রবিবার ● ২৯ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহে করোনায় ঘরবন্দী মানুষ : খাদ্য নিয়ে মধুহাটি ইউপির চেয়ারম্যান জুয়েল ঘরে ঘরে হাজির
ঝিনাইদহে করোনায় ঘরবন্দী মানুষ : খাদ্য নিয়ে মধুহাটি ইউপির চেয়ারম্যান জুয়েল ঘরে ঘরে হাজির
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধ :: ঝিনাইদহে ইতালি, চীন ভারাতসহ অন্যান্য দেশ ফেরত লোকজনের পরিবারকে পর্যবেক্ষনে রেখেছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সাথে জনসমাগম না করতে ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং মানুষকে ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য প্রশাসনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া জেলার ৬৭ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ৭৪৮ সদস্যগণ জনসেতনা সৃষ্টির জন্য নিরলশ কাজ করছেন। অনেক জনপ্রতিনিধি তারা নিজ এলাকার গরীব, কেটে খাওয়া মানুষদের বিবেচনা করে খাদ্য সরবরাহ করতে নিজেরাই হাজির হচ্ছেন। জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানায়, জেলায় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ৩৩৪ জনসহ তাদের পরিবারের ৯৪২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য জনসাধারনকে সচেতন করতে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মিরা জনগণকে ঘরে থাকাসহ করোনা প্রতিরোধে নানা পরামর্শ প্রদাণ করছেন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জেলার লোকজন স্বচেতনতায় এক প্রকার নিজেরাই ঘরে বন্ধি হয়েছেন। সেমোতাবেক ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ২নং মধুহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন জুয়েল বলেন, লোকজনকে সচেতন করতে মাইকিং, লিফলেটসহ নানা ভাবে সচেতন করার কাজ চলছে। এছাড়া যাদেও (গরীব) বাড়িতে বসে থাকলে খাদ্যের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তাদেরকে সাধ্যমত চাল, ডালসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে। সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ইতালি, চীন ও ভারতসহ অন্য কয়েকটি দেশ থেকে প্রবাসীরা ঝিনাইদহে নিজ বাড়িতে এসেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ এমন খবর পেয়ে সে সব স্থানে গিয়ে তাদের স্বাস্থ্য বার্তা মেনে চলে ১৪ দিনের তত্ত্বাবধানে নিজ বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
ঝিনাইদহের ইটভাটায় করোনা ঝুঁকি নিয়ে দলবেঁধে কাজ করছে শ্রমিকরা, অগ্রিম টাকা শোধ করতে ছুটি বন্ধ বিপাকে জেলার ভাটা শ্রমিক
ঝিনাইদহ :: বসির উদ্দিন (৫০), চোখেমুখে বিষন্নতা আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে ইটভাটায় মাটি টানার কাজ করছেন। তার এ আতঙ্ক প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ঝুকির কারনে। তার উপর আবার রয়েছে ৬ সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্নতুলে দেওয়ার দুশ্চিন্তা। রয়েছে ইটভাটা মালিকের দাদনের টাকা পরিশোধের দুশ্চিন্তাও। বসির উদ্দিনের বাড়ি ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে। তার মত একই অবস্থা ভাটা শ্রমিক বিল্পব, কুদ্দুস, বাওলা জিয়াসহ উপজেলার ১৬ ইটভাটার শত শত শ্রমিকের। বিশে^ ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। ইতিমধ্যেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন দেশের ৪৮ নর-নারী। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫জন। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের মোকাবিলায় সরকার জনসচেতনতাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯ প্রতিরোধে চলাচল বন্ধ করা হয়েছে গণপরিবহন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, হাট-বাজার ও দোকান পাট। সীমিত করা হয়েছে জনচলাচল। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতেও অনুরোধ করা হয়েছে জনসাধারনকে। ২ জনের অধিক মানুষকে একসাথে চলাচলেও দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। করোনা প্রতিরোধে সরকারের এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এসবই জানেন জীবনের ঝুকি নিয়ে ইটভাটায় কাজ করা ওইসব শ্রমিকরা। তবুও ভাটামালিকের অগ্রিম টাকা পরিশোধ ও পরিবার পরিজনদের মুখে হাসি ফোটানোর তাগিদে থেমে নেই তাদের দলবেঁধে কাজ করা। শনিবার সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে এভাবেই দলবেঁধে কাজ করতে দেখা যায় ভাটা শ্রমিকদের। জানতে চাইলে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের কেষ্টপুর এলাকার ইটভাটা শ্রমিক