রবিবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » করোনা : একদেশে দুই আইন,দুই নির্দেশনা
করোনা : একদেশে দুই আইন,দুই নির্দেশনা
সাইফুল হক :: যাদের ঘরে মোটামুটি খাবার ব্যবস্থা আছে তাদের জন্য এক রকম নির্দেশনা ; আর যাদের ঘরে খাবার নেই,নগদ টাকা বলতে কিছুই নেই তাদের জন্য আরেক নির্দেশনা, আর এক জীবন !
করোনা সংক্রমণজনীত ঝুঁকির কারণে আদালত খোলার সিদ্ধান্ত স্থগিত, কিন্তু গারমেন্টস চালু হচ্ছে।
বায়ারদের চাহিদা পূরণের যুক্তিতে অর্ডার রক্ষার কারণ দেখিয়ে আজ থেকে করোনার হটস্পট হিসেবে আলোচিত নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকায় বেশ কিছু গারমেন্টস কারখানা খুলছে। ৪ এপ্রিলের মত দূর দূরান্ত থেকে আবারও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, পায়ে হেটে, যে যেভাবে পারে শ্রমিকরা কারখানায় আসতে শুরু করেছেন। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেই নাকি কারখানা খোলা হচ্ছে।যেখানে এখনও অব্দি অধিকাংশ ডাক্তার, নার্সসহ চিকিৎসা কর্মীদেরই উপযুক্ত সুরক্ষা নেই, অধিকাংশ হাসপাতালেরই বেহাল দশা সেখানে গারমেন্টস শ্রমিক আর গারমেন্টস কারখানায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা! ভরা বৈশাখে একেবারে আষাঢ় এর গল্প! গারমেন্টস কারখানার যে কর্ম পরিবেশ সেখানে কিভাবে সামাজিক দূরত্ব বা শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করে কাজ করা সম্ভব?
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারনে সীমিত পরিসরে আদালত খোলার সিদ্ধান্ত নেবার পরেও বিপদ না বাডাতে সেই সিদ্ধান্ত আবার স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি যদি এই রকম ঝুঁকিপূর্ণ হয় তাহলে হাজার হাজার শ্রমিককে নিয়ে কিভাবে গারমেন্টস কারখানা চালু করার সিদ্ধান্ত হয়!!ইতিমধ্যে গণমাধ্যম করোনা ভাইরাসে ছয় জন গারমেন্টস শ্রমিকের মৃত্যু এবং অনেকেরই সংক্রমিত হবার খবর প্রকাশ করেছে। ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে গাজীপুর জেলার এসপি- ডিসি মালিকদের স্বেচ্ছাচারীতায় অপরিকল্পিতভাবে গারমেন্টস খোলায় শ্রমিকদের পাশাপাশি সমগ্র গাজীপুর কিভাবে করোনার হটস্পট পরিনত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করেছেন।
বাংলাদেশকে করোনা সংক্রমণ বিস্তারের জন্য আগামী এক মাসকে সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে আবার কিভাবে গারমেন্টস কারখানা চালু করার মত হঠকারী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়?শ্রমিকেরা আক্রান্ত হলে মালিকসহ বাকি জনগোষ্ঠী কি নিরাপদে থাকবেন, এরকম কি কোন গ্যারান্টি আছে?কেন মুনাফার লোভের আগুনে আবার অসহায় শ্রমিকদেরকে বিপদগ্রস্ত করছেন, পুরো দেশটাকেও বড় ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন?
গতকাল মালিকপক্ষ গারমেন্টস খোলা নিয়ে অনলাইন মিটিং করেছেন এবং কারখানা চালুর পক্ষে পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদক ও অর্থনীতিবিদদেরকেও তাদের পক্ষে টানার চেষ্টা করেছেন। এদের সবার মতামত জানার সুযোগ হয়নি সত্য; কিন্তু এটা সত্য যে করোনা এমন একটা ‘নীতিবর্জিত’ ভাইরাস যে এর ধনী -গরীব,মালিক - শ্রমিক , ধর্ম -বর্ণ বাদবিচার নেই। সে কারণে শ্রমিকেরা বিপদগ্রস্ত হলেও অন্যেরা বিপদমুক্ত থাকবেন এর কোন নিশ্চয়তা নেই।
তবুও আশা করতে দোষ কি - সরকার গারমেন্টস মালিকদের অঘোষিত ‘সুপার সরকারকে’ নিয়ন্ত্রণে রাখবেন এবং নিজেদের দ্বিমুখী, স্ববিরোধী ও সমন্বয়হীন নীতি - কৌশল থেকে বেরিয়ে আসবেন। তা না হলে নিজেরাও বিপদে পডবেন,দেশটাকেও বড় ধরনের বিপদে ফেলবেন।
লেখক : রাজনীতিবিদ ও কলাম লেখক, সাইফুল হক, সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
সূত্র : পেইজবুক পেইজ থেকে ।