সোমবার ● ২৭ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » করোনার ঝুঁকিতে মোরেলগঞ্জে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে ডা. কামাল হোসেন মুফতি
করোনার ঝুঁকিতে মোরেলগঞ্জে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে ডা. কামাল হোসেন মুফতি
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির,বাগেরহাট প্রতিনিধি :: করোনা ভাইরাস দুর্যোগের সময় ঝুঁকির মুহূর্তে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন মুফতি। করোনা ভাইরাস সংক্রমণে তথ্য সংগ্রহে একযোগে কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার ও স্বাস্থ্য সহকারীগন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। চলমান এই ঝুঁকির মধ্যেও নিরলস ভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার সরকারী হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে এ সেবা কাজ পরিচালিত হচ্ছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
আজ সোমবার ২৭শে এপ্রিল মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কয়েকটি কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক গিয়ে দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা রোগীরা নিয়মিত সেবা পাচ্ছেন।মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন মুফতি বলেছেন, আমরা যারা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী এ পেশায় রয়েছি সব কিছু জেনেই এসেছি। যে কোন দুর্যোগের সময় মানুষের সেবা প্রদান করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। ভয় পেলে চলছে না। কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী ও হেলথ প্রোভাইডারগন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ঝুঁকির মধ্যেও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এ সেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্লিনিকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ। এদেরকে এক জোড়া হ্যান্ড গ্লাফস, এক পিস হ্যান্ড সেনিটাইজার ও একটি করে নরমাল পিপিই দেয়া হয়েছে।
এসব ক্লিনিক থেকে শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিনই সেবা দেয়া হয়। গড়ে ৪৫/৫০ জন করে প্রতিদিনই প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব রোগীরা বিনামূল্য চিকিৎসা পায়। করোনা পরিস্থিতিতে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা আরও বেড়েছে।
সিএইচসিপিরা জানিয়েছেন, ভয়ঙ্কর এই পরিস্থিতিতে যেখানে চিকিৎসক, নার্সরা সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করে সেবা দেওয়ার পরও করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি চিকিৎসক মারা গেছেন এমন ঘটনাও আছে, সেখানে মাঠ পর্যায়ের এই কর্মীরা কতটুকু নিরাপদ? কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হওয়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে সিএইচসিপিরা। কারণ করোনা সচেতনতা এখনো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মধ্য তৈরি হয়নি। গ্রামের মানুষ এখনো স্বাস্থ্য বিধি না মেনে অবাধে ঘুরাফেরা করে। তাদের মধ্য সামাজিক দুরত্ব মানার প্রবণতা নাই। আর সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবহারও নাই। তাই এই মুহূর্তে ভালো মানের মাস্ক, হ্যান্ডস গ্লাবস, পিপিই, হেক্সিসল, সেনিটাইজারসহ প্রয়োজনীয় সকল উপাদান কমিউনিটি ক্লিনিকে সরবরাহ করা জরুরি।
যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সুরক্ষা সামগ্রী সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে বলা হলেও বাস্তবে সেটি এখনও সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে পৌঁছায়নি।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৮৩টি গ্রাম, একটি পৌরসভা ও ১৬ ইউনিয়নে প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার লোকের বসবাস। একটি সরকারি হাসপাতাল, ১৭ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ৫১ টি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ক্রমে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ও স্বাস্থ্য সহকারীরা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলিতে ৩০ প্রকার ঔষধ দিয়ে দুর্যোগ মুহূর্তে জ্বর, সর্দি, কাশি, ব্যথা, গর্ভ জনিতসহ বিভিন্ন রোগের উপসর্গ নিয়ে অসহায় গরীব রোগীদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।
