বুধবার ● ২২ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লাখ লাখ মানুষের সুপেয় পানির তীব্র সংকট
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লাখ লাখ মানুষের সুপেয় পানির তীব্র সংকট
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: সিডর-আইলা বিধ্বস্ত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট সহ ১৭টি জেলার উপকুলীয় অঞ্চলের ৫০ লাখ মানুষের আজো চলছে, একদিকে করোনা আতঙ্ক, অন্যদিকে রমজান মাস সমাগত সুপেয় পানির তীব্র সংকট। লবনাক্ততা বাড়া, পুকুর-খাল ও নদী, উন্মুক্ত জলাশয়সহ পানির প্রধান উৎস্য প্রভাবশালীদের দখল ও ভরাটের কারণে– দিনদিন বাড়ছে খাবার পানির সংকট। সরকারিভাবে পানি সংকট সমাধানের উদ্যোগের কথা বলা হলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।করোনার এই মুহূর্তে এক জায়গায় এতো মানুষের সমাগম হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রমজান মাসের জন্য সরকারিভাবে ভ্রাম্যমাণ খাবার পানি সরবরাহের দাবি ।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভূক্তভোগীদের সাথে কথা বলে খাবার পানির সংকটের কথা জানা গেছে। যেসব পুকরে পিএসএফ স্বচল রয়েছে, সেখানে দিনরাত নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন থাকে। করোনার ভয় উপক্ষো করে জীবন বাঁচাতে দূর-দূরান্ত থেকে পানির জন্য যেখানে ফিল্টার আছে সেখানে ছুঁটছে মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে এক কলস পানি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের।
মোরেলগঞ্জ পৌর সভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মোতালেব ফকির জানান, তার বাড়ি পিএসএফে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শত শত মানুষের ভিড় পড়ে যায়। মোরেলগঞ্জ সরকারি ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে মাত্র ২২-২৩ টি পিএসএফ চালু আছে। সবগুলোতেই এভাবে মানুষেল ঢল নামে। করোনার এই মুহূর্তে এক জায়গায় এতো মানুষের সমাগম হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রমজান মাসের জন্য সরকারিভাবে ভ্রাম্যমাণ খাবার পানি সরবরাহের দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা,বরগুনা,পটুয়াখালীসহ উপকূলের ১৭ জেলায় সুপেয় পানি সংকট দীর্ঘদিনের। ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ বছরের অধিকাংশ সময়ই ভুগছেন, সুপেয় পানির তীব্র সংকটে। সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত উপকুলীয় এলাকায় পানির উৎস্যগুলো নষ্ট হওয়ার পর, এখনো পুরোপুরি পুনর্গঠন হয়নি। এছাড়া সরকারি জলাশয় বাণিজ্যিকভাবে লিজ ও ভরাট করার প্রতিযোগিতা চলছে। এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না নিষেধাজ্ঞা। এসব কারণে বাড়ছে খাবার পানি সংকট।
উপকুলীয় অঞ্চলের সুপেয় পানি সমস্যার জন্য সরকারের বৈষম্যমূলক নীতি ও শহরমুখী পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক আন্দোলনের নেতারা।
তবে উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য সুপেয় ও নিরাপদ পানির সংকট নিরসনে, সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা।
সুপেয় পানির সংকট সমাধানে, ভরাট হওয়া সরকারি পুকুর ও খাল-নদী সংস্কার এবং পানির উৎসের লিজ বন্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থার পাশাপাশি, গ্রামাঞ্চলভিত্তিক সমন্বিত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি উপকুলবাসীর।পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম উপকূলীয় ১৭টি জেলার ছয়টির সুপেয় পানির সংকট সব থেকে তীব্র। এগুলো হলো খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনা।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (খুলনা সার্কেল)প্রকৌশলী মো: জামানুর রহমান এ সম্পর্কে বলেন, এই এলাকাটি ব-দ্বীপের নিম্নভাগে হওয়ায় ভূগর্ভে জলাধারের জন্য উপযুক্ত মোটা দানার বালু বা পলিমাটির পরিবর্তে নদীবাহিত অতি সূক্ষ্ম দানার বালু ও পলি বেশি দেখা যায়। যে কারণে এসব অঞ্চলে ভূগর্ভেও পানযোগ্য পানি পাওয়া যায় না। কোনো কোনো অঞ্চলে ৯০০ থেকে এক হাজার ফুট গভীরে কখনো কখনো সুপেয় পানি পাওয়া যায়। খুলনার পাইকগাছা, কয়রা ও দাকোপ; সাতক্ষীরার আশাশুনি, শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও দেবহাটা; বাগেরহাটের মংলা ও শরণখোলা; পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, বরগুনার পাথরঘাটা এবং পটুয়াখালীর গলাচিপা ও কলাপাড়া উপজেলায় গভীর নলকূপ বসিয়েও মিষ্টি পানি পাওয়া যায় না।
জয় বাংলাভিশনের সম্পাদক শাহজাহান খান হায়দার জানিয়েছেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলজুড়েই পানি সমস্যা প্রকট। এখানে এখনো অনেক নদী। তবে নদীর পানি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পান ও ব্যবহারের অযোগ্য। কিছু জায়গায় নলকূপে পানযোগ্য পানি পাওয়া যায়, কিছু জায়গায় নলকূপেও খাবার ও ব্যবহারযোগ্য নিরাপদ পানি পাওয়া যায় না। উপকূলভাগের পশ্চিম প্রান্ত সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে শুরু করে পূর্ব দিকের বরগুনার কলাপাড়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়েই পান ও ব্যবহারযোগ্য পানির আকাল বেড়েই চলেছে।
পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম উপকূলীয় ১৭টি জেলার ছয়টির সুপেয় পানির সংকট সব থেকে তীব্র। এগুলো হলো খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনা।
মৃত্তিকা গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের (এসআরডিআই) গবেষণা জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাগরবাহিত নদীগুলোর নোনার মাত্রা আগে থেকে অনেক বেড়েছে এবং বেশি সময় দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। বছর দশেক আগেও এই অঞ্চলের নদীগুলোয় নোনার মাত্রা বাড়ত এপ্রিল থেকে মে-জুন মাসে। এখন কপোতাক্ষ, শিবসা, পশুর, ভৈরব, রূপসা, বলেশ্বর, কচা, পায়রা, বিষখালী প্রভৃতি নদীতে নোনা আসে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস থেকে। আর ভারি বৃষ্টি না হলে সেই নোনার মাত্রা কমে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বৃষ্টি আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে বেশি হওয়ায় নদীর নোনা কমে সহনশীল পর্যায়ে আসতে ওই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলে পানি সংকটের অবস্থা আমরা শহরবাসী গরম কালে টের পাই। এ বছর এখনই খুলনা মহানগরীর অনেক গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। এর কারণ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া।’ তিনি বলেন, ‘ভূগর্ভের পানির ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে পুনর্ভরণের (রি-চার্জ) সমস্যা। যে পরিমাণ ভূগর্ভের পানি তোলা হচ্ছে, আনুপাতিক হারে সেই পরিমাণ পানি আবার ভূগর্ভে যাচ্ছে না।সুপেয় পানির সংকট সমাধানে, ভরাট হওয়া সরকারি পুকুর ও খাল-নদী সংস্কার এবং পানির উৎসের লিজ বন্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থার পাশাপাশি, গ্রামাঞ্চলভিত্তিক সমন্বিত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি উপকুলবাসীর।
করোনার ভয়াল থাবা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ২৪ ঘন্টায় ১৩ করোনা রোগী শনাক্ত
বাগেরহাট :: : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় ভয়ানকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস ৫ জেলায় আজ বুধবার দুপুরে গত ২৪ ঘন্টায় ১৩ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে পঞ্চম দিনের পরীক্ষায় ৬৫টি নমুনার মধ্যে ১৩টিতে করোনার জীবাণু পাওয়া যায়; যার মধ্যে নড়াইলের চারজন ডাক্তারের নমুনাও রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আর যশোরের সিভিল সার্জনও নিশ্চিত করেন যে, এই জেলায় নতুন করে চারজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার তথ্য মিলেছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারের সহকারী পরিচালক প্রফেসর ড. ইকবাল কবীর জাহিদ বুধবার দুপুরে মুঠোফোনে জানান, মঙ্গলবার এখানে দক্ষিণ-পশ্চিমের সাত জেলার সন্দেহভাজন রোগীদের ৬৯টি নমুনা আসে। তার মধ্যে ৬৫টি নমুনা পরীক্ষার ফল নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর ১৩টিই পজেটিভ। বাদবাকি ৫২টি ছিল নেগেটিভ।
তিনি জানান, ১৩টি পজেটিভ নমুনার মধ্যে যশোর জেলার চারটি, কুষ্টিয়ার দুটি, মেহেরপুরের একটি, মাগুরার একটি এবং নড়াইলের পাঁচটি রয়েছে। নড়াইলের পাঁচটি নমুনার মধ্যে চারটিই চিকিৎসকের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নড়াইলের এই চার চিকিৎসক একই হাসপাতালে কর্মরত। আর যশোরের যে চার করোনা রোগী শনাক্ত হলেন, তারা চৌগাছা অঞ্চলের বাসিন্দা। তবে সরকারি কোনো সূত্র থেকে এই তথ্য এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। শুধু চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলছেন, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে তার এলাকার দুইজন রয়েছেন বলে তিনি প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেল শুক্রবার থেকে করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রথম চার দিনের নমুনাগুলোতে একটিও পজেটিভ রিপোর্ট আসেনি। পঞ্চম দিনে হঠাৎ করে ১৩ করোনা রোগী শনাক্ত হলেন।
এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ও জেনোম সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন বুধবার বলেন, ‘কোন গুচ্ছ (ক্লাস্টার) থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে। কালেকশনে যদি ত্রুটি না থাকে, তাহলে ফলাফল অ্যাকিউরেট হওয়ার কথা।’
তিনি জানান, মঙ্গলবার নতুন কিট দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এদিন সরকারের পক্ষ থেকে ৪৮০টি কিট পায় যবিপ্রবি। এর আগে শুক্রবার নমুনা পরীক্ষার শুরুতে ৪০০টি কিট সরবরাহ করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টিকে।
তাহলে কি প্রথম দফায় আসা কিট ত্রুটিপূর্ণ ছিল?
