মঙ্গলবার ● ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » জাতীয় » আজ বর্বরোচিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিবস
আজ বর্বরোচিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিবস
আজ শোকাবহ পিলখানা ট্র্যাজেডি দিবস। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে বিপথগামী সদস্যরা কিছু দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্মম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে তাণ্ডব চালায়।
তাদের সেই তাণ্ডবে তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালকসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা এবং নারী ও শিশু ছাড়াও আরও ১৭ জনকে হত্যা করা হয়। দীর্ঘ ১১ বছরেও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি পিলখানা ট্র্যাজেডির দিন নিহতদের স্বজনরা।
কি হয়েছিল সেদিন?
হাইকোর্টে জমা হওয়া পিলখানা ট্র্যাজেডি মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ছিল তৎকালীন বিডিআরের বার্ষিক দরবারের দিন। সকাল ৯টায় সদর দফতরের দরবার হলে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সেদিন ওই দরবারে উপস্থিত ছিলেন মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, উপমহাপরিচালক (ডিডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএ বারী, বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাসহ বিডিআরের বিভিন্ন পদের সদস্যরা। সরকারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে, ওই দিন দরবারে উপস্থিত ছিলেন ২ হাজার ৫৬০ জন।
দরবার শুরুর পর মহাপরিচালকের বক্তব্য চলাকালে সকাল ৯টা ২৬ মিনিটে মঞ্চের বাঁ দিকের পেছন থেকে দু’জন বিদ্রোহী জওয়ান অতর্কিতে মঞ্চে প্রবেশ করেন, এদের মধ্যে একজন জওয়ান ছিলেন সশস্ত্র। শুরু হয়ে যায় বিদ্রোহ। দরবার হলের বাইরে থেকে গুলির শব্দ ভেসে আসে।
কিছুক্ষণের মধ্যে লাল-সবুজ রঙের কাপড়ে নাক-মুখ বাঁধা বিদ্রোহী জওয়ানরা দরবার হল ঘিরে গুলিবর্ষণ শুরু করেন। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্রোহীরা কর্মকর্তাদের দরবার হল থেকে সারিবদ্ধভাবে বের করে আনেন। ডিজির নেতৃত্বে কর্মকর্তারা দরবার হলের বাইরে পা রাখা মাত্র মুখে কাপড় ও মাথায় হলুদ রঙের হেলমেট পরা চারজন তৎকালীন বিডিআরের ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদকে লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করেন। ব্রাশফায়ারে ডিজির মৃত্যুর পর আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়।
বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে হত্যার পর পিলখানার ভেতরে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে থাকে বিপথগামী বিডিআর জওয়ানরা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট ছাড়া হয়। কিন্তু বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণে কর্ণপাত না করে উল্টো হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে প্রায় আধা ঘন্টা ধরে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। সন্ধ্যায় পিলখানার বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের লাশ সরিয়ে ফেলা হয়।
২৬ ফেব্রুয়ারি বেলা আড়াইটায় টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারিত জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণ করে ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষনের পর বিদ্রোহী জওয়ানরা অস্ত্র সমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে বিদ্রোহীরা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুনের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে অস্ত্র সমর্পণ শুরু করেন।