মঙ্গলবার ● ১৪ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » করোনার প্রকোপে প্রাণহীন নববর্ষ : এই যেন অন্য রকম ১লা বৈশাখ
করোনার প্রকোপে প্রাণহীন নববর্ষ : এই যেন অন্য রকম ১লা বৈশাখ
অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই প্রতিনিধি :: বাঙ্গালী জাতির সবচেয়ে বড় প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। প্রতিবছর এই দিনটি কবে আসবে, তারই প্রহর গুনতে থাকে সব বাঙ্গালীরা। কেননা এই উৎসবটি বাঙ্গালীজাতির জীবনে এক অবিছেদ্দ অংশ ও বটে। আজকের এই দিনে বাঙ্গালীরা সবাই হিংসা বিদ্বেষ ভুলে একাকার হয়ে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে উদযাপন করে পহেলা বৈশাখ। সবার মুখে মুখে কেবল একটি গানই শোনা যায় “এসো হে বৈশাখ এসো এসো”। এই গানটি শুনলে যেন পহেলা বৈশাখের আমেজ টা আরো দ্বিগুন করে তোলে। কতই না আয়োজনের মধ্যে দিয়ে এই দিনটি বাঙ্গালীরা উদযাপন করে। কিন্তু এইবারের পহেলা বৈশাখে নেই কোন আয়োজন, নেই কোন আনুষ্টানিকতা, কোথাও দেখা যাচ্ছেনা নতুন পোশাক পড়ে নতুন সাজে শিশু, কিশোর, তরুণ তরুনী, বয়োজ্যেষ্ঠদের পদচারনা। কোথাও শোনা যাচ্ছেনা বাঙ্গালীর প্রাণের সেই পহেলা বৈশাখের গানটি। সবই নিস্তব্ধ, শুনশান নিরবতা। কোথাও কোন আনন্দ আমেজ নেই।
করোনা ভাইরাস বিচরণ করছে পুরো বিশ্বে, এই ভাইরাসের প্রকোপে চলছে দেশে দেশে মৃত্যু মিছিল। বাংলাদেশেও এর ভয়াবহতা রূপ নিচ্ছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে একমাত্র উপায় বাড়িতে অবস্থান করা। যার প্রেক্ষিতে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক বাতিল করা হয়েছে পহেলা বৈশাখের সব আনুষ্ঠানিতা এবং ডিজিটাল পদ্বতিতে এই উৎসব উদযাপনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ কেউ বাইরে বের না হয়ে নিজ নিজ বাসায় থেকে পরিবারের সাথে উদযাপন করছে দিনটি।
তারই ধারাবাহিকতায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কাপ্তাইয়েও নেই কোন পহেলা বৈশাখের আমেজ, নেই কোন আয়োজন। গতবছরও এই সময়ে কাপ্তাইের এমন কোন এলাকা ছিলোনা, যেখানে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান উদযাপন হয়নি। কারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই কাপ্তাই হলো সম্প্রতির মিল বন্ধনের একটি জনপদ। যেখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সহবাস লক্ষ্য করা যায় । সকল ধর্মের, সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এই দিনটি উদযাপন করতো জাঁকজমকপূর্ণভাবে। যার মধ্যে অন্যতম আয়োজন ছিলো উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে র্যালি, পান্তা ইলিশ খাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ নানা আয়োজন। অপরদিকে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী উৎসব সাংগ্রাই, জল-খেলা, বিষু, বিজু সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হতো পাড়ায় পাড়ায়। এছাড়াও কাপ্তাই নৌবাহিনী, কাপ্তাই বিজিবি, পুলিশ সহ বিভিন্ন সংগঠনের এত আয়োজন থাকতো সকলকে এনে দিতো প্রাণের আনন্দ। কিন্তু এইবার করোনার প্রকোপে সবই বাতিল ঘোষনা করা হয়েছে। নেই কোন আয়োজন, নেই কোন আনুষ্ঠানিকতা। চলছে শুধু কেবল নিরবতা স্তব্ধতা। এদিকে এমন সময়ে কাপ্তাইের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে থাকতো পর্যটকের ভিড়। কিন্তু আজ প্রত্যেকটি স্পট পর্যটক শূণ্য। করোনা প্রকোপে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী বন্ধ রয়েছে স্পট গুলো।
কাপ্তাই উপজেলার কেপিএম এলাকায় বসবাস করে রাঙামাটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নওশীন শরীফ তিথি, বিথি সরকার, শাহারীয়ার আহমেদ, সিজান চৌধুরী জানান, প্রতিবছর বন্ধু-বান্ধবীকে নিয়ে পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে কাটানো হতো কিন্তু এইবার তা আর হচ্ছেনা। করোনা ভাইরাসে প্রকোপে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ডিজিটাল পদ্ধতিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই সবাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করছি।
এদিকে কাপ্তাইয়ের শিল্পকলা একাডেমির শিল্পি রওশন শরীফ তানি, মংচাই মারমা, জ্যাকলিন তনচংগ্যা জানান, প্রানের উৎসব বাংলা নববর্ষে প্রতিবছর নানা আনুষ্ঠানিকতায় থাকতো, আমরা সকলে অংশ নিতাম সেই সব অনুষ্ঠানে। কিন্ত মহামারি করোনার কারনে এই বছর আমরা ঘরে বসেই উৎসব পালন করছি, তাই সকলের মন খারাপ।
এই বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল জানান, সরকারি বিধি নিষেধ এর কারনে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতকরনে সকলকে ঘরে বসে বাংলা নববর্ষ পালন করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
পরিশেষে সকল বাঙ্গালীর এখন ঘরে বসে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের পাশাপাশি একটি চাওয়া, মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। যেন খুব দ্রুত এই মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে পৃথিবীর অন্ধকার কেটে আবার নতুন সুর্যের আলোতে আলোকিত হবে সবকিছু, এটাই সকলের প্রত্যাশা।