মঙ্গলবার ● ১২ মে ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদের উদ্যোগে বাকপ্রতিবন্ধী নারী পেলেন নতুন ঘর
জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদের উদ্যোগে বাকপ্রতিবন্ধী নারী পেলেন নতুন ঘর
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির,বাগেরহাট প্রতিনিধি :: দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার পাশে বাগানের মধ্যে ঝুপরি ঘরে থাকা সন্তানসহ বাক প্রতিবন্ধি অজ্ঞাত নারীকে সরকারি গুচ্ছগ্রামে বসতঘর দিয়েছে বাগেরহাটে উপজেলা প্রশাসন।
সোমবার বিকেলে বারাকপুর গ্রাম থেকে বাগেরহাট সদর উপজেলা প্রশাসণের গাড়িতে করে অজ্ঞাত ওই নারীকে (মরিয়ম) সাড়ে তিন বছর বয়সী সন্তান আব্দুল্লাহসহ বিষ্ণপুর গুচ্ছ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার জন্য আগে থেকে নির্ধারিত ঘরে তুলে দেওয়া হয়।
এসময় বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তানজিল্লুর রহমান, ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আকতারুজ্জামান বাচ্চু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিজিয়া পারভীন, সুপ্তি মহিলা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ঝিমি মন্ডলসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় জেলা প্রশাসণের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধি মরিয়ম ও তার সন্তানকে খাদ্য সহায়তা ও পরিধানের জন্য পোশাক দেওয়া হয়। স্থানীয় সুপ্তি মহিলা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ঝিমি মন্ডল সহজে রান্নার জন্য একটি উন্নত চুলা প্রদান করেন মরিয়মকে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় তিন বছর ধরে সদর উপজেলার বারাকপুর গ্রামের জনৈক শহিদুলের বাগানে একটি ঝুপরি ঘর তৈরি করে নিজের ৬ মাস বয়সী শিশু সন্তান নিয়ে থাকতেন বাক প্রতিবন্ধি ওই নারী। সেখানে স্থানীয় লোকজন ও এলাকাবাসীর দেওয়া সামান্য খাদ্যে কোন মতে বেঁচে ছিলেন তিনি।
বাক প্রতিবন্ধি নারীকে স্থান দেওয়া শহিদুল বলেন, প্রায় তিন বছর আগে থেকে ওই নারী আমার বাগানে থাকত। যখন যা পারতাম দিতাম। এলাকার অনেকে ওকে সহযোগিতা করেছে। ও আমাদের কথা বুঝলেও আমরা ওর কোন কথা বুঝতাম না। কখনও কারও জিনিসপত্র চুরি করত না সে। এলাকাবাসী ওর ছেলের নাম রাখে আব্দুল্লাহ। ওর ছেলের বয়স এখন সাড়ে তিন বছর। আজ ছেলেসহ সে একটি স্থায়ী নিবাস পেয়েছে এজন্য উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তানজিল্লুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে জানতে পারি বারাকপুর এলাকায় অজ্ঞাত এক নারী ঝুপরি ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে বিষয়টি জানার পরে আমি ঘটনাস্থলে আসি। জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের সাথে কথাবলি। কিন্তু সবথেকে বড় সমস্যা ছিল বাক প্রতিবন্ধি ওই নারীর কোন পরিচয় ছিল না। তারপরও সবকিছু উপেক্ষা করে ওই নারীকে পুনঃবাসনের জন্য কাজ শুরু করি।
বিষ্ণপুর ইউনিয়নের সরকারি গুচ্ছগ্রামে আমরা ওর জন্য একটি আধাপাকা ঘর তৈরি করে দেই। গুচ্ছগ্রামে রফিকুল ইসলামকে আব্দুল্লাহ ও তার মায়ের অভিভাবক হিসেবে নিয়োজিত করি। মরিয়ম নাম দিয়ে বিষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধণ সম্পন্ন করি। ওর সন্তানেরও জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে। সকলের চেষ্টায় মরিয়মকে আমরা তার স্থায়ী নিবাসে তুলে দিয়েছি। তার সকল প্রকার সরকারি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
পরিবর্তন এর অঙ্গিকার নিয়ে প্রতিষ্ঠিতি হলো “তারুণ্যের আলো
