বুধবার ● ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » জনদুর্ভোগ » সরকারী স্থাপনাসহ হুমকির মুখে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি
সরকারী স্থাপনাসহ হুমকির মুখে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি
সিংড়া প্রতিনিধি :: (৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ : বাংলাদেশ : সময় : বিকাল ৩.৩০মিঃ)
কত্তবার চেয়ারম্যান (মেয়র) আইস্যা দেইখ্যা গেছে, তার লোকেরা ফিত্তা ধইর্যা মাইপ্যা গেছে ৷ কোন কাম হয় নাই ৷ আমরা ঘরের দরজা না লাগাইয়্যা ঘুমাই ৷ ঘুমের মাঝেও আতংকে থাকতে হয় আমাগো ৷ আসল (পূর্বের) চেয়ারম্যান কাম করে নাই ৷ আমাগো ঠকাইয়্যা খালি ভোট নিছে ৷ এবার বান (বাঁধ) না দিলে আর রক্ষা নাই ৷ আমরা নিরাপদে থাইকতে চাই, আমরা বাঁইচতে চাই ৷ কথাগুলো বলছিলেন, নাটোরের সিংড়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের গাইন পাড়া মহল্লায় শতাধিক বাঁশের খুঁটির উপর ঘর নির্মাণ করে ঝুঁকিপূর্নভাবে বসবাসরত শ্রীমতি গোলাপী রানী সুত্রধর ৷ বুধবার সকালে এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন ৷ গোলাপী রানী ওই মহল্লার কাঠমিস্ত্রী অখিল চন্দ্র সুত্রধরের স্ত্রী ৷
এ পরিবার ছাড়াও মহল্লার আকবর আলী ,শামসুল আলম ,চয়েন ,গুপহার প্রাং , দিদার ,অরুণ ,বরুণ , পূর্ণিমা ,হায়দার হোসেন,হাবিব , ধলু , রাধা রানী, শিরীন, মিঠু, শাপলা, রাবিয়া সহ ২০-২৫টি পরিবারের মানুষ দীর্ঘদিন থেকে এভাবেই ঝুঁকিপূর্নভাবে বসবাস করে আসছে ৷ ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার বিজলী, তরুণ, স্বপন,আক্কাছ, গোবিন্দ, কুলপি সহ ১২-১৫টি পরিবার অন্যত্র জায়গা কিনে কেহবা ভাড়া বাড়িতে থেকে জীবন যাপন করছে ৷ নদী তীরবর্তী হওয়ায় বিশেষ করে নিংগইন, বালুভরা, কতুয়াবাড়ী, পারসিংড়া, গোডাউনপাড়া, মহেশচন্দ্রপুর, দমদমা, মসিন্দা, চকগোপাল, গাইনপাড়া ও সিংড়া বাজার এলাকার অবস্থিত পরিবারগুলো অনিশ্চিতভাবে বসবাস করছে ৷ এ সকল এলাকায় দ্রুত বাঁধ নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে ৷
আত্রাই নদীর শাখা গুড়নাই, বারনই ও নারদ নদী বেষ্টিত সিংড়া পৌরসভা এলাকা রক্ষায় শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ এখন এ পৌরসভার নাগরিকদের প্রাণের দাবীতে পরিনত হয়েছে ৷ দীর্ঘদিন থেকে নাগরিকরা এ দাবী করে আসলেও দাবীটি মাথা ব্যথার কারন হয়নি পৌর কর্তৃপক্ষের ৷ বিগত দিনে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোহিতায় এ প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা ও অসহযোগিতার কারনে মুখ থুবরে পড়ে আছে প্রকল্পটি ৷ এতে করে নদী তীরবর্তী কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, মসজিদ, মন্দির, শ্মশান,সিংড়া বাজার, সরকারী হাসপাতাল কোয়াটার এবং প্রাণি সম্পদ অফিস, গোরস্থান হুমকির মুখে রয়েছে ৷ যে কোন সময় ভূমিধ্বসে পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমূহ ধসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে ৷ তাছাড়া প্রাণহানী ঘটতে পারে ঝুঁকিপূর্নভাবে বসবাস করা ওই সকল মানুষের ৷
সিংড়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের গাইন পাড়া মহল্লার কাঠমিস্ত্রী অখিল চন্দ্র সুত্রধর জানান, নদী গর্ভে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার আতংকে রাতের বেলায় চোখে ঘুম আসে না ৷ কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে ৫৫/৬০ বছর যাবত এ মহল্লায় বসবাস করছি ৷ অর্থের অভাবে অন্যত্র জায়গা কেনার সামর্থ নাই ৷ প্রায় দেড় বছর আগে বন্যার সময়ে ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকাকালে আমাদের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে ধসে গিয়েছিল ৷ ১৫বছর যাবত পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক মেয়র শামিম আল রাজি মু.সিহানুর রহমান ৷ কিন্তু আমাদের এ বিষয়ের কোন উন্নতি হয়নি ৷
একই মহল্লায় হায়দার সওদাগর জানান, এ মহল্লার পশ্চিমে ছোট একটি জলাশয় ছিল ৷ তারপর দুপাশের মাটি ভাঙ্গনের কারনে বর্তমানে তা বৃহত আকার ধারণ করেছে ৷ প্রায় দেড় বিঘার মত জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে ৷ বন্যার সময় সবার ঘরে পানি উঠে আসে ৷
জানা গেছে, আত্রাই নদীর শাখা গুড়নাই,বারনই ও নারদ নদী বেষ্টিত সিংড়া পৌরসভা ৷ প্রতি বর্ষা মৌসুমে পৌর শহর ভেঙ্গে ধীরে ধীরে নদীতে মিশে যাচ্ছে ৷ নদীপাড়ের মানুষ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় সবসময়ই তা রক্ষার চেষ্টা করেন ৷ নাগরনদের পূর্বপাড় সংলগ্ন দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারী সেবা প্রতিষ্ঠান অবস্থিত ৷ এরমধ্যে একটি উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস ও অপরটি হাসপাতালের আবাসিক এলাকা৷ ভাঙ্গনের কারনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পশ্চিম প্রাচীরসহ আবাসিক ভবন এখন হুমকির মুখে ৷ ইতোমধ্যে প্রাণি সম্পদ অফিসের ১০শতাংশ জায়গা নদী গর্ভে মিশে গেছে ৷ তাছাড়া নদী ভাঙ্গন ও সুরক্ষা না থাকার কারনে আবাসিক ভবন অনুপযোগী হয়ে পড়ছে ৷ এতে করে জনগণ কাংখিত সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে ৷ তাই নদী তীরবর্তী কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, মসজিদ,মন্দির,শ্মশান, সিংড়া বাজার,সরকারী হাসপাতাল কোয়াটার এবং প্রাণি সম্পদ অফিস,গোরস্থান রৰায় জরুরী ভাবে বাঁধ নির্মাণের দাবী স্থানীয় ভুক্তভোগীদের ৷
এ ব্যাপারে সিংড়া পৌরসভার মেয়র মোঃ জান্নাতুল ফেরদৌস এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, গত ২০ জানুয়ারী তিনি সিংড়া পৌরসভার মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন ৷ তবে এখনো পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পাইনি ৷ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তার নির্বাচনী ইশতেহারে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের উপর অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ৷ তিনি দায়িত্ব পেলে দ্রুত পৌরসভার স্থাপনা, বাড়ি ও সরকারী সম্পদ রক্ষার জন্য তিনি শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন ৷