রবিবার ● ৫ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » জাতীয় » সংবাদ সম্মেলনে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রতিক্রিয়া
সংবাদ সম্মেলনে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রতিক্রিয়া
ঢাকা :: বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য সিপিবি’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী কমরেড জুনায়েদ সাকী ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক কমরেড হামিদুল হক আজ ৫ এপ্রিল ২০২০ সকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সংবাদপত্রে দেয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নেয়া পদক্ষেপ হিসেবে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার ১০দিন অতিবাহিত হয়েছে। ইতিমধ্যে সারাদেশের শ্রমজীবী, বস্তিবাসী, হকার, রিকশা চালক, ফুটপাতের ছিন্নমূল, গ্রামের দিনমজুরসহ নিন্ম আয়ের মানুষের জীবনে দুর্বিসহ সংকট নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর গত ২৫ মার্চ এর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে রপ্তানি শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ছাড়া হতদরিদ্র মানুষের জন্য কোন তহবিল বরাদ্দের ঘোষণা ছিল না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, অর্থনীতিবিদ সকলেই দেশের হতদরিদ্রদের জন্য আগামী ৬ মাসের খাদ্য সরবরাহ ও নগদ অর্থ প্রদানের দাবি জানিয়ে আসছিল। মানুষ আশা করেছিল প্রধানমন্ত্রীর আজকের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা ও পদক্ষেপের ঘোষণা থাকবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজকের সংবাদ সম্মেলনে হতদরিদ্রদের খাদ্য ও জীবিকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বরাদ্দের ঘোষণা না থাকায় জাতি হতাশ হয়েছে। আজকেও প্রধানমন্ত্রী ৭২,৭৫০ কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তাতে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পে এবং এসএমই খাতে ৪.৫ ও ৪% সুদে ঋণ সহায়তার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা, ইডিএফ এর জন্য ১২ হাজার ৫০০ কোটি, প্রি শিপমেন্ট এর জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা এবং পোষাক শিল্পের জন্য আগে ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছে।
বিৃবতিতে বলা হয়, দেশের অর্থনীতির ৫০% এর অধিক হলো নন ফর্মাল খাতে। যাদের হিসাব সরকারের খাতায় নাই। যাদের কোন টিআইএন নাম্বার নাই। মুদি দোকানদার, রিকশা গ্যারেজ, পান দোকানদার, ভ্যানগাড়ীতে সবজি বিক্রেতাসহ অন্যন্যরা; এদের অর্থাৎ এরকম কমপক্ষে ২০ লক্ষ মানুষকে গড়ে ৫০ হাজার টাকা সুদমুক্ত ঋণ ১ বছরের জন্য দিলে মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। অথচ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এেেদর জন্য এবং হতদরিদ্রদের খাদ্য ও নগদ অর্থ প্রদানের জন্য যেমন সুনির্দিষ্ট বরাদ্দের উল্লেখ নেই তেমনি দেশের বিশাল ব্যক্তিখাত কৃষির জন্যও সুনির্দিষ্ট কোন বরাদ্দ ঘোষিত হয়নি।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনার প্রভাব ইতিমধ্যে কৃষিতে সংকট তৈরি হয়েছে। ফল, সবজি, ফুল, মৎস চাষীরা, পোল্ট্রি, ডেয়ারী খামারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাদের সুরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ জরুরি।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও সমন্বয়হীনতার জন্য দেশের পোষাক শিল্পের শ্রমিকরা একদিকে হয়রানীর শিকার হচ্ছে এবং আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষিত হলেও পোষাক কারখানা বন্ধ থাকবে কিনা তা মালিকদের উপর ছেড়ে দিয়ে সরকার অনিশ্চয়তা তৈরি করে। পরে আবার কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় শহর থেকে গ্রামমুখী মানুষ বাসে, ট্রাকে, কাভার্ড ভ্যানে, ফেরীতে গাদাগাদি করে বাড়ী ফেরে। মার্চ মাসের বেতন না পাওয়ায় তারা ধার করে বাড়ী যায় আবার ৫ তারিখ কারখানা চালু হবে, কাজে যোগ না দিলে চাকরি থাকবে না সেজন্য চাকরি রক্ষার তাগিদে গতপরশু এবং গতকাল হাজার হাজার শ্রমিক নারী-পুরুষ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পায়ে হেটে, ট্রাকে, কাভার্ড ভ্যানে চড়ে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে আসতে থাকে। আজ সকালে অনেক কারখানায় গিয়ে শ্রমিকরা দেখে কারখানা বন্ধের নোটিশ ঐ শ্রমিকরা আবার পায়ে হেটে, ট্রাকে গাদাগাদি করে বাড়ী ফিরছে। কোথাও কোথাও পুলিশ ট্রাক থেকে তাদের নামিয়ে দিচ্ছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ছে শ্রমিকরা। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রী যিনি আবার করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কমিটির প্রধান তিনি বলছেন দলে দলে মানুষের একবার বাড়ী ফেরা, একবার ঢাকা আসা করোন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। আবার বাণিজ্যমন্ত্রী যিনি কিনা ঐ জাতীয় কমিটির সদস্য তিনি পোষাক শিল্প মালিকদের সাথে সভায় বলছেন প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিয়ে কারখানা খোলা রাখতে পারবেন। সরকারের এহেন দ্বি-চারিতা ও সমন্বয়হীনতার নির্মম শিকার হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের বক্তব্যে এক ধরনের আত্মতুষ্টির বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও গুরুত্ব অনুধাবন করে যেখানে পর্যাপ্ত পরীক্ষাই করা হচ্ছে না সেখানে আত্মতুষ্টিতে না ভেসে বেশি বেশি পরীক্ষা করা এবং প্রতিরোধে উদ্যোগ নেয়ার দিকে মনযোগ দেয়া দরকার।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে একে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে সকল রাজনৈতিক, সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি বাম জোটের পক্ষ থেকে জানানো সত্ত্বেও আজও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তার প্রতিফলন না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য পুনরায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।