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে এবং বর্তমান সময়ের তরুনদের কে মাদকমুক্ত, নৈতিকতা সম্পূর্ন আদর্শ মানবিক নাগরিক তৈরীর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে সমাজিক সেচ্ছাসেবী সংগঠন “তারুণ্যের আলো, মোরেলগঞ্জ”। সংগঠন এর তিন স্বপ্নদ্রষ্টা হলো – নাজমুস সাকিব, তাওহীদুল ইসলাম ও মুসাদ্দিক বিল্লাহ তামিম। এদের হাত ধরে মঙ্গলবার (১২ই মে) সাংগঠনিক ভাবে “তারুণ্যের আলো, মোরেলগঞ্জ” এর আত্মপ্রকাশ পায়। মেধার বিকাশের পাশাপাশি নৈতিকতার বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমেই একটা সুন্দর ও সমৃদ্ব মোরেলগঞ্জ উপজেলা তৈরী সম্ভব বলে মনে করেন তারুণ্যের আলো, মোরেলগঞ্জ এর তিন স্বপ্নদ্রষ্টা। কোভিড১৯ পরিস্থিতিতে উপজেলার অসহায় মানুষের পাশে থাকার অঙ্গিকার নিয়ে এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়ে সংগঠনের যাত্রা শুরু করেছে। ১ম কর্মসূচী হিসাবে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে উপজেলার কমপক্ষে ১০০ পরিবার এর কাছে “ঈদ উপহার সামগ্রী” পৌঁছে দেওয়ার উদ্দ্যোগ নিয়েছে। এজন্য তারা সমাজের সামর্থ্যবান ও এলাকার জনপ্রতিনিধি সকলকে তাদের পাশে থাকার বিশেষ আহবান জানিয়েছেন। এবং মোরেলগঞ্জ উপজেলার সকলের নিকট দোয়া এবং সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন।
সুন্দরবনে হরিণ শিকারিদের বিরুদ্ধে মামলা করে বনরক্ষীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে
বাগেরহাট :: সুন্দরবনের হরিণ শিকারিদের বিরুদ্ধে মামলা করে উল্টো ফেঁসে গেছে বনরক্ষীরা। চোরা শিকারিদের পাল্টা মামলার শিকার হয়ে এখন একপ্রকার পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের। চোরাদের এমন ঔদ্ধত্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। কথায় বলে চোরের মায়ের বড় গলা। ঠিক তেনমি এক ঘটনায় বিপাকে পড়েছে খোদ বন বিভাগ।
চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি বাগেরহাটের শরণখোলা থানায় চার হরিণ শিকারি ও অবৈধ কাঁকড়া আরণকারী পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার ধাবড়ী গ্রামের আ. হক শেখের ছেলে ইউসুফ শেখ (৩৫) এবং বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার বাঁশতলা গ্রামের হাছেন মুসুল্লির তিন ছেলে আ. হামিদ মুসুল্লি (৩৫), হানিফ মুসুল্লি (৩৩) ও আসাদ মুসুল্লির (৩০) নামে মামলা দায়ের করে বন বিভাগ। এ ঘটনার সাড়ে তিন মাস পর এসে গত ১ মে চোরেরা জেলে পরিচয়ে বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে শরণখোলা থানায় পাল্টা মামলাটি দায়ের করে।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) এনামুল হক জানান, গত ১৬ জানুয়ারি রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের তাম্বলবুনিয়া টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা নিয়মিত টহলকালে বনের কলামুলা এলাকায় দুটি ডিঙি নৌকা দেখতে পেয়ে চ্যালেঞ্জ করে। বনরক্ষীরা ওই চার ব্যক্তিকে আটকে নৌকা দুটিতে তল্লাশি করে হরিণ শিকারের ফাঁদ, আহরণ নিষিদ্ধ কাঁকড়া ও বেশ কিছু কাঁকড়া ধরা বাঁশের চাই (চারো) জব্দ করে। এ সময় ওই চোরা শিকারিরা অবস্থা বেগতিক দেখে বনরক্ষীদের ওপর হামলা চালিয়ে বনে পালিয়ে যায়। তাদের হামলায় বনরক্ষী আবুল বাশার ও মোতালেব হোসেন গুরুতর আহত হন।
এ ঘটনায় ১৭ জানুয়ারী তাম্বলবুনিয়া টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বাদী হয়ে শরণখোলা থানায় চারজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৫, ধারা ৩৩২, ৩৫৩, ৩০৭, ৩৭৯, ৪২৭, ৫০৬ পেনাল কোর্ট।
অপরদিকে, আসামিদের পক্ষ নিয়ে মোংলা উপজেলার মিঠাখালী গ্রামের সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে শরণখোলা থানায় একটি পাল্টা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তাম্বলবুনিয়া টহল ফাঁড়ির ওসি মিজানুর রহমান, বিএম আবুল বাশার ও মোতালেব হোসেনকে আসামি করা হয়।
উভয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) শরণখোলা থানার এসআই স্বপন কুমার জানান, বন বিভাগের দায়ের করা মমলাটি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়েছে। অপর মামলাটির তদন্ত চলছে। শরণখোলা থানার ওসি এস কে আব্দুল্লাহ আল সাইদ বলেন, মেডিক্যাল সার্টিফিকেট নিয়ে এসে মারপিটের ঘটনা বর্ণনা করায় মামলা।
করোনার ভয়কে উপেক্ষা রাতভর চেষ্টায় বাঁধ নির্মাণ,১০ গ্রামের মানুষ রক্ষা পেল
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের শরণখোলায় করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে রাতভর চেষ্টা চালিয়ে নির্মাণ করা হয় বাঁধটি শরণখোলা ইউএনওর প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ভাঙা বাঁধ দিয়ে বলেশ্বরের প্রবল জোয়ারের পানি একবার ঢুকে পড়লে প্লাবিত হতো গ্রামের পর গ্রাম। ব্যাপক ক্ষতি হাতে পারতো শত শত পুকুর, মাছের ঘের, ঘরবাড়ি, ফসলের। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের তাৎক্ষণিক প্রচেষ্টায় বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় বাঁধসংলগ্ন ১০টি গ্রাম। অন্তত ওই রাতের জন্য স্বস্তি ফিরে পায় উৎকণ্ঠিত বাঁধের পাশের মানুষ। আকস্মিক ভাঙনের খবর পেয়ে রবিবার দুপুরে বাগেরহাট-৪, আসনের সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য এ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলণ বেড়িবাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছেন ও তার নির্দেশনা অনুযায়ীতার উপস্থিতেনির্মাণ কাজ শুরু।
ঘটনাটি গত শনিবার (৯ মে) রাতের। ওইদিন রাত ৮ টার দিকে বাগেরহাটের শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ সাউথখালীর গাবতলা আশার আলো মসজিদের সামনের বাঁধ ধসে প্রায় ১০০ ফুট সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। তখন বলেশ্বরে ভাটির টান। জোয়ার এলেই ওই ভাঙা বাঁধ দিয়ে হু হু করে বলেশ্বরের নোনা জল ঢুকে পড়বে। ওই মুহূর্তে ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে বাঁধ ভাঙার খবর আসে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিনের কাছে। তিন ছুটে যান সেখানে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা বলেন জেলা প্রশাসকের সাথে। তার নির্দেশনা অনুযায়ী এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে বাঁধটি দ্রুত মেরামতের পরিকল্পনা করেন। খবর দেন পানিউন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানকাজে নিয়োজিত উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) মাঠ কর্মকর্তাদের।
প্রথমে তারা আসতে অনিহা প্রকাশ করলেও ইউএনওর চাপে এস্কেভেটর মেশিন নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসতে একপ্রকার বাধ্য হয় তারা। ইউএনও’র তদারকিতে শুরু হয় জোয়ারের পানিরোধে রিংবাঁধের কাজ। এ সময় ইউএনও মনোবল জোগাতে গাবতলায় ছুটে যান রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলনসহ কয়েকজন গণমাধ্যকর্মী।
এদিকে রমজান মাস। রোযার সাহরীও খেতে হবে। রাত যতো গভীর হচ্ছে, সাহরীর সময়ও ততো ঘণিয়ে আসছে। তখন এগিয়ে আসে স্থানীয়রা। তাৎক্ষণিকভাবে শুরু করে সাহরীর জন্য মুরগি-খিঁচুড়ি রান্না। পাল্লাদিয়ে চলছে বাঁধের কাজ। এসই সাথে ফুঁসছে বলেশ্বরের জোয়ারের পানি। ভাগ্য প্রসন্ন, তাই জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ার আগেই সম্পন্ন হয় রিংবাঁধের কাজ। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সংশ্লিষ্টরা। এর পর ভাঙা বাঁধের পাশেই আশার আলো মসজিদে বসে সাহরী সারেন ইউএনও ও তার সঙ্গীরা। একজন ইউএনওকে রাত জেগে মানুষের জান-মাল রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজের তদারকি করতে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে গ্রামবাসীরা।
