মঙ্গলবার ● ৩১ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » সুন্দরবনে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’বাহিনী প্রধান ফারুক নিহত অস্ত্র উদ্ধার আহত দুই র্যাব সদস্য
সুন্দরবনে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’বাহিনী প্রধান ফারুক নিহত অস্ত্র উদ্ধার আহত দুই র্যাব সদস্য
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: সুন্দরবনে র্যাবের সাথে জলদস্যু ফারুক বাহিনীর মধ্যে বন্দুক যুদ্ধে বাহিনী প্রধান ফারুক নিহত হয়েছে। এসময়ে দুজন র্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে পুর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জের হারবাড়ীয়া সংলগ্ন খালের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। অস্ত্রসহ নিহত জলদস্যুর লাশ মঙ্গলবার দুপুরে মোংলা থানায় হস্তান্তর করেছে বলে জানায় র্যাব-৬। তবে বনজীবি ও জেলেদের নিরাপত্তা এবং দস্যু দমনে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে র্যাবের নিয়মিত টহলদান কালে এঘটনা ঘটে। লাশ হস্তান্তরের পরে ময়না তদন্তের জন্য তা মর্গে প্রেরন করা হবে বলেও র্যাব জানান।
র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লে: কর্ণেল রওশন ফিরোজ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নিহত দস্যু ফারুক খুলনার দাকোপের কলাবগি এলাকার আকবর মোড়লের ছেলে। তিনি আরো জানান, পূর্ব সুন্দরবনের মোংলার চাঁদপাই রেঞ্জের কোদাল্লিয়া খালে সোমবার গভীর রাতে একদল দস্যু জেলেদের জিম্মি করে বিকাশের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করছিল। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব সদস্যরা ওই এলাকায় অভিযান শুরু করেন।
র্যাব-৬ এর (খুলনা) সুত্রে জানা গেছে,সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০১৮ সালের ১লা নভেম্বর সর্বশেষ আত্মসমর্পনের মাধ্যমে সুন্দরবনকে জলদস্যু ও বনদস্যু মুক্ত ঘোষনা করেছেন। সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত রাখতে র্যাব-৮ ও ৬ নিয়মিত টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
তার পরেও পুর্ব সুন্দরবনের চরাপুটিয়া,হারবাড়িয়া. মরা পশুর, জোংড়া ও দুবলারচরসহ বেশ কিছু এলাকা থেকে গত দুই থেকে তিন মাস ও চলতি মাসে নতুন করে ছোট ছোট দস্যু বাহিনী তৈরী করে জেলে বহরে হামলা ও মুক্তিপন, ট্রলারে মাছ ও মালামাল ভাংচুর লুটতরাজ করে দস্যু বাহিনীর সদস্যরা। ওই সমস্ত জেলেদের মুক্তিপনের দাবিতে অপহরনের চেষ্টা করে জলদস্যু ফারুক বাহিনীর সদস্যরা। তারা জেলে বহরে হামলা,মারধর ও লুটপাট চালিয়ে প্রায় লক্ষ লক্ষ টাকার ইলিশ এবং অন্যান্য মাছসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নেয় এ দস্যু গ্রুপটি। এছাড়াও বনের অন্যান্য জায়গার বেশ কিছু এলাকা থেকে জেলের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপন নিচ্ছে দস্যুরা। তাই চলতি ফেব্রয়ারী ও মার্চ মাস থেকে জেলেদের মুক্তিপন ও দস্যুদমনে অভিযানে নামে র্যাব। র্যাব-৬ এর সদস্যরা এরই ধারাবাহিকতায় নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৩১ মার্চ মঙ্গলবার ভোরে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কোদালিয়া খালে অভিযান চালায় র্যাব-৬ এর সদস্যরা। তারা অভিযানের টহল দেয়ার সময় ওই এলাকার বনের ভিতর দস্যুদের আনাগোনা টের পায় এবং দস্যুদের পদচারনা দেখতে পায় র্যাব। র্যাব সদস্যরা সামনের দিকে এগিয়ে গেলে দস্যুদের কথা বার্তার শব্দ শুনে অভিযানকারীরা বনের মধ্যে প্রবেশ করলে সেখানে পূর্ব থেকে অবস্থান নেয়া জলদস্যু ফারুক বাহিনী র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় র্যাবও আত্বরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় আধা ঘন্টা ব্যাপি দুই গ্রুপের সাথে গোলাগুলি চলে। এ পরিস্থিতিতে জলদস্যুরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে র্যাব ও জলদস্যুদের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে উভয় পক্ষের গোলা গুলিতে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাহিনীর প্রধান ফারুক (৩৫)।
গুলি বিনিময়ের পর আভিযানিক দল উপস্থিত জেলেদের সাথে নিয়ে গোলাগুলির এলাকা তল্লাশী শুরু করে। ওই এলাকার বনের মধ্যে তল্লাশী চলাকালীন সময়ে উপস্থিত জেলেরা ১জন গুলিবিদ্ধ জলদস্যুকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্য দুপুরে আহত জলদস্যুকে স্থানীয় মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।এছাড়া ঘটনাস্থলের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে, বিপ্তিভাবে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্র (পাইপগান) কয়েকটি ধারালো রামদা ও বেশ কিছু গুলির খোশা ও তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়। জলদস্যু ফারুক বাহিনীর প্রধান ফারুকের মৃত দেহ এবং উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ অন্যান্য আলামত স্থানীয় মোংলা থানায় র্যাব-৬ এর ডিএডি মোঃ আঃ মতিন বাদী হয়ে মামলা রুজু করে জমা দেয়া হয়েছে বলে জানান র্যাব-৬ এর কর্মকর্তা।
নিহত জলদস্যু ফারুক মোড়ল খুলনা জেলার দাকোপ থানার কলাপাড়া গ্রামের মৃত আকবার মোড়লের ছেলে বলে জানায় র্যাব। তারা আরো জানায়, সুন্দরবনের জলদস্যু-বনদস্যুদের বিরুদ্ধে র্যাব-৬ এর ক্রমাগত অভিযান অব্যাহত থাকবে।