বুধবার ● ২২ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » কেমন কাটছে কাপ্তাইয়ের শিল্পীদের জীবন ?
কেমন কাটছে কাপ্তাইয়ের শিল্পীদের জীবন ?
অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই প্রতিনিধি :: একটি অদৃশ্য শক্তির কাছে পরাজিত বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট জীব মানুষ । করোনার প্রকোপে পুরো পৃথিবী থমকে পড়েছে। এখন এই অদৃশ্য শক্তি মহামারি করোনাকে পরাজিত করার একটি মাত্রই উপায় সবাইকে ঘরে থাকা। দেশে চলছে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যত লগডাউন। সামাজিক দুরুত্ব রক্ষার্থে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সবকিছু। যারা প্রতিদিন সংগীতকে নিয়ে কাজ করে সময় কাটাতো তারাও কর্মহীন হয়ে আজ গৃহবন্দী। অনেকে হয়তো প্রতিনিয়ত সংগীত পরিবেশন করে সবাইকে মাতিয়ে রাখার পাশাপাশি নিজেদের জীবন জীবিকার্জন করতো এই সংগীত পেশার মাধ্যমে। করোনার প্রকোপে এখন সব অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে তারা হয়ে পড়েছে বেকার, কর্মহীন। বেশীর ভাগ শিল্পীরাই গৃহবন্দী হয়ে বাড়িতে সময় কাটাচ্ছে। কাপ্তাই উপজেলা সংগীতসমৃদ্ধে ভরপুর একটি এলাকা। যেখানে প্রতিনিয়ত কোন না কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকতো এবং কাপ্তাইয়ের শিল্পীরা সেইসব অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখতো। শুধু কাপ্তাই নয় কাপ্তাইের শিল্পীরা কাপ্তাই ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েও তাদের সংগীত পরিবেশন করতো। কিন্তু আজ সবাই গৃহবন্দী।
তেমনি কাপ্তাইয়ের কয়েকজন সংগীতশিল্পী, যন্ত্রসংগীত শিল্পী এবং আবৃত্তিশিল্পীদের কিভাবে কাটছে তাদের গৃহবন্দী জীবন কিভাবে সময়টুকু তারা কাটাচ্ছে :- তাদের কথা তুলে ধরা হলো।।
কাপ্তাই শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সংগীত শিক্ষক ফনিন্দ্র লাল ত্রিপুরা, যুগ্ম সম্পাদক মংসুইপ্রু মারমা জানান, আমরা শিল্পকলার উদ্যোগে প্রতি মাসে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান করতাম, সকলের সাথে দেখা হতো, আড্ডা হতো। কিন্ত আজ বিগত একমাস ধরে কারো সাথে দেখা সাক্ষাত নেই, নেই কোন সংগীতানুষ্ঠান। এটা খুব কষ্টের।
বেতার শিল্পী ও সংগীতশিক্ষক বিপুল বড়ুয়া জানান, এ পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের ছাত্র/ ছাত্রী , শিক্ষক, অভিভাবক, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু -বান্ধব, আমাদের শিল্পীদের খুবই মিস করছি। এর মধ্যে কিছুক্ষন সংগীত চর্চা, টিভি দেখা, কম্পিউটারে কাজ করা, মোবাইলে কথা বলে সবার খোঁজ খবর নিয়ে সময় কাটাচ্ছি এবং আমাদের ধর্মীয় অনুসারে সকাল -বিকাল দুইবেলা সৃষ্টি কর্তাকে স্মরণ করি যাতে আমরা সবাই এ মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তিলাভ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারি।