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ খান (৬৫), আবুল কালাম হাওলাদার (৪৫), ছগির হাওলাদার (৩৫) আবেগ ও উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেন, ওই রাতে ইউএনও স্যার ছুটে না এলে আমাদের বলেশ্বরের পানিতে ডুবে মরতে হতো। আমরা উপস্থি থেকে দেখেছি তার মানবিকতা। তিনি আমাদের জন্য যে কষ্ট করেছেন তার ঋণ আমরা কোনোদিন শোধ করতে পারবো না।
দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আ. বারেক হাওলাদার (৮৫) জানান, বলেশ্বরের ভাঙন তাদের নিঃস্ব করেছে। প্রতিবছর কমপক্ষে দুই-তিনবার বাঁধ ভাঙে। এর পর নামমাত্র রিংবাঁধ দিয়েই দায়িত্ব এড়িয়ে যায় সংশ্লিষ্টরা। অথচ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়ায় বছর বছর তাদের সহায়-সম্পদ নদীতে গিলে খাচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধা বারেক হাওলাদার আরো জানান, বগী, দক্ষিণ সাউথখালী ও গাবতলা গ্রামের শত শত মানুষ ভাঙনে শিকার হয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। তার বাপ-দাদাদের প্রায় সোয়াশো বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙতে ভাঙতে এখন মাত্র দুই বিঘা জমি আছে তাদের। দ্রুত ভাঙন রোধের উদ্যোগ না নিলে তাও যেকোনো সময় শেষ হয়ে যাবে।
সাউথখালী ইউনিয়নের ছয় নম্বর দক্ষিণ সাউথখালী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন হাওলাদার জানান, ওই রাতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পরই এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আশপাশের প্রায় ৩০০ পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। এরই মধ্যে নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সবাইকে সাহস যোগান।
তিনি বলেন, রাতের মধ্যে যেকোনো উপায়ে বাঁধ মেরামত করা হবে। তার তাৎক্ষণিক উদ্যোগে সবাই রক্ষা পায়। তা না হলে জোয়ারের পানি ঢুকে বগী, সাউথখালী, গাবতলা ও চালিতাবুনিয়া গ্রামের শত শত পুকুর, মাছের ঘের, মাঠের বোরোধান ও ক্ষেতখামার নষ্ট হওয়াসহ ঘরবাড়ি তলিয়ে যেতো।
ওই ইউপি সদস্য জানান, শরণখোলার সবখানেই টেকসই বেড়িবাঁধের কাজ চলছে। অথচ ঝুঁকিপূর্ণ এবং ভাঙন কবলিত বগী-গাবতলায় কোনো কাজ হয়নি। এখানে নদী শাসন করে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হোসেন জানান, শরণখোলায় পাউবো’র ৩৫/১ পোল্ডারে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানাধিন বেড়িবাঁধ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতায় সাউথখালীর সাত কিলোমিটার বাঁধ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। এ পর্যন্ত সাতবার বেড়িবাঁধ স্থানান্তর করা হয়েছে। সাউথখালীর বলেশ্বর পাড়ের মানুষের ঘর-বাড়িসহ কয়েক হাজার এক জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
অন্যদিকে, বার বার বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে জমি অধিগ্রহনের কারনে মানুষ ভূমিহীন হয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে। একমাত্র নদী শাসন ছাড়া কোনোভাবেই এখানে বাঁধ রক্ষা করা যাবে না। ওই রাতে ইউএনও’র তাৎক্ষণিক উদ্যোগের প্রসংশা করেন তিনি।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ওই রাতে ভাঙনের খবর পেয়ে মহাদুর্যোগ করোনাকে উপেক্ষা করে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। তখন বাঁধের পাসের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখতে পেয়েছি। তারা আশ্রয়কেন্দ্র যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে আমি তাদের বাঁধ মেরামতের আশ্বাস দিলে তারা সাহস পায়। এ সময় ডিসি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী সিইআইপি মাঠ কর্মকর্তাদের খবর দিয়ে এস্কেভেটর মেশিন এনে রাত জেগে রিংবাঁধ নির্মাণ করি। রোজার সাহরী ওখানেই সারি। যে কোনো দুর্যোগ বা মানুষের