গ্রামের সংবাদ এর এমন প্রশ্নের জবাবে ভিসি ড. আনোয়ার বলেন, ‘না, তা বলা যাবে না। ত্রুটিপূর্ণ কোনো কিটে পজেটিভ বা নেগেটিভ- কোনো রিপোর্টই পাওয়া যায় না।’
‘তা সত্ত্বেও সন্দেহ দূর করার জন্য আমরা প্রথম চার দিনের নমুনাগুলোর মধ্যে থেকে র্যান্ডমলি রিচেক করবো,’ বলছিলেন ভিসি।
পঞ্চম দিনের পরীক্ষার ফলাফল চূড়ান্ত হয় মঙ্গলবার দিনগত রাত তিনটার দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জানিয়েছেন, ফলাফল হাতে পাওয়ার পর পরই তা ই-মেইল ও অন্য মাধ্যমে আইইডিসিআর এবং স্ব স্ব জেলার সিভিল সার্জনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বুধবার দুপুরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন এই জেলায় নতুন করে চারজনের করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেন। তবে তারা কোন এলাকার লোক, তা তখনই গ্রামের সংবাদকে নিশ্চিত করতে পারেননি সিএস। বলেছেন, অফিসে গিয়ে তালিকা দেখে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মঙ্গলবার পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা, নড়াইল একজন করে করোনা রোগীর সন্ধান মেলে। আর খুলনার এক মৃত ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায় মঙ্গলবারই।
আজ যবিপ্রবি থেকে পাওয়া ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এই অঞ্চলের নড়াইল ও যশোরে করোনাভাইরাস বেশ ছড়িয়েছে। এছাড়া কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাগুরা এতোদিন করোনামুক্ত মনে করা হলেও এখন সেখানে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি আছেন, তা নিশ্চিত হলো।
যবিপ্রবির উপাচার্য জানিয়েছেন, সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আরএনএ আইসোলেশন কিট সরবরাহ করেনি। এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারের আরএনএ আইসোলেশন কিট পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেহেতু এখানে জেনোম সেন্টার রয়েছে, তাই রিএজেন্টও থাকে।
দ্রুত আরএনএ আইসোলেশন কিট সরবরাহের দাবি জানিয়ে ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, না হলে এখানে করোনা পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
করোনার প্রভাবে চিংড়ি শিল্প ধংসের পথে
বাগেরহাট :: মরণঘাতি করোনার প্রভাবে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চিংড়ি শিল্প এখন ধংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।চলছে ঘেরে রেণু পোনা ছাড়ার মৌসুম। নানা কারনে চরম অর্থ সংকটে চাষিরা। তাই ভরা এ মৌসুমে চিংড়ি ঘের তৈরি করেও চাষিরা ঘেরে চিংড়ি পোনা ছাড়তে পারছে না। ফলে আজ বুধবার দুপুরে আক্ষেপের সাথে এমনটাই জানিয়েছেন চিতলমারী উপজেলার চিংড়ি চাষিরা।
তারা আরও জানান, এ অঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা চৈত্র মাসের শুরুতে পানি সেচ দিয়ে পুরানো মাছ ধরে এবং ঘের শুকিয়ে ফেলে। এরপর নানা পরিচর্যার পর নতুন করে পানি দিয়ে বৈশাখ মাসের শুরু থেকে তারা ঘেরে চিংড়ির রেণু পোনা ছাড়তে শুরু করে। সেই হিসেবে এখন চলছে ঘেরে রেণু পোনা ছাড়ার ভরা মৌসুম। বাংলা প্রতি বছরের শুরুতে চাষিরা তাদের পুরানো হিসাব-নিকাশ মিটিয়ে নতুন করে বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবসায়ী ও সুদখোর মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ শুরু করেন। কিন্তু বিগত বছর গুলোতে এভাবে চলে আসলেও মহামারি করোনার প্রভাবে এ বছর চরম অর্থ সংকটে থাকার কারণে চাষিরা মহাবিপাকে পড়েছে। ভরা এ মৌসুমে চিংড়ি ঘের তৈরি করেও তারা ঘেরে চিংড়ির রেণু পোনা ছাড়তে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