সাংস্কৃতিক সংগঠক, সাংবাদিক এবং যন্ত্রসংগীত শিল্পী ঝুলন দত্ত জানান, খুব খারাপ সময় পার করছি, প্রতিদিন কোন না কোন প্রোগামে অংশ নিতাম,এখন সেই সময় টা পার হচ্ছে না কোনরকম। তবে যেহেতু আমি মিডিয়ার সাথে জড়িত, তাই স্পটে গিয়ে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে নিউজ করছি।
কাপ্তাইয়ের মেলোডি গানের শিল্পী মোঃ রফিক জানান, কতদিন মঞ্চে গান করছি না, এটা একজন শিল্পি হিসাবে বড় কষ্টের।
বাউল শিল্পী রফিক আশেকী জানান, গান করে আমরা মানুষকে আনন্দ দিতাম পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করে সংসার চালাতাম। বর্তমান করোনা সংকটে আমাদের জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছে।
আবৃত্তিশিল্পী উপস্থাপক নুর মোহাম্মদ বাবু, খোদেজা আক্তার ভাষা, শুদ্ধশ্রী রায় বর্ণ জানান, কতদিন প্রিয় মাইক্রোফোন হাতে ধরি না, এটা একজন শিল্পি হিসাবে বড় বেদনার।
সংগীতশিল্পী রওশন শরীফ তানি, বসুদেব মল্লিক, মংসাই মারমা, সূর্য্যসেন তনচংগ্যা জানান, সংগীত ছাড়া জীবন কতো কষ্টের কতো বেদনা,তা প্রকাশ করা কঠিন। কতোদিন প্রিয় শিল্পিদের সাথে দেখা হচ্ছে না।
কাপ্তাইয়ের সুপরিচিত নৃত্য প্রশিক্ষক সংগীতা দত্ত এনি জানান, কতোদিন প্রিয় মুখ গুলো দেখি না, প্রতি মূহুর্তে তাদের মিস করছি।
যন্ত্রসংগীতশিল্পী অভিজিত দাশ, মিনহাজ, রোকন,, অর্ণব মল্লিক জানান, এই সময়টায় প্রথমে খুব বেশি মিস করছি তাদের, যাদের সাথে প্রতিদিন একই মঞ্চে কাজ করে আসছি সেইসব শিল্পী বন্ধুদের। করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে বাসায় থেকে সংগীত চর্চা, লেখা পড়া, আনুষাঙ্গিক কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছি। পূর্বে কাজের চাপে পরিবারকে সময় দিতে পারিনি তবে এখন পরিবারের সাথেই সময়টা পার করছি। তবে আশা রাখছি খুব দ্রুত আমরা এই দুর্দিন কাটিয়ে আবার সুদিন ফিরে পাবো।
সংগীতশিল্পী জ্যাকলিন তনচংগা, শিমলা, রোজি, লিপি জানান, করোনা ভাইরাসে মানব জীবনে নেমে আসছে ঘোর অন্ধকার। এইসময় বাহিরে না গিয়ে বাসায় বসে সময় কাটানো খুবই কষ্টকর। তবুও নিজেকে, পরিবারকে এবং সেই সাথে দেশের মানুষকে রক্ষার্থে আমরা যে যার বাসায় অবস্থান করছি। আর বাসায় বসে রান্নাবান্না করা, ঘর গুছানো, টিভি দেখা, গান করা, পরিবারের সদস্যদের সাথে গল্প করা, একই সাথে খাওয়া দাওয়া করে সময় পার করছি।
হয়তো কাটবে দিন দূর্দিন, আসবে সুদিন: সকলের এই প্রত্যাশা।
হতদরিদ্রের ফোন কল পেয়ে ত্রান নিয়ে ছুটে গেলেন কাপ্তাই থানার ওসি নাছির উদ্দিন
কাপ্তাই :: রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই থানার ওসি নাছির উদ্দিনের মোবাইলে অপরিচিত একজন ব্যাক্তি থেকে কল দিয়ে জানাই ওই ব্যাক্তি পরিবার নিয়ে খুব কস্টে দিন পার করছে। বাড়িতে দুইমুঠো খাবার ও নেই যে পরিবারের সদস্যদের খাওয়াবে।।
তৎক্ষনাৎ কাপ্তাই থানার ওসি নাছির উদ্দিন ছুঁটে গেলেন সেই ব্যাক্তির ঠিকানায় এবং তাঁর ব্যক্তিগত সহায়তায় তিনি সেই পরিবারকে তুলে দিলেন খাদ্যসামগ্রী।
এই ব্যাপারে কাপ্তাই থানার ওসি নাছির উদ্দিন বলেন, এই সংকটকালে অনেকে পারিবারিক লজ্জায় ত্রান নিতে আসে না। তাই অনেকে কল করে আমাদের। আমরা পরিচিত গোপন করে তাদের সহায়তা করি।