রবিবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীন : অসহায় কর্মহীন মানুষ
রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীন : অসহায় কর্মহীন মানুষ
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির,বাগেরহাট প্রতিনিধি :: পবিত্র মাহে রমজানেই বাগেরহাটে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় হতাশায় ভুগছে সাধারণ মানুষ। করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষগুলো আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে বাড়তি দামের কারণে। শনিবার বিকেলে অবধি নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান ও থানা অফিসার চার্জ কেএম আজিজুল ইসলাম দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রনে পৌর বাজার মনিটরিং করেন। এসময় তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সাথে কথা বলেন। মনিটরিং টিম বাজারের বিভিন্ন দোকানের চাল ,ছোলা,মরি, চিরা সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্যব্যের মূল্য পর্যবেক্ষন করেন।উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এমন উদ্দ্যোগে খুশি হন ক্রেতা সাধারণ।
এছাড়াও প্রতিটি দোকানে দ্রব্যমূল্যের তালিকা দর্শনীয় স্থানে টাঙ্গানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। মনিটরিং টিমের বাজার পরিদর্শনের সময় চাল ব্যাবসায়ী নকুল রায়কে ভোক্তা অধিকার আইনে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।একই সাথে ওই ব্যাবসায়ীর ঘরে থাকা ইউরিয়া সারের হিসাব দেখাতে না পারায় তাকে আরো ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ৪০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, ৩০ টাকার শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, দেশী মশুরের ডাল কেজিতে বেড়েছে ১০-১৫ টাকা, আদা ৩৫০ টাকায়, ৬০ টাকার রসুন বর্তমানে ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া কাঁচা বাজারেও প্রতিটি পণ্যের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। ২০ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকায়, ঢেড়শ, টমেটো, বরবটি কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। এদিকে রমজান মাস শুরু হওয়ায় মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়।
মুদি দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, ইফতার সামগ্রীর দামও বেড়েছে। ১৫০০ টাকার ৫০ কেজি চালের বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২১০০-২২০০ টাকায়। এদিকে উপজেলা বাজার ছাড়িয়ে গ্রামের হাটবাজার গুলোতেও সব পণ্যের দাম বেড়েছে। সাধারণ ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে।যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা আরো জানান, এমনিতেই করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের দিন কাটছে অনেক কষ্টে। তার উপর দ্রব্যমূল্যের দাম অসহনীয় থাকায় যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।
মোরেলগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো.দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যই বর্তমানে বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারনে পণ্য পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খাতেও ব্যয় বেড়েছে। তাই পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে।
স্বামী পরিত্যাক্তা যুবতী কে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষন ৫মাসের “অন্তঃসত্ত্বা”
বাগেরহাট :: বাগেরহাটে মোংলায় অনাগত সন্তানের পিতৃী পরিচয়ের দাবিতে প্রশাসনসহ সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে অসহায় এক যুবতী। এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালীদের সেচ্ছাচারিতার কারনে নবগত এ শিশুর পিতৃী পরিচয় পাচ্ছেনা বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে ওই যুবতীর দাবি, এলাকার আয়নাল নামের যুবক তার অসহাত্বের সুযোগ নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে জোর করে ধর্ষন ও অবৈধ মেলামেশায় ৫মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরেছে স্বামী পরিত্যক্তা ওই যুবতী।মোংলা উপজেলার চাদঁপাই ইউনিয়নের নারকেলতলা এলাকার আয়নাল নায়েন ওই যুবক এ ঘটনা মিথ্যা ও যুবতীকে নষ্ট বলে আখ্যায়ীত করে অপবাদ রটায়।
