শনিবার ● ১১ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ছুটির দাবিতে আজ সকল চা বাগানে মানববন্ধনের ডাক
ছুটির দাবিতে আজ সকল চা বাগানে মানববন্ধনের ডাক
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি :: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় চা বাগান মালিক পক্ষ শ্রমিকদের মজুরিসহ বাগান বন্ধের সিদ্ধান্ত না নেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করার ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন।
আজ শনিবার (১১ এপ্রিল) দেশের সব চা বাগানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ১০ মিনিটের প্রতিবাদ কর্মসূচি ও মানবন্ধন করা হবে বলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার সকালে কাজে যাওয়ার আগে ফাঁড়ি বাগানসহ প্রতিটি চা বাগানে ‘মানববন্ধন’ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি বাগানে চা শ্রমিকদের পক্ষে ১০ জন প্রতিনিধি ১০ মিনিটের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচি পালনে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে অফিস-আদালত সবই এখন বন্ধ। তবে ছুটি নেই চা-বাগানের কর্মীদের। তাই এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে বলে জানান সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী। তিনি বলেন, ১০ এপ্রিল শুক্রবার এ কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। কিন্তু পবিত্র শবে বরাতের কারণে তারিখ পিছিয়ে ১১ এপ্রিল শনিবার নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৬৬টি চা-বাগান রয়েছে। এসব বাগানে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও চা-শিল্প এর আওতার বাইরে পড়ে যায়। অথচ বাগানের শ্রমিকেরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাস করেন। ফলে তাঁদের ঝুঁকি বেশি। এ অবস্থায় বাগানে ছুটি ঘোষণার যৌক্তিকতা তুলে ধরে চা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে চা-বাগানের মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা-সংসদসহ (বিটিএ) বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকার চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। এর প্রতিবাদ জানাতে শনিবার সকালে কাজে যোগদানের আগে সব বাগানে অন্তত ১০ জন শ্রমিক ব্যানার নিয়ে একটি নির্ধারিত স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকবেন।
কমলগঞ্জ উপজেলার মৃর্তিঙ্গা চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির নেতা ধনা বাউরি বলেন, অন্য সবার মতো আমরাও দেশের নাগরিক। এমনিতেই প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা আমরা ঠিকমত পাইনা। সেখানে করোনার মতো রোগ আসলে আমাদের কি হবে তা কল্পনাও করা যায় না। তাই আমাদের নিরাপদ জীবনের স্বার্থে সরকার ঘোষিত ছুটি কার্যকর করা হোক।
চা শ্রমিকরা জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারতের আসাম রাজ্যের ৮৬০টি চা বাগানের কাজ বন্ধ ঘোষণার খবর এলে তারাও এই দাবি তোলেন। নিজ ব্যবস্থায় এবং কিছু কিছু বাগান হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছে তবে তা এত অপ্রতুল যে অধিকাংশ শ্রমিকও সে সুযোগ পাচ্ছেন না। আমরা কাজ করি এক সঙ্গে। বিকেলে যখন পাতা জমা দেই তখন সবাই কাছাকাছি লাইনে দাঁড়িয়ে জমা দেই। এতে একজনের সংক্রমণ হলে সবার হতে পারে। ছুটি দেয়া হলে বেতন-ভাতা পরিশোধের বাধ্যবাধকতার অজুহাতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বাগান মালিকরা। তাই আমাদের মজুরিসহ ছুটি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
কমলগঞ্জ উপজেলার কানিহাটি চা বাগানের শ্রমিক নেতা, শমশেরনগর ইউপি সদস্য ও মাসিক চা মজদুর সম্পাদক সীতারাম বীন বলেন, ইতিমধ্যে কমলগঞ্জের সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের চাম্পারায় চা বাগানসহ কয়েকটি বাগানে ঢাকা ফেরত একাধিক ব্যক্তি ঢুকে পড়ছে। তাই আমরা খুবই আতঙ্কের মাঝে আছি। চা বাগানে নির্ধারিত শ্রমিকের সাথে সাথে ওই পরিবারে আরও বেশ কিছু শ্রমিক রয়েছে, যাদের বাগানে কাজ নেই তারা, ইট ভাঙাসহ বিভিন্ন ধরণের দিনমজুরের কাজ করেন। এখন সব কিছু বন্ধ থাকায় তারা বেকার হয়ে ঘরবন্দি। তাদের জন্য সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
তবে বাংলাদেশ চা-সংসদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম বলেন, চা-বাগানে এখন পর্যন্ত কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। করোনার সংক্রমণ রোধে আগে থেকেই বাগানগুলোতে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে বলা হয়েছে। তাদের মাস্ক-সাবান দেওয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজ করতে বলা হয়েছে। আর চায়ের ব্যবসা এমনিতেই খারাপ। ছুটি দিলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এর প্রভাব শ্রমিকদের ওপরও পড়বে। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে চা-বাগানে ছুটি ঘোষণার কোনো নির্দেশনা নেই। এ ব্যাপারে সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা দরকার।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে চা বাগানের শ্রমিকেরা দল বেঁধে কাজে যাচ্ছেন। বাগানগুলোতে করোনা সংক্রমিত হলে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। চা শ্রমিকরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাস করেন। নিত্যপ্রয়োজনে হাটবাজার ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে চলাচল করেন। আমরা সরকার এবং মালিকপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছি কিন্তু কেউই গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় ছুটির দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। সবাই বলছে সরকার নির্দেশ দিলে ছুটি ঘোষণা করা হবে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি আহবান করতে হয়েছে। ইতিমধ্যে মোবাইল ফোনে সব ভ্যালির (কয়েকটি চা-বাগান নিয়ে একটি ভ্যালি গঠিত) সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে কর্মসূচির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী কাছেও চা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তারা আবেদন পাঠাবেন বলে জানান তিনি।
ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরছেন কমলগঞ্জে ৩ জন হোমকোয়ারেন্টানে : আতংকিত এলাকাবাসী
কমলগঞ্জ :: ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু ও আক্রান্ত এলাকা থেকে কমর্রত লোকজন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে তাদের নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। বুধবার রাতে কমলগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ১৫-২০জন ফিরেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার নারায়ানপুর গ্রামে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু ও আক্রান্ত এলাকা থেকে ফেরায় ৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে উপজেলা প্রশাসন। এলাকায় ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে ইউএনও গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। অপরদিকে এদের ফেরত আসার খবরে আতংক বিরাজ করছে গ্রামবাসীদের মধ্যে।
বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ করোনা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত নারায়ানগঞ্জ ও ঢাকায়। সেখানে বিভিন্ন গার্মেন্টস বা অন্যান্য প্রতিষ্টানে কমলগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের কয়েকশত লোক কর্মরত আছেন। নারায়ানগঞ্জ জেলায় করোনা রোগে মানুষের মৃত্যুর খবর ও লকডাউনের কারনে আতংকিত হয়ে রাতের আধারে নারায়ানগঞ্জ শহর থেকে এক কাপড়ে দলে দলে লোকজন পালিয়ে যাচ্ছেন। এমনিভাবে কমলগঞ্জে প্রায় ১৫-২০জন লোক বুধবার রাতে বাড়ি ফিরেছেন। নারায়ানগঞ্জ এলাকা হতে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের সফাত মিয়ার পরিবারে দুইজন ফিরেছেন। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন বিকালেই পুলিশ নিয়ে তাদেরকে হোমকোয়ারেন্টাইনে রেখেছে। তাছাড়া চাম্পারায় চা বাগানে একজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মাধবপুর ইউনিয়নের ভান্ডারীগাঁও গ্রামে নাসির মিয়া নামে একজন এলাকায় ফিরেছেন। ইসলামপুর ইউনিয়নের টিলাগাঁও গ্রামে রিপন মিয়া, সাইফুর মিয়া নামে দুই তরুন নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে ফিরেছেন। একইভাবে সরইবাড়ি, বাঘমারা, পতনঊষার, শমসেরনগরে কিছু তরুন ফিরেছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে নারায়ানগঞ্জ ও ঢাকা থেকে কমলগঞ্জ পৌর এলাকার বড়গাছ, শ্রীনাথপুর গ্রামে আরো চার যুবক তাদের বাড়ি ফিরেছেন।
আলাপকালে উপজেলার মাধবপুর ইউপি সদস্য মো. মোতাহের আলী জানান, বুধবার সকালে তার এলাকায় নারায়ানগঞ্জ থেকে নাসির নামে একজন ফিরেছেন। এতে আতংক বিরাজ করছে গ্রামবাসীদের মধ্যে। প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জেলার করোনা আক্রান্ত এলাকা হতে কমলগঞ্জে লোকজন ফিরছেন এমন সংবাদে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকল হক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। এতে সকল নাগরিকের সহযোগীতা চেয়েছেন এবং এলাকায় কেউ ফিরলে প্রশাসনকে জানানোর পাশাপাশি ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইনে নিজ উদ্যোগে মেনে চলার আহবান জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, করোনা আক্রান্ত এলাকা থেকে কমলগঞ্জে লোকজন আসার বিষয়টি আমরা খবর নিচ্ছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীকেও সচেতন হতে আহবান করা হয়েছে।
কমলগঞ্জে আল-আমিন সমাজ কল্যান পরিষদের অন্যরকম উদ্দ্যোগ
কমলগঞ্জ :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে অসহায় কর্মহীন ও সর্ব স্থরের স্থরের মানুষের জন্য আল- আমিন সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর বাজার মূল্যের অর্ধেক দামে বিক্রয় করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
শুক্রবার (১০এপ্রিল) দুপুর সাড় ৩ টায় আল-আমিন সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি কাজী হারুনুর রশিদের সভাপতিত্বে অর্ধেক মূল্যের খাদ্যদ্রব্য বিক্রির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়, এ সময় উপস্থিত ছিলেন আল আমিন সমাজ কল্যান পরিষদের সাধারন সম্পাদক আব্দুস সামাদ।
আলাপকালে আল-আমিন সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি হারুনুর রশীদ জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষরা বিপাকে পড়ায় তাদের সহযোগিতার জন্য বাজারের মূল্যের চেয়ে অর্ধেক মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বিক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি আমরা । যতক্ষণ পর্যন্ত করুনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসে ততদিন পর্যন্ত আমাদের এই উদ্যোগ চলমান থাকবে। আমরা চাল, পেঁয়াজ, তেল সহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী গুলো প্রতি পরিবারকে সপ্তাহে একবার করে কিনে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, আল-আমিন সমাজ কল্যাণ পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম, কাজী ফয়সাল, জীবন আহমেদ, নোমান, মুহিত, বাবলু, আব্দুল্লাহ, ফাহিম, সোহেল প্রমূখ।