শনিবার ● ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » ভোটার হয়ে ভোট দেব, দেশ গড়ায় অংশ নেব
ভোটার হয়ে ভোট দেব, দেশ গড়ায় অংশ নেব
মো. সাখাওয়াত হোসেন :: ২ মাচ জাতীয় ভোটার দিবস। গত বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়ের সাথে সংগতি রেখে এবারের বিষয়টিও বেশ গুরুত্ব বহন করে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার সম্পর্ক জনগণকে উদ্বুদ্ব করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মত ভোটার দিবসটি ১ মার্চ পালিত হলেও গত ১৫ জানুয়ারী মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের পরিপত্রের মাধ্যমে ‘খ’ শ্রেণিভূক্ত দিবস হিসেবে এবার ০২মার্চ ‘’জাতীয় ভোটার দিবস ’’প্রতিপালিত হচ্ছে। ১৯৫০ সালের ২৫ জানুয়ারী ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কারণে ভারত প্রতি বছর ২৫ জানুয়ারী ভোটার দিবস পালন করে থাকে। তাছাড়া পার্শ্ববতী বেশ কয়টি রাষ্ট্রে ভোটার দিবস পালিত হ যেমন পাকিস্তান৭ ডিসেম্বও শ্রীলঙ্কা ১ জুন ভুটান ১৫ সেপ্টেম্বর নেপাল১৯ ফেব্রয়ারী আফগানিস্থান ২৬ সেপ্টেম্বও ভোটার দিবস পালন কওে থাকে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হলেও স্বাধীনতার প্রতি মর্যাদা প্রদানের লক্ষে সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্বাচন কমিশন ভোটার দিবস অগ্নিঝড়া মার্চ মাসে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ফোরাম অব ইলেকশন বডি অব সাউথ এশিয়া (ফেমবোসা) এর ৪র্থ সভার রেজুলেশনে অন্তর্ভূক্ত করার কারণে ভোটার দিবসের ঘোষনা প্রদান করা হয়। দিবসটি প্রতিপালনের জন্য সভাযাত্রা, ফেস্টুন, বরনাঢ্য আয়োজন সহ রাষ্টীয়ভাবে ভাব গাম্ভীর্য়র মধ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়। দেশের প্রত্যেক যোগ্য নাগরিক কে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করে একটি সঠিক, নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য ভোটার তালিকা করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ব শর্ত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৯, ১২১ এবং ১২২ নং অনুচ্ছেদে ভোটার তালিকার ব্যাপারে স্পস্ট নির্দেশনা রয়েছে। ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ এর ধারা ১১ এবং ভোটার তালিকা বিধিমালা ২০১২ এর ২৭ বিধি মোতাবেক ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয় হালনাগাদের পর ২০২০ সালে দেশের মোট ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৯৬ লাখ ০৬ হাজার ১৮৭ জন ।তস্মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫কোটি ৫৩ লাখ ২৫ হাজার ২৯২ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৪২ লাখ ৮০ হাজার ৫৪২ জন ।প্রথমবারের মত এ বছর ৩৫৩ জন তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিক হিজরা পরিচয়ে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়েছে ।পূর্ববর্তী ভোটার তালিকা হতে ১৩ লাাখ ৯২ হাজার ২৩৬ জন মৃত ভোটারকে বাদ দেয়া হয়েছে । ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারীতে জন্ম গ্রহণকারীদের তথ্য নেয়া হলেও ১ জানুয়ারী ২০০২ সাল পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদেরকে এবারের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রেখে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ।০২ জানুয়ারী ২০০২ সাল হতে ১ জানূয়ারী ২০০৪ সালে যাদের জন্ম তাদের তথ্য অগ্রিম নেয়া হলেও ১৮ বছর পূর্ণ হলে পরবর্তী তালিকায় তাদেরকে নতুন ভোটার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে নাম প্রকাশ করা হবে ।একজন সঠিক ও যোগ্য ভোটারকে সনাক্ত করনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন পূর্বক ভোটার তালিকায় প্রকাশ করা অতি গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শকাতর ও শ্রমসাধ্য কাজ ।নানাবিধ সীমাবদ্ধতাকে সামনে রেখে ১২টি ধাপ পেরিয়েবাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এ ভোটার তালিকা প্রকাশ করে থাকে ।ভোটার তালিকায় যোগ্য ব্যক্তির নাম অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সাথে সাথে তিনি একজন ভোটাধিকার প্রাপ্ত নাগরিক হিসেবে যেমন আত্ম প্রকাশ করেন তেমনিভাবে এর মাধ্যমে