চিতলমারী মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় মোট চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ১৭ হাজার ৭৩০ টি। যার মোট আয়তন ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। এরমধ্যে ১৪ হাজার ৭৫৮ টি ঘেরে গলদা ও ২ হাজার ৮৭২ টি ঘেরে বাগদা চিংড়ির চাষ ও ৬ হাজার ৯০০ টি পুকুরে বিভিন্ন মাছের চাষ হয়। এখানের চাষিরা বছরে ৫৮১ মেট্রিকটন বাগদা ও ২ হাজার ৬৫০ মেট্রিকটন গলদা চিংড়ি এবং বিপুল পরিমান সাদা মাছ উৎপাদন করে থাকেন। এখানে ৭ হাজার ৫০০ জন মৎস্য চাষি ও ২ হাজার ৭০২ জন মৎস্যজীবি রয়েছেন। সেই সাথে এই চিংড়ি শিল্প ও মাছ চাষের সাথে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের ভাগ্য জড়িত রয়েছে। এ বছরের শুরুতে ঋণগ্রস্থ চাষিরা চিংড়ির উৎপাদন দেখে অনেকটা আশায় বুক বেধে ছিলেন। মাছ বিক্রি করে তাদের ধারদেনা মিটবে। কিন্তু হঠাৎ করে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে উমাজুড়ি গ্রামের লিড ফার্মার মুকন্দ মন্ডল, কুরমনি গ্রামের প্রবীণ চিংিড় চাষি বলরাম বিশ্বাস, শ্রীরামপুরের তাপস ভক্ত ও সুরশাইল গ্রামের চিংড়ি চাষি মুন্না শেখ জানান, প্রতি বছরের শুরুতে তারা পুরানো হিসাব-নিকাশ মিটিয়ে নতুন করে বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবসায়ী ও সুদখোর মহাজনদের কাছ থেকে টাকা লোন নিয়ে চিংড়ি চাষ শুরু করেন। কিন্ত মহামারি করোনার প্রভাবে এখন মাছ রপ্তানী ও মাছ বিক্রি বন্ধ থাকায় তারা মহাবিপাকে পড়েছেন। ভুগছেন চরম অর্থ সংকটে।
মৎস্য চাষে অভিজ্ঞরা জানান, অপরিকল্পিত চিংড়ি ঘেরের কারণে এখানে কোন না কোন বিপর্যয় হয়ে থাকে। এ বছরও মরণঘাতি করোনার প্রভাবে সময় মত ঘেরে রেণু পোনা ছাড়তে না পারায় এ অঞ্চলের চিংড়ি শিল্প ধংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ডুমুরিয়া গ্রামের চিংড়ি চাষি বরেণ বাড়ৈ, সুবোধ বাড়ৈ, বিপ্লব বাড়ই, শ্রীরাম পুরের সাধন বৈরাগী, বিপুল মন্ডল, নিমাই মন্ডল, কৃষ্ণপদ বালা, অনুপ বালা, দয়াল বালা, তুহিন বিশ্বাস, পাড়ডুমুরিয়া গ্রামের দেবদাস ভক্ত, উত্তম বাড়ৈ, কুরমনি গ্রামের গৌর বাইন, শুধাংসু মন্ডল ও আনন্দ বিশ্বাসসহ অনেক চাষিজানান, হঠাৎ করে মাছ বিক্রি ও মাছ রপ্তানী বন্ধ হওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাই সরকারি সঠিক সাহায্য না পেলে এই শিল্পের ধ্বংস ঠেকিয়ে রাখা যাবে না বলেও তারা উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে চিতলমারী অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোঃ আল আমিন হোসেন জানান, সরকারি ভাবে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা’র চিঠি এসেছে। আগামী সপ্তাহ থেকে কৃষকদের মধ্যে ঋণ বিতরণ শুরু হবে।
চিতলমারী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মোঃ জিল্লুর রহমান রিগান মুঠোফোনে জানান, করোনায় মাছের খাত বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছে। সার্বিক বিবেচনা করে সকলকে এটা মোকাবেলা করতে হবে। সরকার এ খাতে মোটা অংকের টাকা প্রণোদনা দিয়েছেন। তিনি যে কোন সমস্যায় তার মোবাইল ফোনে চাষিদের যোগাযোগ করার অনুরোধ করেছেন।
বাগেরহাটে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটক
বাগেরহাট :: বাগেরহাটে রামপালে অভিযান চালিয়ে খুলনা র্যাব-৬ এর সদস্যরা মাসুদ শেখ (২০) নামের এক সন্ত্রাসীকে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক করেছে। এঘটনায় রামপাল থানায় মঙ্গলবার একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৬ এর একটি আভিযানিক দল সোমবার রাতে উপজেলার ভাগা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পাশে মাদক বিক্রি হচ্ছে এমন খবর পেয়ে অভিযান চালান। তখন কয়েক ব্যক্তি র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাগেরহাট সদর উপজেলার ভট্র বালিয়াঘাটার আব্দুর রশিদ শেখের পুত্র মাসুদকে আটক করে।
