বুধবার ● ১ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » বিপাকে করোনায় কর্মহীন গাইবান্ধার শ্রমজীবী মানুষ
বিপাকে করোনায় কর্মহীন গাইবান্ধার শ্রমজীবী মানুষ
সাইফুল মিলন, গাইবান্ধা :: মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে থমকে গেছে সারাবিশ্ব। সংক্রামক ঠেকাতে লকডাউনে রয়েছে সারাদেশ। এতে কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্নআয়ের মানুষগুলো পড়েছে বিপাকে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারী রূপ ধারণ করায় বাংলাদেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণরোধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে গরিব, দিনমজুর, নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পরিবারের ভরন-পোষণ যোগাতে পারছে না।
গাইবান্ধায় করোনা ভাইরাসের বিধি নিষেধের কারণে গৃহবন্দি হয়ে বিপাকে পড়েছে গাইবান্ধার কর্মহীন দরিদ্র শ্রমজীবি, কৃষিজীবি ও দিনমজুর পরিবারগুলো। কাজ না থাকায় এখন তাদের সাংসারিক চাহিদা মেটাতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি এবং বিভিন্ন সংগঠন থেকে যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম।
করোনা ভাইরাস জনিত কারণে লক ডাউন করায় দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া আতংকে লোকজন এখন ঘরে আবদ্ধ হয়ে থাকায় শ্রমজীবিদের মধ্যে রিক্সা, ভ্যান, অটোবাইক, ম্যাজিক, বাস-ট্রাক ড্রাইভার হেলপারগুলোর আয় নেই বললে চলে। শহর-বন্দর ও গ্রামগঞ্জে চলাচল ও কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসারের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সরেজমিনে গাইবান্ধা জেলা শহরের ক’জন রিক্সা চালক, অটোবাইক ও ভ্যান চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়ায় আয় রোজগার কমে গেছে। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ঘরে খাবার নাই তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় বের হইছি বলে জানান তারা।
দিনমজুর ও কৃষিজীবিদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে এখন কোন কাজ না থাকায় আমরা পেশাদার কৃষি শ্রমিকরা পড়েছি চরম বিপাকে। কারণ এ সময়গুলোতে দিনমজুরীতে অন্যান্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু করোনা ভাইরাস আতংকে সব রকম কাজকর্মসহ নির্মাণ কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কৃষি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, পেশাদার দিনমজুররা কোন কাজ পাচ্ছে না। ফলে দিনের পর দিন কর্মহীন থাকায় অর্থ সংকটে পরিবার-পরিজন এবং দৈন্যন্দিন সাংসারিক চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
এদিকে দোকানপাট ও ব্যবসা বাণিজ্য এবং ছোট ছোট কারখানাগুলো এসমস্ত প্রতিষ্ঠানে দিন চুক্তিতে কাজ করা কর্মরত কর্মচারিরাও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবি হকাররা বেচাকেনা করতে পারছে না। শহর-বন্দরে লোকজন না থাকায় তাদের হকারি ব্যবসা একেবারেই চলছে না। এ সকল দিনমজুর, হকার, দোকান কর্মচারি, পেশাজীবি কৃষি শ্রমিক সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস আতংকে লক ডাউনের এই সময়টিতে সহায়তা প্রদান একান্ত অপরিহার্য। এব্যাপারে তারা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও প্রশাসনের কাছে ত্রাণ সহায়তা প্রত্যাশা করছে।
গাইবান্ধায় হোম কোয়ারেন্টাইনে ২০০
গাইবান্ধা :: করোনা ভাইরাসে গাইবান্ধায় নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি। তবে গত ২৪ ঘন্টায় ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর তাদের করোনা ভাইরাস সংক্রমনের কোন প্রমাণ না পাওয়ায় ৭ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে নতুন করে ১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদিকে এখন পর্যন্ত আমেরিকা প্রবাসী দু’জনসহ তার সংস্পর্শে আসা আরও দু’জনসহ মোট ৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে ৩ জন গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেসন ও অপরজন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আইসোলেসনে রয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় ২০০ জন ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। এরমধ্যে সদরে ৪৪, ফুলছড়িতে ৪, সুন্দরগঞ্জে ৪৫, সাঘাটায় ১১, পলাশবাড়িতে ৫, গোবিন্দগঞ্জে ৩৯ ও সাদুল্যাপুর উপজেলায় ৪৩ এবং বগুড়া জেলায় ৯ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। এছাড়া জেলা সদর হাসপাতালে ১ জনকে সন্দেহজনক হিসেবে পর্যবেক্ষনে রাখা হয়।
সিভিল সার্জন ডাঃ এবিএম আবু হানিফ জানান, বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদেশ ফেরত ২০০ ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য কর্মীরা করোনা ভাইরাসের সন্দেহ দেখা দিলেই সন্দেহভাজন রোগীদের রক্ত সংগ্রহ করছে এবং তা দ্রুত পরীক্ষার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করছে। ঢাকা থেকে রক্ত পরীক্ষার ফলাফল না জানা পর্যন্ত সন্দেহজনক রোগীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে যাতে নিয়মের বাইরে না চলে সেজন্য তাদের উপর কড়া নজরদাড়ি রাখা হচ্ছে।
বুধবার জেলা প্রশাসকের এক প্রেস রিলিজে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলার ৭টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভায় ৭ হাজার ৩শ’ দরিদ্র শ্রমজীবি কৃষক পরিবারের মধ্যে ৭৩ মে. টন খাদ্য সামগ্রী ও ৬ হাজার ৯শ’ পরিবারের মধ্যে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়। এছাড়া বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ভান্ডারে ১শ’ ৫০ মে. টন খাদ্য সামগ্রী ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে।