান যুগে যদি কেউ কারো সঙ্গে ছবি তুলতে চায় তাহলে বিষয়টি সাধারণত এড়ানো যায় না। তাই কারো সঙ্গে ছবি থাকা মানেই পাপিয়ার সঙ্গে সখ্যতার বিষয়টি প্রমাণ করে না।’
এদিকে, শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের সময় শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউসহ (২৮) চারজনকে আটক করে র্যাব-১।
এদিন র্যাব জানায়, রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে প্রেসিডেন্ট স্যুট নিজের নামে সবসময় বুকড করে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন পাপিয়া। যিনি হোটেলটির বারে বিলবাবদ প্রতিদিন পরিশোধ করতেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
বৈধ আয় অনুযায়ী পাপিয়ার বাৎসরিক আয় মাত্র ১৯ লাখ টাকা। অথচ হোটেল ওয়েস্টিনে শুধুমাত্র গত তিন মাসেই বিল পরিশোধ করেছেন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যিনি নারী সংক্রান্ত অপকর্ম ছাড়াও অস্ত্র-মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন তদবির বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।