রবিবার ● ৩ মে ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » জীবনযুদ্ধে হার না মানা একজন স্বপ্নার গল্প
জীবনযুদ্ধে হার না মানা একজন স্বপ্নার গল্প
অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই প্রতিনিধি :: একজন জীবনযোদ্ধা স্বপ্না দাশের জীবনের গল্প শুরু হয় ১৯৯৮ সালের মে মাসের কোন এক সময়, যখন তিনি চন্দ্রঘোনা কুষ্ঠ হাসপাতাল এ কুষ্ঠ রোগ নিয়ে ভর্তি হন। তাঁর বাড়ি চট্রগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলাধীন নোয়াপাড়া মাষ্টার দা সূর্য্যসেন পল্লী গ্রামে।
এরই মধ্যে কুষ্ঠ হাসপাতাল এর তত্ত্বাবধানে বিনাখরচে তার চিকিৎসা চলছে ভালোভাবেই। কিন্ত নিয়তির নির্মম পরিহাসে কুষ্ঠ রোগের কারনে তার দুই পায়ে ক্ষত দেখা যাওয়ায় ২০০৪ সালে তার দুই পা কেটে ফেলতে হয় ডাক্তারদের পরামর্শে। তবে এরই মধ্যে ভালোবেসে ফেলে হাসপাতাল এ চিকিৎসাধীন আর এক কুষ্ঠরোগী জ্যোতিষ চাকমাকে। ১৯৯৯ সালে রাউজানের স্বপ্না দাশ জ্যোতিষ চাকমাকে বিয়ে করে স্বপ্না চাকমা নামে সুন্দর সংসার শুরু করেন।
চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান ও কুষ্ঠ হাসপাতাল এর পরিচালক ডা: প্রবীর খিয়াং জানান, তাদেরকে কুষ্ঠ হাসপাতাল এর কোয়াটারে সম্পূর্ণ বিনা ভাড়ায় থাকার ব্যবস্হা করেছি দীর্ঘদিন ধরে, এই ছাড়া বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ঔষধ প্রদান করেছি তাদের।
স্বপ্না চাকমার এক ছেলে আকাশ চাকমা ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে এখন বাসের হেলপারের কাজ করে আর এক মেয়ে পূর্নিমা চাকমা চন্দ্রঘোনা বি এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ছে। প্রতিদিন হুইল চেয়ারে করে তাঁর স্বামী সহ কাপ্তাই সড়কের বনগ্রাম এলাকায় কাঁচা শাকসবজী নিয়ে বিক্রি করে জীবন ধারন করতো তাদের।
কিন্ত ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল সকলকে অকুল সাগরে ভাসিয়ে পরপারের বাসিন্দা হন তাঁর স্বামী জ্যোতিষ চাকমা। চোখে সর্ষে ফুল দেখার মতো অবস্খা তাঁর। স্বামী হারা ও দুই পা হারানো স্বপ্না থবুও থেমে থাকেনি। প্রতিদিন রোদ, ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্বপ্না হুইল চেয়ারে বসে কিছু শাকসবজী নিয়ে বিক্রি করতে বসেন রাঙ্গুনিয়া লিচুবাগান বাজারে।
স্বপ্না চাকমার সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতিদিন রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাপ্তাই সড়কের লিচুবাগান বনগ্রাম মুল রাস্তার পাশে সবজি বিক্রি করতে বসি। কোনদিন ৫০০ কোনদিন ৩০০ আবার কোনদিন ২০০ টাকা বিক্রি হয় তার। এদিকে করোনা ভাইরাসের কারনে তার ছেলে হয়ে পড়ে কর্মহীন। বাজারে আগের মতো ক্রেতা নেই। এইভাবে খুব অর্থকষ্টে ২ ছেলেমেয়েদের নিয়ে জীবনের কারনে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি।
কথা হয় বনগ্রাম এলাকার ঔষধ ব্যবসায়ী রতন কুমার নাথের সাথে, তিনি জানান প্রতিদিন এই মহিলা হুইল চেয়ারে করে তার দোকানের সামনে বসে তরিতরকারি বিক্রি করেন। কোনদিন কম কোনদিন বেশী বিক্রি হয় তার। আশেপাশে অনেক শাকসবজী বিক্রেতা হওয়ার ইদানিং বিক্রি কমেছে বলে তিনি জানান।
স্বপ্না চাকমা থেকে প্রতিদিন সবজী কিনেন বনগ্রাম হাফেজ পাড়ার অনেক বাসিন্দা জানান, সবজি বিক্রেতা স্বপ্না কখনো বেশী দাম নেন না, খুব সৎ ভাবে চলতে চেষ্টা করেন তিনি।তারা জানান শত দুঃখের মাঝেও সে হাসিমুখে থাকতে চেষ্টা করেন।
দুই পা হারানো স্বপ্না হয়তো ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাতে পারতো, কিন্ত তিনি মনে করেন,যতক্ষন তার হাত দুটি আছে এটাকে কাজে লাগিয়ে ছেলেমেয়েদের মানুষ করবেন।
জীবনযোদ্ধা স্বপ্না এই কস্টের জীবনের স্বপ্ন গুলো সব পূরণ হোক এই প্রত্যাশা রইল।