সোমবার ● ৩০ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » নওগাঁ » করোনা : প্রশাসনের নজরদারিতে জনশূণ্য আত্রাইয়ের হাট-বাজার
করোনা : প্রশাসনের নজরদারিতে জনশূণ্য আত্রাইয়ের হাট-বাজার
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: নোভেল করোনা (কোভিড-১৯) ভাইরাস মোকাবেলায় সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ হয়ে গেছে আহসানগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে চলাচল করা সব ধরনের ট্রেন। সেইসাথে উপজেলার সব খাবার হোটেল, রেস্তোরা, চায়ের দোকান, ছোট-বড় অনেক যানবাহন এবং বন্ধ রাখা হয়েছে হাট ও এনজিওর কিস্তি আদায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে তেমন বের হচ্ছে না। উপজেলা সদর নওদুলী, বান্দাইখাড়া , ব্রজপুর, মির্জাপুর, সমসপাড়া বাজার, আহসানগঞ্জ স্টেশনসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা যায় মুদি, কাঁচা বাজার, ফলের দোকান ও ফার্মেসি/ওষুধের দোকান ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। কোথাও নেই কোনো গণজমায়েত।
এ ছাড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে গত ২৩ মার্চ জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত এক জরুরী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সে মোতাবেক উপজেলা প্রশাসন প্রতিনিয়ত এসব মেনে চলতে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার বেশ কিছু গ্রামে গুজব ছড়িছে পড়ছে ‘ফ্রিজে মাছ ও মাংস রাখা যাবে না, যদি কেউ রাখে পুলিশ এসে ফ্রিজ ভেঙে ফেলবে’। এমন অবস্থায় অনেকে ফ্রিজের মাছ-মাংস বের করে অন্যত্র সরিয়ে রাখছেন। আবার কেউ আতঙ্কে একাধিকবার ফ্রিজ ধুয়ে মুছে পরিষ্কারও করে ফাঁকা করে রাখছেন। আর এসবের কারণ হিসেবে তারা বলছেন ফ্রিজ থেকে নাকি করোনা ছড়িয়ে পড়ছে।
আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোসলেম উদ্দিন বলেন, করোনা প্রতিরোধে মানুষের গণজামায়েত এরাতে প্রতিনিয়ত পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে। এমনিতেই সাধারণ মানুষ করোনা নিয়ে আতঙ্কে আছে। এর ওপর নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে এসব মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রোকসানা হ্যাপি জানান, বর্তমান বিশ্বে নোভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি আকার ধারন করেছে। আমরাও তার বাহিরে নই। তাই আমরা যদি পূর্ব থেকে এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক ও সচেতন হই তাহলে আমাদের দেশে করোনার আক্রমণ তেমন প্রকট হবে না। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে বিদেশ ফেরত আরো ১৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয় এবং ১৭ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত বিদেশফেরত ১৬২ জন নারী ও পুরুষকে করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য হোম কোয়ারেন্টিনে পর্যবেক্ষণে রাখার পর ১৪ দিন অতিবাহিত হওয়ায় ৬৩ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৯৯ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.ছানাউল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে কোন আতঙ্ক নয়, হতে হবে সচেতন, কি কি বিষয় অনুসরন করলে ও মানলে করোনা থেকে মুক্ত থাকা যাবে সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতনতামূলক আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এই বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করার জন্য বলা হয়েছে। কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আত্রাইয়ে ঝুঁকি নিয়েই স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মীরা
আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: নওগাঁর আত্রাই উপজেলা হাসপাতালে করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য নেই প্রয়োজনীয় উপকরণ। জেলার সিভিল সার্জনের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পারসোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) গ্লাভস ও জীবাণুনাশকের চাহিদা বাড়ানো হয়েছে।
নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলা প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস। এসব মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে প্রতিনিয়ত আসেন উপজেলা সদর হাসপাতালে। বর্তমানে চারদিকে বিরাজ করছে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক। এই পরিস্থিতির মধ্যেও হাসপাতালের নার্স, চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উপকরণ ছাড়াই দিচ্ছেন স্বাস্থ্যসেবা। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, তেমনি সাধারণ মানুষের মাঝেও ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। হাসপাতালে প্রতিদিনই জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। এ অবস্থায় রোগী ও তাদের সংস্পর্শসহ প্রবাসীদের আগমনে বিরাজ করছে ভয় আর উৎকন্ঠা। বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত পিপিই ছাড়া কাজ করা অনেকটাই ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন তারা।
এ ব্যাপারে আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার রোকসানা হ্যাপি জানান, বর্তমান বিশ্বে নোভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি আকার ধারন করেছে। আমরাও তার বাহিরে নই। তাই আমরা যদি পূর্ব থেকে এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক ও সচেতন হই তাহলে আমাদের দেশে করোনার আক্রমণ তেমন প্রকট হবে না। তাই এই ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে হাসপাতালের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ উপজেলায় বর্তমানে ৪২জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ৪২জনের প্রত্যেকেই বিভিন্ন দেশ থেকে সম্প্রতি দেশে এসেছেন। তার মধ্যে ১২জনের হোম কোয়ারেন্টাইন দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়েছি। এতে আতঙ্কের কিছু নেই। জননিরাপত্তার স্বার্থে তাদের সবাইকে প্রায় দু’সপ্তাহ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে থাকতে হবে। ১৪দিনের মধ্যে যদি তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে কোন আতঙ্ক নয়, হতে হবে সচেতন, কি কি বিষয় অনুসরন করলে ও মানলে করোনা থেকে মুক্ত থাকা যাবে সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতনতামূলক আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এই বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের বিভিন্ন স্থানে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতামূলক সাইনবোর্ডও স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও পরিস্কার-পরিছন্ন থাকা করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার আরেকটি অন্যতম বিষয়। তাই পুরো হাসপাতালকে পূর্বের চেয়ে বর্তমানে অনেক পরিস্কার-পরিছন্ন রাখা হচ্ছে সব সময়। এছাড়াও হাসপাতালে আসা সকল মানুষকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে। সতর্কতা সংকেত হিসেবে প্রতিটি এলাকায় গঠন করা হয়েছে মনিটরিং সেল।
নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: নওগাঁর আত্রাই উপজেলার লালুয়া গ্রামে আত্রাই নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে আবির (১১) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবির উপজেলার লালুয়া গ্রামের চাদু প্রামানিকের ছেলে।
ঘটনার পর আত্রাই থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোসলেম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি মোসলেম উদ্দিন বলেন, দুপুরে ডুবে যাওয়া শিশু আবিরকে আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। এ সময় আবিরকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরে আবির মাছ ধরার জন্য বাড়ির পাশে আত্রাই নদীতে নামে। কিন্তু নদীর ধারে ডুব দিয়ে মাছ ধরার এক পর্যায়ে পানির নিচে থাকা সেচ পাম্পের পাইপে তার পা আটকে যায়। এ সময় স্থানীয়রা তাকে পানির নিচ থেকে ডুব দিয়ে উঠতে না দেখায় স্থানীয়রা সাথে সাথে তাকে উদ্ধার করে আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। পথ মধ্যেই তার মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।