মঙ্গলবার ● ৫ মে ২০২০
প্রথম পাতা » বগুড়া » করোনা’র করুনায় অচেনা বিশ্ব
করোনা’র করুনায় অচেনা বিশ্ব
মো. সাখাওয়াত হোসেন :: চীনের উহান প্রদেশ থেকে আগত করোনা নামের ভাইরাসটি এভাবে পৃথিবীকে বদলে দিবে কেউ ভাবেনি। বিশ্বের ২১০টি দেশ আক্রান্ত এ মহামারীতে। লক্ষ প্রাণের মৃত্যুর মিছিলে প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে হাজার হাজার প্রাণ। পবিত্র কাবায় বন্ধ হয়েছে হজ্জ্ব আর ওমরাহ। দুনিয়ার সকল মসজিদে সীমাবন্ধতা আরোপ করা হয়েছে ওয়াক্তিয়া নামাজ, জুম’আ, রমজান ও তারাবির নামাজে। এছাড়া সকল ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে সীমিত করা হয়েছে উপাসনাকারীদের সংখ্যা। নিকট আত্মীয়, প্রতিবেশী বাড়ীতে যাতায়াত বন্ধ। স্বজননের সৎকারে প্রিয়জন অনুপস্থিত। বন্ধ হয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে শিক্ষার্থীদের। যানবাহন চলাচলের নিষেধাজ্ঞার কারণে মাছের ড্রামে, লাশবাহী হিমগাড়ীতে নিজেকে লুকিয়ে ট্রাকে চড়ে বাড়ীতে ফিরছে মানুষ। বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব ১লা বৈশাখ পালিত হয় নিরব নিভূত ঘরে বসেই। ফলে দেশের মাঝারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রি করতে না পারায় দেশে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। মতিঝিলে প্রতিদিন হাজার কোটি টাকা লেনদেনের ব্যাংক গুলোতে নেই টাকা বা ডলার গনার ব্যস্ততা। পবিত্র রমযানে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজারে নেই ইফতারীর দোকানে সুস্বাধু আর বাহারী ইফতারী। যদিও সীমিত আকারে ইফতারীর দোকান খোলার অনুমতি পেয়েছে দোকান মালিকগণ। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের মুলগেটে তালা। বাইরে নেই তসবি আর জায়নামাযের দোকান। জন্মের ইতিহাসে এমন চিত্র দেখে নাই বলে বয়স্কদের আর্তনাদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভিডিও একগুয়ে হলেও মনের বিপরীতে নিজেকে অবরুদ্ধ রেখেছে শিশুরা। বাসার বাইরে যেতে না পারায় সংকীর্ণ ছাদ এখন তাদের প্রিয় খেলার মাঠ। অবরুদ্ধ ঘরে বসে মুক্তির ফরিয়াদ। থেকে গেছে কলকারখানা, পরিবহনের চাকা, অর্থনীতির চালিকা শক্তি বলে খ্যাত গার্মেন্টস সেক্টর, আমদানী-রপ্তানী, দেশীয় শিল্প, সেবা, কৃষি সেবা, পোল্ট্রি মৎস্য এমনকি মাঝারী ও ক্ষুদ্র শিল্প। উচ্চ বিত্তবানরা ভাবছে ভবিষ্যৎ নিয়ে নি¤œ মধ্যবিত্তবান ও মধ্যবিত্তবানদের দিন কাটছে অর্ধাহারে অথবা অনাহারে। নাবলা বেকায়দায় মধ্যবিত্তরা যাদের পেটে ক্ষুধার জালা কিন্তু হাত পাততে পাড়ছে না। মহামারীর কারণে জাতীসংঘের ওয়াল্ড ফুড প্রগ্রাম শতর্ক করে বলেছে, বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ২৬ কোটিতে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর। প্রাণের মায়া সাঙ্গ করে বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষ করোনা জয় করবে নাকি ক্ষুধাকে সিদ্ধান্তহীনতায় যোগ হয়েছে অনেক দেশের রাষ্ট্র প্রধানগণও। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে গিয়ে দুনিয়ার পরমানু অস্ত্রে শক্তিশালী দেশগুলোও মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতার কাছে আজ ধরাসয়ী। সেখানে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক সীমাবন্ধতার মাঝেও সাহস আর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। দেশের মানুষের পাশে থেকে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রশাসন ও জনগণের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছেন। টিসিবির পণ্য, দশ টাকা কেজি চাল বিক্রয়, সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হারে কৃষি ঋণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পে ১০ হাজার কোটি টাকার পূর্ণ অর্থায়নে তহবিল গঠণ ইত্যাদি জনসেবা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের লক্ষে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২৩ এপ্রিল ২০২০ তারিখ পর্যন্ত ৬৩লাখ ৩০ হাজার পরিবারের নিকট ৯৩ হাজার ১৭০ মেট্রিকটন চাল নগদ ৩৯ কোটি ৭৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। শিশু খাদ্য সহায়তা হিসেবে ১ লাখ ৫৪ হাজার
৩৬৯ পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৬ কোটি ১৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা; তথ্য সূত্র প্রথম আলো ২৩ এপ্রিল ২০২০। যদিও বিশাল জনসমুদ্রে চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়নি। তবে এতো কিছুর মাঝেও গানের কথায় বলতে হয় “নদীর একুল ভাঙ্গে ও কুল গড়ে এই তো নদীর খেলা”। পরিবেশ দূষণের মূল হোতা মানুষ সন্দেহ নেই। আর সেই মানুষ যখন বন্দী প্রকৃতি তখন মুক্ত। ভয়াবহ মাত্রায় কার্বন ও নাইট্রোজেন অক্সাইড প্রবাহের দূষণে যোগ দিয়ে প্রাণঘাতী মহামারী করোনার থাবায় মানুষ যখন আতঙ্কিত ঠিক তখনি বিপরীত চিত্র প্রকৃতিতে। রয়েছে নেদারল্যান্ড মেটোরলজিক্যাল (K.N.M.I) তথ্য মতে সাড়া বিশ্বে যান চলাচল কমেছে এক চতুথাংশ আর প্রকৃতির দূষণ কমেছে পাঁচ শতাংশ। যা বিগত ৭৫ বছরে ছিলো অসম্ভব। পৃথিবী আবারও ফিরে গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রকৃতিতে। এন্ট্রাকটিকায় বরফগলা বন্ধ হয়েছে। কক্সবাজার কলাহলমুক্ত সমুদ্র সৈকতে নীল জল রাশিতে ডলফিনের খেলা। লাল কাকড়ার দলবেধে চলা চোখ জুড়ানো লাবনী কলাতলী পয়েন্ট। এ যেন প্রকৃতির প্রাণ ফিরে পাওয়া। এগুলো লকডাউনের কারণে প্রকৃতির উপহার। ভুলে গেলে চলবেনা পাহাড় কাটা বন উজার মাত্রাতিরিক্ত কার্বোন নিশ্বরন সত্বেও সুযোগ পেয়ে প্রতারণা না করে আর্শীবাদ হিসেবে এসেছে প্রকৃতি। প্রকৃতির এ শিক্ষা নিয়ে নিরুপায় মানুষকে বাঁচতে হবে বাঁচাতে হবে দেশকে। স্বল্প পরিসরে হলেও কলকারখানার চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। অমানিশার অন্ধকারে যেন আলোর আভাস। পৃথিবীতে যুগে যুগে পঞ্জিভূত সমস্যা বিকল্পের সন্ধান দিয়েছে, এবারও দিবে। আবার ব্যস্ততার মাঝে ফিরে আসবে সবার হাসি। তবে স্বাস্থ্য বিষয়ক শতর্কতার কথা ভুলে গেছে চলবেনা। মহান আল্লাহর উপরই শেষ ভরসা। পবিত্র কোরআনের সুরা জুম’আর ৩৯নং আয়াতে বলা হয়েছে “তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইওনা”। কবির ভাষায় বলতে হয় “মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাঁসে”।
লেখক : কলামিস্ট
০১৭৪৮-৯৭২৭৯৩
E-mail: [email protected]