সোমবার ● ১৩ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » জাতীয় » করোনা সংক্রমণকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণার মাধ্যমে সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন সর্বদলীয় জাতীয় নেতৃবৃন্দ
করোনা সংক্রমণকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণার মাধ্যমে সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন সর্বদলীয় জাতীয় নেতৃবৃন্দ
ঢাকা :: কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারী বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে এই মহাবিপদকে মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণ ও সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের লক্ষ্যে আজ ১৩ এপ্রিল সোমবার সকাল ১১টায় সর্বদলীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পরামর্শ সভায় “নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে দেশের ক্রম অবনতিশীল করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি, স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা, শ্রমজীবী-হতদরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা, সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা বহাল রেখে বোরো ধানকাটার কাজকে কার্যকর করা, ত্রাণ স্বল্পতা ও তা বিতরণে চুরি-দুর্নীতি-দলীয়করণ দূর করা, সংকট মোকাবেলায় সরকারের সমন্বয়হীনতা ইত্যাদি বিষয়গুলো তুলে ধরেন এবং করোনা সংকটকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে কেন্দ্র থেকে গ্রাম পর্যন্ত সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক মহামারী হিসাবে ঘোষণা করেছে। এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়ছে যা জাতীয় মহাদুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বৈশ্বিক মহামারী রুপে আবির্ভুত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পৃথিবীর কোন দেশের পক্ষেই এককভাবে এই সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। এজন্য বৈশ্বিক পারস্পরিক সহায়তা প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই অভিমত প্রকাশ করেছে। তাছাড়া, একটি দেশের সরকারের পক্ষেও নিজ দেশে এককভাবে এই ঘাতক মহামারি মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। আমাদের দেশেও সরকার বা সরকারি দলের একার পক্ষে এ সংকট মোকাবেলা সম্ভব নয়। দেশে এখন একটি অভূতপূর্ব ও গুরুতর ‘জাতীয় দুর্যোগ’ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমনতরো একটি মহাবিপদের মুখে দাঁড়িয়ে দেশের সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি ও ব্যক্তি, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী, বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞ প্রমূখ এবং বিশেষত দেশের ছাত্র-যুব শক্তিসহ ‘গণ-শক্তিকে’ ঐক্যবদ্ধ করে সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের কোন বিকল্প আজ আমাদের সামনে নেই। সরকারকেই আজ দেশের সব সম্ভাব্য শক্তিকে সমবেত করে সমন্বিতভাবে কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য শুরুতে সরকার এই কোভিড-১৯ এর সংক্রমণকে গুরুত্ব দেয় নি, বরং অবহেলা করেছে। ফলে এ সংক্রমণ পুরো ঠেকানো না গেলেও যে নিয়ন্ত্রণ করা যেতো তা হয়নি। এখন পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি নানাভাবে এই দুর্যোগে সাধ্যমত সচেতনতা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু করোনা মহামারির মহাবিপদ মোকাবেলার জন্য আমাদের সম্পদ ও সামর্থ্য দুটোই সীমিত ফলে এই সীমিত সম্পদ ও সামর্থ্যকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানো আজ বিশেষভাবে গুরুত্বপুর্ণ। তাই দেশের সব রাজনৈতিক দল এবং দেশপ্রেমে উদবুদ্ধ সব সামাজিক শক্তি-ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে দ্রুত সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের গুরুত্বের বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই আহ্বান জানানো হলেও সরকার এখনও পর্যন্ত এতে কর্ণপাত করেনি। নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন, এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সরকার দলীয় সংকীর্ণতা পরিহার করে অবিলম্বে এ ব্যাপারে আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
নেতৃবৃন্দ সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের কারখানা বন্ধ না খোলা থাকবে তা নিয়ে সরকার ও মালিক পক্ষের দায়িত্বহীন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের উপর পুলিশী নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানান। সভা থেকে অবিলম্বে মার্চের বকেয়া বেতন শ্রমিকের ব্যাংক হিসেবে প্রদানের দাবি জানান। একই সাথে নেতৃবৃন্দ তথাকথিত গুজব ছড়ানোর নামে অর্ধশতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি করেন। নেতৃবৃন্দ প্রবাসী শ্রমিক যারা বিদেশে আছে তাদেরকে দুতাবাসের মাধ্যমে সুরক্ষার দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ চিকিৎসা-স্বাস্থ্যসেবায় সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ ও পরিকল্পনা তুলে ধরা, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান, ঝুঁকি ভাতা ও বীমার ব্যবস্থা করা, হতদরিদ্র সকলের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, মধ্যবিত্তদের স্বল্প মূল্যে রেশন প্রদান, ত্রাণ বিতরণে শুধু প্রশাসন ও দলীয় লোক নয় সমাজের সকল অংশকে যুক্ত করা, কৃষিতে বরাদ্দ বাড়ানো, প্রান্তিক-গরীব ও মাঝারি কৃষকদের ঋণ নয়, সহায়তা প্রদান, শিল্পে ঘোষিত প্রণোদনার সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি-ব্যক্তি-গোষ্ঠীসহ সর্বস্তরের জনগণকে করোনা সংকট মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার জন্য এবং দেশ ও দেশবাসীকে ‘করোনা মহামারীর মহাবিপদ’ থেকে উদ্ধারের জন্য ‘জাতীয়ভাবে’, এবং ‘স্থানীয়ভাবে’ জেলা-উপজেলা, গ্রাম পর্যন্ত সমন্বিত উদ্যোগ সম্প্রসারিত করার এবং গণতদারকির মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান। সভায় রাষ্ট্র ও সরকারকে জনগণের এ উদ্যোগে সহযোগিতার আহ্বান জানান।”
বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ এর সঞ্চালনায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের আহ্বানে এই সর্বদলীয় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দ টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণ ফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, সিপিবির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব, বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব) সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, জাতীয় গণ ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক কমরেড টিপু বিশ্বাস, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী)র সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়জুল হাকিম লালা, ঐক্য ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএমএ সবুর, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসবাদী)-র মানস নন্দী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, গণ ফোরামের নেতা সুব্রত চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক, গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন নাসু, সোনার বাংলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ। আরো উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম, সিপিবি প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল্লাহ কাফি রতন, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আকবর খান, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, জলি তালুকদার, বাসদ নেতা জুলফিকার আলী, কমিউনিস্ট ইউনিয়নের ইমাম গাজ্জালী ও বাসদ (মাহবুব) মহিন উদ্দিন চৌধুরী লিটন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।