সহকারী পুলিশ সুপার (মোংলা সার্কেল) এঘটনার সত্যতা নিশ্চিৎ করেছেন। এব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
নির্যাতিতা ওই নারীর পরিবার সুত্রে ও খোজ নিয়ে জানা যায়,মোংলা উপজেলার চাদঁপাই ইউনিয়নের নারকেলতলা আবাসনে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বসবাস করতেন কৌইন বিশ্বাস।অভাবের সংসার তাদের, বাবা-মাও বৃদ্ধ, দীর্ঘদিন যাবত অন্যের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ ও পানি বহন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল অসহায় কৌইন বিশ্বাসের মেয়ে ওই যুবতী (২২)।একই এলাকার স্থানীয় জনৈক কোরবান মল্লিেিকর ছেলে আয়নাল (৪০) নামের এক ব্যাক্তির কুনজরে পরে সে। তাকে অসহাত্বের সুযোগ নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে জোর পুর্বক ধর্ষন করে। পরে তাকে বিয়ের করার আশ্বাস দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার সাথে অবৈধ শারীরীক সম্পর্ক গড়ে তোলায় ৫মাসের অন্তঃসত্ত্ব হয়ে পরে ওই যুবতী। তবে প্রতিবেশী যুবক আয়নালকে এ কাজে বাঁধা প্রদান করলেও তাকে ভয়ভিতী দেখাতেন বলেও যুবতী অভিযোগ করেন। দিনের পর দিন এ অবৈধ মেলামেশার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে এলাকায় জনমনে চাঞ্চল্য ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
প্রভাবশালী একটি মহল তাকে সুবিচার পাইয়ে দেয়ার নাম করে বিষয়টি ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয়দের মাঝে ঘটনাটি প্রায় ৬দিন অতিবাহিত হলেও মোটা অংকের টাকার বিনিময় এটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় ব্যাথ হয় প্রভাবশালী ওই মহলটি।স্থানীয় ইউপি মেম্বারের সাঙ্গপাঙ্গরা টাকার বিনিময় ওই নারীর গর্ভপাত করানেরও চেষ্টা করলেও ডাক্তারের চাপের মুখে তা ব্যার্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। এক পর্যায় লোকলজ্জায় ভয়ে কাউকে কিছু না বলে পরিবারের সদস্যরা ইউপি মেম্বারের কাছে বিচারের দাবি জানায়।
তবে বিষয়টি সমাধান না করে এব্যাপারে কোথাও কোন অভিযোগ না করার নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বলেও জানায় ভুক্তভোগীর পরিবার। অনাগত সন্তানের পিতৃী পরিচয়ের দাবী তুললে বিষয়টি স্থানীয় সমাজপতিরা নারীকে সমাজে নষ্টা বলে আখ্যা দিলে অসহায় যুবতী এখন নিরাপত্তা হীনতায় দিন কাটছে। এনিয়ে পুরো এলাকায় জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শনিবার দুপুরে বিষয়টি সহকারী পুলিশ সুপার (মোংলা সার্কেল)কে জানালে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে দোষির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেয়া হয়।
নারকেলতলা আবাসনের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক জানায়, গত ৫দিন পুর্বে এঘটনা নিয়ে লোকমুখে শুনেছি তবে মেয়েটি অনেক জায়গায় কাজ করে, কার মাধ্যমে হয়েছে সেটা আমাদের অজানা। তবে স্থনীয়দের দাবী, একটি মহল মেয়েটিকে নিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। এসব অনৈতিক কার্যকলাপের সুষ্ঠ তদন্ত পুর্বক এলাকায় ব্যাভিচার বন্ধের জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবসী।
ইউপি মেম্বার হারুন মল্লিক জানায়, যুবতীর গর্ভপাত করানোর জন্য নয়, বিষয়টি যাচাই করার জন্য আমার স্ত্রী (রুবি বেগম) তাকে পরিক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছিল।
সহকারী পুলিশ সুপার (মোংলা সার্কেল) মোঃ আসিফ ইকবাল জানান, শনিবার মেয়েটি ও তার পরিবারের সদস্যরা আমাকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছে, তবে এলাকায় তাকে নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করা হয়েছে এবং লিখিত আবেদন করার জন্য বলা হয়েছে। ওই এলাকায় পুলিশও পাঠানো হয়েছে, আবেদন পেলেই মামলা নেয়া হবে।
করোনায় সন্তান সম্ভবা সাড়ে ৮ হাজার মা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে
বাগেরহাট :: করোনা পরিস্থিতিতে বাগেরহাটে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন সন্তান সম্ভবা প্রায় সাড়ে আট হাজার মা। গর্ভবতী মায়েদের ঘরবন্দি থেকে সাবধানে চলাফেরা করতে পরামর্শ দিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। এসব মায়ের নিয়মিত স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নিচ্ছেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ কর্মীরা। গর্ভকালীন সময়ে যেসব গর্ভধারিণীর শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেবে তাদের চিকিৎসার জন্য মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসকরা প্রস্তুত রয়েছেন।
বাগেরহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এ জেলার ৯ উপজেলায় ৮,৪৩১ জন মা গর্ভবতী (সন্তান সম্ভবা) রয়েছেন। এরমধ্যে বাগেরহাট সদরে ১৫৩৩, চিতলমারীতে ৮৯০, মোল্লাহাটে ৮৭০, ফকিরহাটে ১০৫৮, রামপালে ৫৩৭, শরণখোলায় ৫৯০, মোরেলগঞ্জে ১৪৯১, কচুয়ায় ৫৫৬ এবং মোংলাতে ৮১৬ জন।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস সামাদ বলেন, ‘গর্ভবতী মায়েদের সেবা দেয়ার জন্য ২৪ ঘন্টা হাসপাতাল খোলা রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে অতিপ্রয়োজন ছাড়া কোন গর্ভবতী মা এখানে সেবা নিতে আসছেন না। তবে তাদের সেবা দিতে এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রস্তুত আছেন।’
তিনি বলেন, ‘গর্ভবতী মায়েদের সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সামাজিক দুরত্ব মেনে চলাফেরা করবে। একজন গর্ভবতী মাকে অন্তত চারধাপে চেকআপ করে থাকি। মা ও তার গর্ভের শিশুর রক্ত সঞ্চালন ও হার্টবিট, এই মায়ের ডেলিভারি কবে নাগাদ হবে এসব সেবা নিতে তারা এখানে নিয়মিত এসে থাকেন। কিন্তু এখন এই মায়েদের বাইরে বের হওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি আছে, সেজন্য খুববেশি সমস্যা না হলে হটলাইনে ফোন করে সেবা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এই মায়েরা তাদের সুরক্ষার জন্য পুষ্টিকর খাবার খাবে, পর্যাপ্ত পানি পান করবে এবং মুখে মাস্ক ব্যবহার করবে।’
বাগেরহাট স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক গুরুপ্রসাদ ঘোষ জানান, গর্ভবতী মায়েদের সেবা দিতে জেলায় মাঠ পর্যায়ে ৩৪৫ জন কর্মী নিয়োজিত আছেন।
তিনি বলেন, ‘গর্ভবতী মায়েদের ঘরবন্দি থেকে সাবধানে চলাফেরা করতে পরামর্শ দিচ্ছি। এই সময়টাতে কোন অবস্থাতে তারা যেন ঘরের বাইরে না আসেন। ইউনিয়ন পর্যায়ের যেসব ক্লিনিকগুলো আছে আমাদের মাঠ কর্মীরা গর্ভবতী মায়েদের সেবা দিয়ে আসছেন। মাঠকর্মীরা এসব মায়েদের বাড়িতে যেয়ে অথবা মোবাইল ফোনে তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরাও ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছেন। গর্ভবতী মায়েদের শারীরিক সমস্যা দেখা দিলেই স্থানীয় হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এই গর্ভবতী মায়েদের কাছে মাঠকর্মীদের ফোন নাম্বার দেয়া আছে তারা কোন সমস্যায় পড়লেই যেন কল করেন।
বাগেরহাটে মোল্লাহাটে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি শুরু
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের মোল্লাহাটে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে টিসিবি’র পণ্য নায্য মূল্যে বিক্রি শুরু হয়েছে। উপজেলার প্রাণকেন্দ্র মোল্লাহাট বাজার চৌরঙ্গিতে রবিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই পণ্য বিক্রি করা হয়। রোজা উপলক্ষে প্রতি কেজি চিনি ৫০ টাকা, ডাল ৫০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা, খেজুর ১২০ টাকা ও সয়াবিন তৈল ৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। লাইনে দাড়িয়ে ওই সকল পণ্য ক্রয় করেন সাধারণ মানুষ। বর্তমান বাজার মূল্যের কম বা ন্যায্য মূল্যে ওই সকল পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে পেরে খুশি সাধারণ মানুষ।
টিসিবির পণ্য কিনতে আশা কাওছার খান (৭০)সহ অনেকে বলেন,করোনার কারনে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া রোজায় আরো বেড়েছে। এমতাবস্থায় খোলা বাজারে টিসিবির পণ্য ন্যয্য মূল্যে পেয়ে তারা খুশি। এধারা অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃস্টি আকর্ষণ করছেন তারা।
এমপি শেখ তন্ময়ের নির্দেশনায় করোনা প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ শুরু
বাগেরহাট :: করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিরোধে বাগেরহাট সদর উপজেলায় বিভিন্ন পর্যায়ের ৯৯টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্যদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কমিটির প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সাধারণ মানুষকে করোনা ভাইরাস বিষয়ে সচেতন, কর্মহীণদের খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্য সেবায় সহযোগিতাসহ করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় কাজ করবেন। বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের নির্দেশনায় বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