অন্যান্য নাগরিক সুবিধা পাওয়ার দাড় উন্মোচন হয়। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রনিত এই ছবিসহ ভোটার তালিকার প্রথম ডাটাবেজ তৈরী হয়। তখন থেকে প্রতি বছর নতুন ভোটার অন্তর্ভূক্ত,মৃত ভোটার কর্তন,এবং স্থানান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। ভোটার তালিকার জন্য সংগৃহিত ডাটাবেজ হতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধিনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ একজন যোগ্য নাগরিককে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে একদিকে তাকে যেমন ভোটার হিসেবে সুবিধা দিচ্ছে অন্যদিকে দেশের ২৩ থেকে ২৪ টি নাগরিক সুবিধা পাওযার বিষয়কে সহজ করে দিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো এই দিনে নতুন নিবন্ধিত ভোটারদের হাতে ভোটার সচিত্র পরিচয়পত্র তুলে দেয়। ভোটার দিবসে নতুন ভোটারসহ সকলে নিজ নিজ দেশের সুমহান গণতন্ত্রের আবেদনকে সম্মান জানিয়ে ভোটারদের পবিত্র কর্তব্য পালনের শপথ নেন ।কারণ দেশের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রাখার পাথেয় হলো স্বাধীন,শান্তিপ্রিয়ভাবে ভোট প্রদান। বিশে^র প্রায় ১৯৬ টি স্বাধীন রাষ্ট থাকলেও ইকোনোমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এর প্রতিবেদন অনুসারে পূর্ণ গণতন্ত্র চর্চাকারী দেশ ১৯ টি। বাকি দেশগুলো হাইব্রিডরেজিম ও সৈরতন্ত্রেও অন্তর্ভূক্ত। সারা বিশে^ গণতন্ত্রের মন্দাভাব বিরাজ করছে। রাষ্ট্র গুলোর মধ্যে চীন সৌদি আরবসহ বেশ কিছু রাষ্ট্রে রাজতন্ত্র,একনায়কতন্ত্র প্রচলন থাকলেও অধিকাংশ অধিকাংশ রাষ্ট্রগুলোতেই ভোটাধিকারের মাধ্যমে গণতন্ত্র চালু আছে। বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের প্রতি এ দেশের ভোটারগণ আস্থা অনাস্থার দোলাচলে অবস্থান করলেও দেশ পরিচালনায় এখনও তাদের প্রতি আস্থাশীল। এ কারণে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদানের দিনকে এ দেশের মানুষ উৎসবের দিন মনে করে ।বর্তমানে যদিও ভোট প্রদানকারী ভোটারদের সংখ্যা কমে হতাশাজনক কোঠায় দাড়িয়েছে। বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোর নাগরিকদের ভোট নিয়ে তেমন কৗতুহল নেই। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ^জুড়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবনতি হয়েছে ।প্রযুক্তির ¯্রােতে নিজেদেও গা ভাসিয়ে উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত। এ কারণে ভোটারদের ভোট কেন্দ্র মুখী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে ।যেমন অস্ট্রেলিয়া প্রতিজন ভোটার ভোট না দেয়ার জড়িমানা হিসেবে ১০০ ডলার নির্ধারণ করেছেন। দেশের জনগণকে স্বচ্ছতার সহিত গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বানের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বিভিন্নভাবে চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও কাংখিত লক্ষে পৌছানো সম্ভব হচেছ না। একটি জবাবদিহি মূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে লোহার ব্যালট বাস্ক এর পরিবরতে অর্ধ স্বচ্ছ ব্যলট ব্যালট বাক্সে এর প্রচলন করে। প্রযুক্তিগত ভাবে এগিয়ে যাওয়া বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও গতিশীল করতে ইভিএম এর মত আধুনিক যন্ত্র দিয়ে ভোট প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। তার পরও ভোটকেন্দ্রে ভোটারের কম উপস্থিতি চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। বাস্তবিক ভাবে এর কারণও বের করার চেস্টা করা হচ্ছে। দেশের সুধিজনদের মতে,ভোটারদের আগ্রহ বা উৎসাহ কম ভোটারের ইচ্ছার প্রতিবন্ধকতা বা অনাস্থা,অনিয়মের আশঙ্কা,পরিবহণ সংকট,ছুটির ফাঁদ ইত্যাদি বিষয় গুলোকে দায়ি করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের কাজ ভোটের পরিবেশ তৈরী করা। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশন বলতে একক নির্বাচন কমিশন নয়। প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী এর অন্তর্ভূক্ত। এ সময় কমিশনের প্রতি ভোটারের ভোটাধিকার বাস্তবায়নের যে, আইনি দায়িত্ব বার্তায় তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন এ প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা। যা নির্ভর করে সরকার ও দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সাথে উক্ত সদিচ্ছার সমন্বয় সাধন প্রয়োজন। তবেই কেবল এ ভোটার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় বাস্তবায়ন সম্ভব।
লেখক ও কলামিস্ট : মো. সাখাওয়াত হোসেন
E-mail: [email protected]