বিদেশ ফেরত, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন আগত লোকজনদের মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তাদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ আছে কি না তা উপজেলা মেডিক্যাল টিমের মাধ্যমে নমুনা ও তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করতেছেন। সরকারী হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন ইউনিট করা হয়েছে। এ ছাড়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোগীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। এখানে রয়েছে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা।
গাবতলা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. ফারুক হোসেন হাওলাদার বলেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ক্রমে আমরা নিয়মিত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ক্লিনিকে ৩০ প্রকারের ঔষধ রয়েছে। এখানে করোনা ভাইরাস উপশম রোগের নমুনা সংগ্রহ, ডায়াবেটিস পরীক্ষা, জ্বর , প্রেসার মাপা, গর্ভ জনিত নমুনা পরীক্ষাসহ বিভিন্ন রোগের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিষয়ে সতর্কীকরণ উপদেশ দেওয়া হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে।
বিশারিঘাটা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি রেবা রানি বলেন, আমাদেরকে রোগীর খুব কাছাকাছি থেকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশীর ভাগ রোগী জ্বর সর্দি কাশি গলা ব্যাথা নিয়ে আসেন। অনেক রোগীর উপসর্গ জেনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রেফার করতে হচ্ছে। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য সহকারী এবং প্রোভাইডারদের রোগীর নমুনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অথচ কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীর উপস্থিতি বেড়েছে। অধিদপ্তরের আদেশ অনুযায়ী দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেবাদান করছে। আমরাও চাই দেশের ক্রান্তিলগ্নে আগের মতো সেবা দিতে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে সিএইচসিপিদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পিপিই সরবরাহ করা হচ্ছে না। এতে হেলথ প্রোভাইডাররা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসুস্থদের সেবা করে যাচ্ছেন।তিনি আরও বলেন, যেহেতু কমিউনিটিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই আমাদের সুরক্ষা সামগ্রীর প্রয়োজন।
সিএইচসিপি মো. ফারুক হোসেন হাওলাদার আরো বলেন, করোনা আক্রান্ত চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ প্রণোদনা ও স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি অনুপ্রেরণার পাশাপাশি এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। সেই সাথে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সিএইচসিপি দের ও এর অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমি কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই।
ঘরে থাকা গরীব ও দুস্থ্য পরিবারের পাশে বুরো বাংলাদেশ
বাগেরহাট :: বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সংকটাপন্ন কর্মহীন ঘরে থাকা গরীব ও দুস্থ্য পরিবারের মাঝে বাগেরহাটের সদরকচুয়ায় করোনায় গৃহবন্দী কর্মহীন ২২২টি অসহায় গরীব মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরন করেন বুরো বাংলাদেশ । গতকাল রবিবার (২৬ এপ্রিল)বিকালে বাগেরহাট সদরে কচুয়া উপজেলার গ্রামের ২২২টি কর্মহীন গরীব ও দুস্থ্য পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত দেবনাথ, চেয়ারম্যান কচুয়া ইউনিয়ন শিকদার হদিউজামান, চেয়ারম্যান রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়ন তাছলিমা বেগম, চেয়ারম্যান মঘিয়া ইউনিয়ন পংকজ অধিকার, চেয়ারম্যান ধোপাখালী ইউনিয়ন মকবুল হোসেন ও বুরো বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার এএম প্রভাশ কুমার কুন্ডু, বাগেরহাট শাখার বিএম মাসুদ রেজা, চিতলমারি শাখার বিএম তুহিন মিয়া, কচুয়া শাখার বিএ হরিদাস মন্ডল ।মহামরি করোনায় কর্মহীন খাদ্য সামগ্রী বিতরন কালে বুরো বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান সাহেবের নিদের্শে ছবি না তুলে খাদ্য সামগ্রী বিতরন করেন। এসময় সংক্ষিপ্ত এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, করোনা সংক্রামন থেকে এড়াতে মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়ায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আসুন আমাদের যার যতটুকু সাধ্য আছে;তাই নিয়ে এসব মানুষের পাশে দাড়াই।
জানিনা এই মহামারীতে কে কতটুকু সময় আছি। বাচব কি বাঁচব না, তা জানেন একমাত্র আল্লাহ্। তবুও সাধ্যের মধ্যে তাদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছি। বু্রো বাংলাদেশএর সকলের জন্য দোয়া করবেন।