রবিবার সকালে বাগেরহাট সদর উপজেলার রাংদিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজের মাঠে যাত্রাপুর ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এসময় বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন, বাগেরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মোশাররফ হোসেন, বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আহাদ উদ্দিন হায়দার, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের একান্ত সচিব এ্যাড. চয়ন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের শেখ আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সেক্রেটারি ও যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ মতিন, ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার মোড়ল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলোর সিইও মুশফিকুর রহমান টুকু, যুবলীগ নেতা লিটন সরকার, টিটু কাজীসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের নির্দেশে সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৯৯টি স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক দলে ৩‘শ ৫১ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবেন। করোনা পরিস্থিতিতে যে কোন প্রয়োজনে এরা মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতা করবে।
করোনা ভাইরাস বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি, খাদ্য সমগ্রী প্রদান ও স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও নার্সদের সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন দেওয়া হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকদের। পর্যায়ক্রমে সকল কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষন দেওয়া হবে।
বাগেরহাটে বাড়িতে সিঁদ কেটে ৪ লাখ টাকার মালামাল চুরি
বাগেরহাট :: করোনা পরিস্থিতিতে বাগেরহাটের শরণখোলায় ছাত্রলীগ নেতা আসাদ হাওলাদারের বাড়িতে চুরি হয়েছে। চোরেরা সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে প্রায় প্রায় চার লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়েছে। শনিবার দিনগত রাতে উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর গ্রামের এঘটনা ঘটে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ হাওলাদার জানান, রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে সিঁদ কেটে চোরেরা ঘরে ঢোকে। চোরেরা কৌশলে আলমারি ভেঙে এক লাখ ২০ হাজার টাকা, প্রায় আড়াই লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার এবং বাইরে থাকা প্রায় ৪০হাজার টাকা দামের তিনটি মোবাইল ফোনসহ প্রায় চার লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়ে গেছে। রাত দুইটার দিকে তার ছোট ভাই রুবেল হাওলাদার পানি খেতে উঠে ঘরের সামনের দরজা খোলা দেখে চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শণকারী শরণখোলা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমির হোসেন জানান, খবর পেয়ে সোমবার সকালে ছাত্রলীগ নেতা আসাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বসতঘরের পিছন থেকে সিঁট কাটা এবং ভেতরে মালামাল তছনছ করা। এসময় নগদ টাকা, সোনাদানাসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে যাওয়ার কথা জানায় বাড়ির লোকজন।
শরণখোলা থানার ওসি এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছে। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
করোনায় সুন্দরবন উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষ বেকার সরকারি সহায়তা চায়