বিপদে পাশের থাকা এবং তাদের সগযোগিতা করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। সময়মতো বাধ নির্মাণ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, শরণখোলার বেড়িবাঁধের ভাঙনের খবর শুনে দ্রুত ব্যবস্থার নেওয়ার জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ায় বড় ধরণের ক্ষতির হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। ঝুঁকিপূর্ণ বগী ও দক্ষিণ সাউথখালী এলাকায় নদী শাসন করে শিগগইি কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া জেলার অন্য যেসব এলাকার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে তাও মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।
এসবিএসি ব্যাংকের পক্ষে খাদ্য সমগ্রী বিতরন
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের ফকিরহাটে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখুন-ঘরে থাকুন, এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে নিয়ে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কর্মাস ব্যাংক লিমিটেড (এসবিএসি) এর সিএসআর প্রকল্পের আওতায় বেতাগা ইউনিয়নবাসির জন্য করোনা পরিস্থিতিতে ২শতাধিক অসহায় দুস্থ্য ও গরীব পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে বেতাগা ইউনিয়ন পরিষদ চত্তরে এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শিল্পপতি এস এম আমজাদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে এ খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুস আলী শেখ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শাহানাজ পারভীন।
এতে অন্যান্য্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেতাগা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আনন্দ কুমার দাশ, লখপুর ইউনিয়ন আ,লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ গোলাম রব্বানী, প্যানেল চেয়ারম্যান নির্মলেন্দু দেবনাথ, ইউপি সদস্য মোঃ আসাদুজ্জামান তুহিন, জামাল উদ্দিন ফকির, অসিত কুমার দাশ, পুষ্পল দাশ, আব্দুর রাজ্জাক, সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা সন্ধ্যা রানী দাশ, রাফেজা বেগম ও কামরুন্নাহার নীপা। অনুষ্ঠানে ২শতাধিক পরিবারের মাঝে চাউল ডাল তেল লবন আলু ছোলা পিয়াজ সহ ১৩প্রকারের খাদ্য সামগ্রী বিতরন করা হয়।
করোনায় মেম্বরকে ভোট না দেয়ায় ত্রান বঞ্চিত সাড়ে ৪ শতাধিক মানুষ
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের মোংলা চাদঁপাই ইউনিয়নেরমেম্বরের পক্ষে নির্বাচন না করায় সরকারের দেয়া করোনায় দুর্ভোগে পড়া মানুষদের জন্য ত্রান সামগ্রী থেকে বঞ্চিত হয়েছে একই ব্যারাকে বসবাসকারী প্রায় সাড়ে চার শতাধিক মানুষ।নারকেলতলা আবাসন প্রকল্পের ৭৫ ব্যারাকের করোনা ভাইরাসে দুর্ভোগে পড়া এ সকল অসহায় ও কর্মহীন মানুষগুলো সকল প্রকার ত্রান বা খাদ্য সামগ্রী থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। মঙ্গলবার সময় টেলিভিশনের সংবাদকর্মীদের দেখেই এমন অভিযোগ করেন আবাসনে বসবাসকারী অসহায় নারী পুরুষ ও শিশুরা।
আবাসনে বসবাসকারীদের অভিযোগ, চাদঁপাই ইউনিয়নের নারকেলতলা এলাকায় পাশাপাশি চারটি আবাসন প্রকল্প। সেখানে একটিতে (৭৫ ব্যারাাকে) থাকা প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক মানুষের বসবাস। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু থেকে ত্রান দেয়ার কথা বলে স্থানীয় ইউপি সদস্যের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নেয়া হলেও সরকারী বা বেসরকারী ত্রান সামগ্রী থেকে বঞ্চিত রয়েছে তারা। তাদের অভিযোগ, সরকারী ও এনজিওদের খাদ্য সামগ্রী দিবে এমন আশ্বাসের প্রায় দুই মাস যাবত প্রতারনা করে যাচ্ছে এলাকার প্রভাবশালী ইউপি মেম্বার ও তার সহযোগীরা। এব্যাপারে কোন প্রতিবাদ করলে তাদের উপর নেমে আসে হামলা ও অত্যাচার। আর ত্রান না পাওয়ার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়ে অসহায় এ মানুষগুলো পড়েছে চরম বিপদে।
