মঙ্গলবার ● ১৪ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » অবশেষে মোরেলগঞ্জে ৪শ’বাড়িতে আবারো লাল পতাকা
অবশেষে মোরেলগঞ্জে ৪শ’বাড়িতে আবারো লাল পতাকা
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির,বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে লক ডাউন উপেক্ষা করে ঢাকা নারায়নগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৪ শ’ লোকের বাড়িতে নতুন করে আবারো লাল পতাকা উঠানো হয়েছে। রাখা হয়েছে হোম কোঢারেন্টাইনে। প্রতিটি বাড়ি নজরদারিতে রয়েছে গ্রাম পুলিশ। এসব বাড়িতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যাচ্ছে মেডিকেল টিম।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টানা ২৫ দিনের লক ডাউনে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরেও নানাভাবে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন নিজ বাড়িতে আসছে। গত এক সপ্তাহে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন সহ পৌরসভায় বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন পেশার মানুষ। আর এ কারনে প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও গ্রাম প্রতিরক্ষা কমিটিকে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তি ও বাড়ি নজরদারিতে রাখার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন।
এ পর্যন্ত তেলিগাতি ইউনিয়নে ৩০জন, পঞ্চকরণ ৩০, জিউধরা ৩৭, খাউলিয়া ২৫, পুটিখালী ১৬, বলইবুনিয়া, ৭০, রামচন্দ্রপুরে ২৯, বহরবুনিয়া ১৯, হোগলাবুনিয়া ২৩, দৈবজ্ঞহাটী ২৯, নিশানবাড়িয়া ১৩, হোগলাপাশা ৪, বনগ্রাম ২৩, বারইখালী ১৫, চিংড়াখালী ২৫, সদর ইউনিয়ন ১১ ও পৌরসভায়সহ সর্বমোট ৪ শতাধিক মানুষ স্পর্শকাতর এলাকা থেকে তারা গভীর রাতে প্রবেশ করে বিভিন্ন গ্রামে তারা এখন অবস্থান করেছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন।
চিংড়াখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলী আক্কাস বুলু জানান, তার ইউনিয়নে বহিরাগত অনেকে পরিবার পরিজনের সুরক্ষায় স্ব-উদ্যোগে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে রাজি হয়েছে। তাই তাদের একটি সাইক্লোন কাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষনিক পাহারায় রয়েছে গ্রাম পুলিশ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন মুফতি বলেন, মোরেলগঞ্জে অনুপ্রবেশকারিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মেডিকেল টিম ওই বাড়িগুলোতে সার্বক্ষনিক নজর রাখছে।পরিবারের লোকজনকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। এদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। হাসপাতালে প্রস্তুত রাখা হয়েছে আইসোলেশন বিভাগ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.কামরুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ২৯০ জনের তালিকা করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে টানানো হয়েছে লাল পতাকা। চিহিৃত বাড়িগুলোতে প্রবেশ ও বাহির নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৪ দিনের হোমকোয়ারেন্টে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাতের আধারে কর্মহীন অসহায় প্রতিটি বাড়িতে খাদ্য নিয়ে যাচ্ছেন ড্রিম এইড ফাউন্ডেশন
বাগেরহাট :: করোনার প্রভাবে সারা দেশের ন্যায় বাগেরহাটের শরণখোলায় রাতের আধারে কর্মহীন অসহায় প্রতিটি বাড়িতে খাদ্য নিয়ে যাচ্ছেন ড্রিম এইড ফাউন্ডেশন। স্থবির হয়ে পড়েছে সব কিছু নিন্ম মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের হাতে কাজ নেই। অনেক পরিবারে ত্রাণের চাল-ডালই একমাত্র ভরসা। আবার এমন পরিবারও রয়েছে যারা লোকলজ্জায় কারো কাছে হাত পাততেও পারছে না। সেসব মানুষের কথা চিন্তা করে সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছে ড্রিল এইড ফাইন্ডেশন নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অসীম দাস ও সাধারণ সম্পাদ মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, তাদের সংগঠনের সদস্যরা করোনার এই দুর্যোগে অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে প্রথমে নিজস্ব অর্থায়নে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে কিছু শুভাকাঙ্খি এই মানবতার সেবায় আর্থিক সহযোগীতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। ১২এপ্রিল থেকে তাদের এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তারা জানান, এপর্যন্ত ৭০পরিবারকে এই মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রথমে ওইসমস্ত পরিবারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর পর রাতের আধারে তাদের সেচ্ছাসেবকরা নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি সাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাদের মানবিক সেবা অব্যাহত থাকবে।
সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতকরণে‘এক দোকানে এক ক্রেতা’ হাটের উদ্বোধন
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের চিতলমারীতে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতকরণে‘এক দোকানে এক ক্রেতা’ হাটের উদ্বোধন করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মেনেই এ হাট বসবে। শেরে বাংলা ডিগ্রী কলেজ মাঠে সপ্তাহে’র শনি ও বুধবার মিলবে এ হাট। চলবে সকাল ৬ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলাচিতলমারী নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চিতলমারীউপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম জানান, সমাজের প্রান্তিক সবজি চাষি ও মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কথা ভেবে এ হাটের উদ্বোধন করা হয়েছে। এ হাটের দোকান গুলো সামাজিক নিরাপত্তা মেনেই চলবে। প্রতিটি দোকান ১০ ফুট বাই ১০ ফুট। এক দোকান থেকে আরেক দোকানের দূরত্ব ২০ ফুট এবং এখানে এক দোকান একজনে পরিচালনা করবে। আর এক এক জন করে ক্রেতা আসবে।