বাগেরহাট :: সুন্দরবনে মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত এ সাথে জড়িত হাজার হাজার পরিবার অসহায় জীবন যাপন করছে।বেকার মানুষ মৎস্য জেলে সরকারি সহায়তা চায়।অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মান, চিংড়ি ঘের তৈরি, বনের গাছ কাটা ও নির্বিচারে মৎস্য আহরণ ইত্যাদি কারনে উপকূল এলাকায় প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জ্বলোচ্ছ্বাসে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু, ঘর-বাড়ি, হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল, প্রয়োজনীয় মালামাল, পুকুর, কৃষি জমিসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হয়। সেই ভয়াল ঘুর্ণিঝর সিডর,আইলা.ফনি ও সর্বেশষ জলোচ্ছ্বাস বুলবুল উপকূলীয় খুলনা, সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় প্রায় ১০/১২টি জেলার এগার লাখ জেলে বাওয়ালী, মৌয়ালী পরিবার সর্বস্ব হারিযয়ে ফেলেছে। সম্প্রতি বুলবুলের আঘাত যেতে না যেতেই শুরু হয়েছে না দেখা ও অজানা আতংক করোনা ভাইরাসের মহামারী আক্রমন । আর এই করোনার ভয়াল মহামারি দুর্যোগে স্থবির হয়ে পড়েছে উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন চক্র । সুন্দরবন কেন্দ্রিক জীবিকা নির্বাহকারী জেলে, ভাওয়ালী, মাওয়ালী, মহিষচাষী ও ভূমিহীন, বিত্তহীন সাধারন গরীব মানুষ যারা এই বনকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করতো তারা করোনার ভাইরাস মহামারীর দুর্যোগে পরিবার পরিজনদের নিয়ে ক্ষুদার যন্ত্রনায় নিরবে কাঁদছে।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং এর ব্যাপক বিস্তার রোধকল্পে অধিকতর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে সারাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে চলছে সাধারন ছুটি । ইতিমধ্যে সরকার কয়েক দফায় সাধারণ ছুটি বৃদ্ধি করে আগামী ৫ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে । একদিকে করোনা ভাইরাস অন্যদিকে সুন্দরবনে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হওয়ায় সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীলরা বিপাকে পড়ছে । সুন্দরবন–সংলগ্ন খুলনা জেলার কয়রা,পাইকগাছা,দাকোপ,সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি উপজেলায় বসবারসত উপকূলীয় জনপদের প্রায় লক্ষাধিক মৎসজিবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। সরকার করোনা মোকাবেলায় সুন্দরবনে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করায় জেলেরা মৎস শিকারে এখন জঙ্গলের তীরবর্তী নদী ও খালে যেতে পারছেন না।
কভিড-১৯ এর কারনে মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত উপকূলীয় এলাকা সুন্দরবন চর পাটা ও ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার রোধ এবং মাছের নিরাপদ প্রজনন ও সংরক্ষণ করতেই এই নিষেধাজ্ঞা নিশ্চিত করেছে সুন্দরবন বন বিভাগ। করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ জেলে বাওয়ালীরা নিরাপদে সুন্দরবনে মাছ ধরতে পারলেও সেটি বন্ধ থাকায় তারাও পরিবার পরিজন নিয়ে পড়েছে মানবিক বিপর্যয়ে। অবিলম্বে পারমিট চালু করার দাবি জানিয়েছে সুন্দরবন কেন্দ্রীক বন ও মৎস আহরনের উপর নির্ভরশীলরা।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চারটি রেঞ্জ শরণখোলা, চাঁদপাই, খুলনা ও সাতক্ষীরা এলাকার ইতিমধ্যে ২৫ ফুটের নীচের প্রস্তের প্রায় চার শতাধিক খালকে নিষিদ্ধের তালিকায় নেওয়া হয়েছে। তবে ২৫ ফুটের অধিক প্রস্থের খাল ও বনের নদী এলাকা এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।এ পরিস্থিতিতে চরম হতাশা আর উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার জেলে ও বনজীবিরা।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, বনের মধ্যে দিয়ে ভোলা, বলেশ্বর, শ্যালা, পশুরসহ ১৩টি বড় নদ-নদী ও ৪৫০টি ছোট খাল প্রবাহিত হয়েছে। এ সব নদী ও খালে ২১০ প্রজাতির সাদামাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও লবস্টার পাওয় যায়। এ ছাড়াও রয়েছে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন। জুলাই ও আগস্ট মাস সুন্দরবনে মাছের প্রজনন মৌসুম। এ প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের ছোট ছোট খালে মাছের আধিক্য বেশি থাকার সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু জেলে গোপনে ছোট খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে থাকে। এ কারণে বনের মৎস্য ও অন্য জলজ প্রাণীর নিরাপদ প্রজনন ও সংরক্ষণসহ ও বিষ প্রয়োগ বন্ধে এ দু’মাস সুন্দরবনের অধিকাংশ খালে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. এনামুল হক বলেন, পাস-পারমিট নিতে আসা জেলেদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতকরণে করোনার পর মাছ আহরণের জন্য জেলেদের সীমিত আকারে পাস-পারমিট দেওয়া হবে। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে বনবিভাগের পাশাপাশি সুন্দরবন সহ ব্যবস্থাপনা কমিটি, সিপিজি, ভিটিআরটি, ওয়াইল্ড টিমের সদস্য নিয়োজিত থাকবে।