আবাসনের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম জানায়, সকলের সাহায্যের জন্য ত্রান সামগ্রী না পাওয়ার বিষয়টি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাহাত মান্নানকে জানালে তিনি তাৎক্ষনিক ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা তারিকুল ইসলামকে ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। চেয়ারম্যান স্থানীয় ইউপি মেম্বরকে জানালে অভিযোগকারীর স্বামীকে বাজারে ডেকে বেধরক মারপিট করে মেম্বরের সহযোগীরা। সরকারী বা বেসরকারী কোন সহায়তার জন্য অন্য কোথাও অভিযোগ করবেনা এ প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমা পায় বলে জানায় এ ভুক্তভোগী নারী।
তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ হারুন মল্লিকের দাবী, অন্য তিনটি ব্যারাকের কর্মহীন ও খাদ্য সংকটে পড়া লোকজনকে কিছুটা ত্রান সামগ্রী দেয়া হয়েছে আর ৭৫ ব্যারাকে বসবাসকারীদের একটি এনজিওর পক্ষ থেকে ভাল মানের খাদ্য সামগ্রী দেয়ার জন্য তালিকা দেয়া হয়েছে। ওখান থেকে পেলেই আর কোন অভিযোগ থাকবেনা বলে জানান এ ইউপি সদস্য।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাহাত মান্নান জানান, নারকেলতলা আবাসনে ৭৫ ব্যারাকের ত্রান না পাওয়ার বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। তবে ওই আবাসনে বসবাসকারীরা ক্যানো এখনও সরকারী ভাবে খাদ্য সামগ্রী পায়নি এব্যাপারে খোজ নিয়ে ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, নারকেলতলা ৪টি আবাসনে প্রায় আড়াই হাজার লোকের বসবাস কিন্ত করোনায় কর্মহীন হয়ে পরা সকলেই কমবেশী ত্রান সামগ্রী পেলেও ৭৫ ব্যারাকের সবাই বঞ্চিত সকল প্রকার ত্রান সহায়তা খেকে।
বাগেরহাটে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে চুরি
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুবীর কুমার মিত্রের নিজস্ব বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি সংঘঠিত হয়েছে। চোরেরা ভবনের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে নগদ টাকা স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মালামাল সহ প্রায় আড়াই লক্ষাধীক টাকার মালামাল চুরি করে পালিয়েছে। সোমবার রাতে পিলজংগ ইউনিয়নের টাউন নওয়াপাড়া এলাকায় এঘটনা ঘটে।
এঘটনায় মডেল থানায় ১টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগী জানান, প্রতিদিনের মত তিনি রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এসময় অজ্ঞাত চোর দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে আলমারিতে থাকা নগত ১০হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করে পালিয়ে যায়। যার আনুমানিক বাজার মুল্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা।
এঘটনায় তিনি নিজে বাদি হয়ে মঙ্গলবার বিকালে মডেল থানায় ১টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বাগেরহাটে মোরেলগঞ্জে নিষিদ্ধ পলিথিন ভস্মিভূত
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে মঙ্গলবার বিকালে বিপণন নিষিদ্ধ অর্ধলক্ষাধিক টাকার পলিথিন উদ্ধার করে ভস্মিভূত করা হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.কামরুজ্জামান ও থানা অফিসার ইন চার্জ কেএম আজিজুল ইসলাম এর নেতৃত্বে একটি টিম মোরেলগঞ্জ পৌর বাজারে অভিযান চালায়।
এসময় বাজারের মুদি পট্রি এলাকায় মনির হোসেনের দোকান থেকে বিপণন নিষিদ্ধ ৪ মন পলিথিন উদ্ধার করা হয়। অভিযানের খবর টের পেয়ে দোকানী মনির পালিয়ে যায়। পরে এসব পলিথিন উপজেলা শিক্ষা অফিস সংলগ্ন মাঠে ভস্মিভূত করা হয়।