সোমবার ● ৪ মে ২০২০
প্রথম পাতা » গাজিপুর » সাপের পা নিয়ে চলছে নানা গবেষণা
সাপের পা নিয়ে চলছে নানা গবেষণা
মামুনূর রশিদ, বিশেষ প্রতিনিধি :: আমাদের সমাজে সাপ নিয়ে নানা ধরনের লোমহর্ষক কথা প্রচলিত আছে। সাপ দেখে ভয় পেলেও সাপ নিয়ে কৌতূহল আছে সব মানুষের।
সাপের পাঁচ পা দেখার প্রবাদটি খুব পরিচিত ও বহুল ব্যবহৃত একটি প্রবাদ। ছাত্র জীবনে বাংলা ব্যাকরণ বইতে আমরা অনেক বাগধারা পড়েছি। এর মধ্যে একটি বাগধারা ছিলো -সাপের পাঁচ পা দেখা। সাপের পাঁচ পা দেখার অর্থ হলো অর্থহীন কথা, দর্প করা। এত দিন আমরা জানতাম সাপের পাঁচ পা দেখা একটি কথার কথা। সাপের আবার পা আছে নাকি- এমনটাই আমরা এতো দিন জেনে এসেছি। সাপের পাঁচ পা কোন মানুষ নিজ চোখে দেখেছে বলেও শোনা যায়নি। সাপের পা নেই বলেই সে বুকে ভর করে চলাচল করে। এটাই এতকাল দেখে আসছি। কাপাসিয়ায় সাপের পা দেখাঃ সাপের পা আছে এমন কথা শুনলে অবাক হওয়ারই কথা। কিন্তু সাপের পা নেই এসব কথা মিথ্যা প্রমাণিত করে বাস্তবেই সাপের পা এর দেখা মিলেছে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায়।
গত ৩০ এপ্রিল ২০২০, গাজিপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাবুর গ্রামের মানুষ সাপের পা এর সন্ধান পেয়েছে।ওই দিন সকালে পাবুর গ্রামের দেওয়ান ও খান বাড়ি সংলগ্ন একটি টেকে স্থানীয় এক কৃষক বিরল প্রজাতির বড় আকারের সাপ দেখতে পেয়ে সাপ সাপ বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। পরে গ্রামের হেলাল উদ্দীন সহ লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে সাপের পিছনে ধাওয়া করে এবং একপর্যায়ে সাপটিকে মারতে সক্ষম হয়। এই সাপটি লম্বায় ছিলো ১২ ফুট।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো সাপটির ছিলো দুটি দৃশ্যমান পা। সে দিন এই সাপের পা দেখার জন্য অনেক উৎসুক মানুষ ভীড় করেছিল। এলাকার মানুষ সাপের পায়ের কথাই এত দিন শুনে এসেছে। জীবনে এই প্রথম সত্যি সত্যি সাপের পা দেখে বিশ্বাস করেছে মানুষ। অনেকে সাপের পা আছে বিশ্বাস করতে পারছেন আবার কেউ কেউ এটাকে সাপের পা বলতে নারাজ। অনেকে পা সদৃশ অঙ্গটাকে সাপের যৌনাঙ্গ বলে মত প্রকাশ করেছেন। তাদের ধারণা সাপটি একটি পুরুষ শ্রেণির। সেক্সচুয়াল বা সঙ্গম চলাকালীন সময়ে সাপটিকে মারা হয়েছে। এ কারণে যৌনাঙ্গ ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি। সাপের পা নিয়ে নানা গবেষণার কথাঃ সাপের পা নেই। এতো দিন মানুষ এটাই জানতেন। সাপের পা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবতই মানুষ অনুসন্ধান চালিয়ে আসছেন।
সম্প্রতি সাপের পায়ের রহস্য ও উদঘাটিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা ও যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টরি সম্প্রতি সিটি স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাপের পা রহস্যের সমাধান করেছে। সাপের পা নিয়ে গবেষণা পত্র লিখেছেন ড.হংগুইই। এ গবেষণা প্রকাশিত হয়েছিল সায়েন্স অ্যাডভান্সস জার্ণালে। তিনি এডিনবরা স্কুল অব জিওসায়েন্সেসের গবেষক। তিনি বলেন,এক সময় সাপের পা ছিলো। কিন্তু পা হারানোর বিষয়টি ঘটেছিলো যখন সাপের পূর্ব পুরুষ গর্তে প্রবেশ শুরু করে ছিলো। গবেষকরা ৯০ মিলিয়ন বছররের পুরনো ফসিল সিটি স্ক্যান করে দেখেন যে,সাপ মাটির সরু পথে প্রবেশ করার পরই তাদের পা এর প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে ফেলে। এর আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল সাপ যখন পানিতে বসবাস শুরু করে তখন তাদের পা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। আর এ ভাবেই সাপের পা বিলুপ্ত হয়ে যায়। এ ধরনের ধারণাকে অনেক গবেষক উড়িয়ে দিয়েছেন। অনেক গবেষকরা বলেন, সাপ যখন লম্বা দেহ নিয়ে মাটির সরু গর্তে প্রবেশ করা শুরু করে তখন তার পায়ের প্রয়োজন হয়না। বরং সরু গর্তে মধ্যে সাপের চলাচলের সময় পা বাধা সৃষ্টি করতে পারে। কেননা বেশিরভাগ সাপই মাটির গর্তেই বসবাস করে এবং শিকার করে বসেবসে খায়।
সম্প্রতি চীনে তিন নামে এক বয়ষ্ক মহিলার থাকার ঘরে রাতে একটি সাপ দেখতে পেয়ে ওই সাপটাকে মেরে ফেলেন। পরে তিনি লক্ষ করে দেখেন যে সাপটির একটি পা আছে। এর পর তিনি ১৬ ইঞ্চি লম্বা ওই সাপটিকে অ্যালকোহলের বোতলে সংরক্ষণ করে চীনের নানচাং প্রদেশের ওয়েস্ট নরমাল ইউনিভার্সিটির লাইফ সাইন্স ডিপার্টমেন্টে গবেষণার জন্য পাঠান। গবেষকদের ধারণা যে, এটি গুই প্রজাতির ও সাপের সংকর প্রজাতি।