বসির উদ্দিন জানান, ২ বছর ধরে এখানে মাটি টানা ও ইটতৈরির কাজ করছি। মেয়ের বিয়ের জন্য ৩০ হাজার টাকা মালিকের কাছ থেকে দাদন নিয়েছিলাম। প্রতিদিনের হাজিরার ছয়শত টাকা থেকে দাদনের কিস্তিবাবদ তিনশত টাকা কেটে নেওয়া হয়। বাকি টাকা সংসারের খরচ হিসেবে বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। একদিন কাজ না করলে হাড়িতে ভাত ওঠেনা। তাই জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করছি। ইটভাটা শ্রমিক কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার মাজদিয়ার গ্রামের বাওলা জিয়া বলেন, বাড়িতে একটি টিনের ঘর তুলতে মালিকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়েছিলাম। টাকা শোধ হয়নি তাই মালিক ছুটি দিচ্ছেন না। প্রায় একই অবস্থা সব শ্রমিকের। এবিষয়ে ষ্টোন বিক্সসের মালিক হাজি মকবুল হোসেন বলেন, যদি সরকার ভাটা বন্ধের নির্দেশনা দেই তাহলে শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হবে। তাদের কাছ থেকে লাভছাড়া শুধু অগ্রিম টাকার কিস্তি কেটে নেওয়া হয়। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাফিস সুলতানা বিষয়টি জানানোর জন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অন্যান্য এলাকায় খোঁজ নিয়ে সরেজমিনে ইটভাটাগুলোতে গিয়ে এবিষয়ে প্রয়োজনিয় সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রণন করা হবে।
সর্বচ্চ সতর্কতায় ঝিনাইদহে সেনাবাহিনীর টহল অব্যাহত
কালীগঞ্জে অকারনে বাজারে ঘোরাঘুরি আড্ডাবাজদের বিরুদ্ধে ছত্রভঙ্গ করতে যৌথ অভিযানে লাঠিচার্জ ও জরিমানা আদায়
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরে সেনা, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময়ে অকারনে বাজারে ঘোরাঘুরি ও আড্ডাবাজদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করা হয়। এ খবরে মানুষের দৌড়াদৌড়িতে নিমিশেই ফাকা হয়ে পড়ে শহর। শুক্রবার বিকালে আকস্মিকভাবে শহরের মেইন বাজার সহ প্রধান প্রধান গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে এ অভিযানে নামে সেনাবাহিনীর টহল টিম ও পুলিশ সদস্যরা। এছাড়াও তারা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের বাজার গুলিতেও টহল ও অভিযান চালায়। এ অভিয়ানে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূবর্ণা রানী সাহা, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ হামিদুল হক, কালীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান মিয়া ও থানার সকল অফিসার সহ উপজেলা প্রশাসনের অন্নান্য কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার আকস্মিক যৌথ বাহিনীর সাথে ওই অভিযানে অংশ নেওয়া ইউএনও সূবর্ণা রানী সাহা জানান, মহামারি করোনা প্রতিরোধে সরকারীভাবে বাজার ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে লোকসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপরও কিছু মানুষ নিষেধ অমান্য করে বাজারে জড়ো হয়ে জটলা করছে। তাই সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ উপস্থিতিতে বাজারগুলিতে এ অভিযান চালানো হয়। তারা এ অভিযানকালে বাজারের কয়েকটি দোকান ছাড়াও কাগজপত্র না থাকায় কয়েকটি মটরসাইকেল আরোহীকে জরিমানা করা হয়। তাদের এ অভিযান অব্যহত থাকবে বলেও তিনি জানান। এ অভিযান টিমে অংশ নেওয়া যশোর ক্যান্টনমেন্ট সেনা সদর থেকে আগত ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ হামিদুল হক জানান, কালীগঞ্জে অভিযান চালানো ছাড়াও সেনা টহল টিমটি কোটচাদপুর উপজেলাতেও অভিযান চালায়। তারা করোনা প্রতিরোধে মাঠ পর্ষায়ে পরোদমে কাজ করে যাবেন।
করোনাভাইরাস রোধে কালীগঞ্জ পৌরসভা জীবানুনাশক স্প্রে ছিটাচ্ছে
ঝিনাইদহ :: করোনাভাইরাস বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করেছে। বহু মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হাজার হাজার মানুষের প্রান ও হারাতে হয়েছে এই ভাইরাসের কারণে। এই ভাইরাসের হাত থেকে পৌরবাসীকে রক্ষা করতে শহরে জীবানুনাশক স্প্রে করছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভা। শনিবার দুপুর ১টার দিকে শহরের মেইন বাস্ট্যান্ড এলাকায় স্প্র্রে কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম। এ সময় কালীগঞ্জের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, শনিবার থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে শহরের প্রত্যেকটি সড়কে জীবানুনাশক স্প্রে করা হবে। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কালীগঞ্জ পৌরবাসীর যেকোন সহযোগিতা কর্তৃপক্ষ করবে।