এসময় তার কাছে থাকা বাজার করা ব্যাগের ভেতর তল্লাশী চালিয়ে একটি দেশী তৈরি পাইপগান ও তিন রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করে।
এঘটনায় র্যাবের জেসিও মোঃ ফুয়াদুল ইসলাম বাদী হয়ে রামপাল থানায় একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করেন। অভিযোগে জানা যায়, সে দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র দখলে রেখে অবৈধ কাজ করে আসছিল।
বাগেরহাটে পশুর রিভার ওয়াটারকিপারের উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা প্রদান
বাগেরহাট :: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে পশুর রিভার ওয়াটারকিপার, বাপা বাগেরহাট জেলা কমিটি এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ’র পক্ষ থেকে ২২ এপ্রিল বুধবার সকালে মোংলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে শতাধিক জেলে ও শ্রমজীবি পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়।
বুধবার সকাল ১১টায় খাদ্য সহায়তা প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন মোংলা প্রেসক্লাব সভাপতি আলহাজ্ব এইচ এম দুলাল, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার বাপা’র জেলা সমন্বয়কারী মোঃ নূর আলম শেখ, প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাসান গাজী, সাংবাদিক নেতা মনিরুল হায়দার ইকবাল, আমীর হোসেন আমু , মাহমুদ হাসান, আবু হোসাইন সুমন, মোঃ আবুল হাসান, হাসান , বাপা নেতা নাজমুল হক, তানজীম হোসেন মুকুল, পশুর রিভার ওয়াটারকিপারের ভলান্টিয়ার আব্দুর রশিদ, কমলা সরকার প্রমূখ।
খাদ্য সহায়তা প্রদানকালে বক্তারা বলেন করোনাকালে তথাকথিত সভ্যতার চাকা থমকে যাওয়ায় প্রকৃতি আজ নিজরূপে সেজেছে। প্রাণ-প্রকৃতিকে সুরক্ষাকে করেই সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হবে এটাই হচ্ছে করোনাকালের শিক্ষা। এসময় বক্তারা করোনার থাবা থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানান। উল্ল্যেখ্য শতাধিক জেলে ও শ্রমজীবি পরিবারের প্রত্যেককে ২৫ কেজি চালের বস্তা প্রদান করে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়।
বাগেরহাটে জমি নিয়ে বিরোধ, প্রতিপক্ষের অস্ত্রের আঘাতে যুবক নিহত
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের মোল্লাহাটে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের দায়ের কোপে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তবে এ ঘটনায় জড়িত কাউকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
বুধবার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার আটজুড়ি ইউনিয়নের কামারগ্রামে নূর আমিন খাঁন (৩৫) নামে ওই যুবকের ওপর হামলা করে প্রতিবেশীরা। সে কামার গ্রামের প্রয়াত লোকমান খাঁনের ছেলে।
আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানান, বাড়ির পাশে বিরোধপূর্ণ পুকুরের জমিতে ভেড়ি (আইল বাঁধাই) দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে নূর আমিনের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে নূর আমিনকে দা দিয়ে আঘাত করে প্রতিপক্ষরা। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় দুপুরে বলেন, জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত ওই ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় খুলনায় মারা গেছেন। সেখানে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। হামলার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।