সুন্দরবনে করোনা বিধি-নিষেধ না মেনে নদ-নদীতে চিংড়ির পোনা আহরণ করছেন জেলেরা
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির সুন্দরবন থেকে ফিরে : সুন্দরবনে করোনা বিধি-নিষেধ না মেনে নদ-নদীতে চিংড়ির পোনা আহরণ করছেন জেলেরা । বাগেরহাটের মোংলা বন্দরকে করোনামুক্ত রাখতে জরুরী সেবা ব্যতীত সব ধরণের যন্ত্র চালিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছে নৌ-বাহিনী ও পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু এখানকার লোকজন বাসায় অবস্থান করাতো দুরের কথা বাজার করতে এসেও নিরাপদ সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা করছেন না। অবশ্য প্রশাসন ইতিমধ্যে কাঁচা বাজার অন্যত্র সরিয়ে খোলা জায়গায় নিয়েছে।
এ ছাড়া সরকারের বিধি-নিষেধ না মেনে সুন্দরবনের নদ-নদীতে চিংড়ির পোনা আহরণ করছেন জেলেরা। মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি এলাকার
প্রান্তিক জেলেরা বলছেন, পেটের দায়ে তারা মাছ ধরছেন। সামান্য ত্রাণে দু-তিন বেলার বেশি চলে না। অপরদিকে মোংলা শিলাপঞ্চলে বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানা চালু থাকলেও সেখানেও কোন সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না বলে খবর পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মানুষকে ঘরে রাখতে বিভিন্ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন।
সচেতনতা মূলক প্রচারণা, ভ্রাম্যমান আদালত, পুলিশ ও নৌ বাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে। শহর, গ্রাম, পাড়া, মহল্লায় যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, জন প্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে
ঘরে থাকার জন্য। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে কর্মহীন মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাদ্য সামগ্রী। তারপরও মানুষ ঘরে থাকছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মোংলা বন্দরশহরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ও হাট-বাজারে সামাজিক দূরত্ব মানছেন না অনেকেই। মোংলা বাজারে কয়েকজন ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে জানেন। কিন্তু বিক্রি ও কেনাকাটা করতে এসে ঠিক মত সে দূরত্ব রক্ষা করতে পারছেন না। আবার বিক্রেতারা দূরত্ব বজায় রাখার কথা বললেও ক্রেতা সমাগম বেশি থাকায় একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব মানছেন
না। দিনের বেলা বিশেষ করে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাংস, মাছ ও কাঁচা বাজারে এসে লোকজন একে অপরের পাশে গাঁ ঘেষে দাঁড়িয়ে বাজার করছেন অবাধে। অবশ্য কাঁচা বাজারের কিছু অংশ প্রশাসন অন্যত্র খোলা জায়গায় সরিয়ে নিয়েছে। তবে বিকেল ৫টার পর শহরের দোকান ও নিত্য পণ্যের দোকান বন্ধ থাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে।
এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের বিধি-নিষেধ না মেনে মোংলার নদ-নদীতে চিংড়ির পোনা আহরণ করছেন জেলেরা। উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি এলাকার প্রান্তিক জেলেরা বলছেন, পেটের দায়ে তারা মাছ ধরছেন। সামান্য ত্রাণে দু-তিন বেলার বেশি চলে না।কয়েকশ নারী পুরুষ দল বেঁধে নিষিদ্ধ নেট জাল দিয়ে নদীতে চিংড়ির পোনা আহরণ করছেন। জেলেরা জানান, করোনা নিয়ে তাদের চিন্তা নাই, তাদের চিন্তা শুধু খাদ্যের জোগান নিয়ে।
এক জেলে বলেন, পেটে যদি না মানে, মৃত্যুর ভয় করে লাভ আছে? মৃত্যু তো একদিন হবে। ঘরে চাল নাই, ছেলেমেয়েদের খাবার কে দেবে? তাই নদীতে নেমে পড়েছি। আরেকজন জেলে বলেন,আজ মাছ না ধরলে, কাল না খেয়ে মরে যাব, ত্রাণ হিসেবে যে দুই কেজি চাল, দুই কেজি আলু আর ডাল পাচ্ছি, তা দিয়ে দুবেলা চলবে, তারপর কী হবে? চিলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো.নজরুল ইসলাম জানান, জেলেদের কোনোভাবেই বোঝানো যাচ্ছে
না। সুন্দরবনের নিষিদ্ধ ঘোষিত যে খাল বা নদীতে জেলেরা অবাধে মাছ ধরছেন, সেখানে সংশ্লিষ্টদের কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন পশুর রিভার ওয়াটার কিপার ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মোংলার সমন্বয়কারী মো. নুর আলম শেখ।
মোংলা জয়মনি নৌ থানার মাত্র আধা কিলোমিটারের মধ্যে নারী পুরুষদের পোনা আহরণ প্রসঙ্গে নৌথানার ওসি মো. আবুল হোসেন শরিফ বলেন, এখানকার জেলেরা খুব গরিব। পেটের দায়ে, অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়েছে। তাদের কী করবো বলেন? তারপরও এসব ঠেকাতে মাঝে মধ্যে আমরা অভিযান চালাচ্ছি।
অপরদিকে মোংলার স্থায়ী বন্দরের শিল্পাঞ্চল এলাকায় কয়েকটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরীসহ বেশ কিছু শিল্প কারখানা চালু থাকলেও এখানেও সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি মানা হচ্ছে না বলে খবর পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাহাত মান্নান জানান, এখানকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরী করতে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব না মানাসহ অকারণে মানুষ বাইরে থাকায় প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। তার পরও কেউ কেউ সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করলে তাদের উপর আইন অনুযায়ী আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।