রবিবার ● ১৭ মে ২০২০
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » ঐতিহাসিক ‘ফারাক্কা দিবস’ ও ভাসানীর সংগ্রাম
ঐতিহাসিক ‘ফারাক্কা দিবস’ ও ভাসানীর সংগ্রাম
সাইফুল হক :: গংগা নদী থেকে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে এবং আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানির উপর বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যার দাবিতে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৭৬ সালের এই দিনে রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠের বিশাল জমায়েত শেষে ফারাক্কা অভিমুখে লাখো প্রতিবাদী মানুষ নিয়ে মওলানার ‘লং মার্চ ‘। ১৭ মে চাপাইনবয়াবগঞ্জ এর কানসাটে সমাবেশে ভারত সরকারকে হুশিয়ারি ও ‘আল্টিমেটাম ‘ দিয়ে লংমার্চ শেষ হয়।
বস্তুত এই লংমার্চ এর মধ্য দিয়ে ‘বাংলাদেশের মরণফাঁদ’ ফারাক্কা বাঁধ ও ভারতের বাংলাদেশ বিরোধী আগ্রাসী তৎপরতা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের মনভাব প্রতিফলিত হয়।এই প্রেক্ষাপটে পরবর্তীতে গংগার পানিবণ্টন নিয়ে একটা ‘লামসাম’ চুক্তিতে আসতে ভারত খানিকটা বাধ্য হয়।
কিন্তু তারপর গত ৪৪ বছরে অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদী থেকে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার বন্ধ হয়নি,বরং নদীর উজানে অসংখ্য বাঁধ,আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প প্রভৃতি নানা ভাবে পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ শুকনো মওশুমে প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ছে, চলছে মরুকরণ, মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে দেশের কৃষিসহ প্রাণ -প্রকৃতি - জীববৈচিত্র্যে। তার উপর আবার গেল বছর দিল্লিতে তিস্তার পানি আনতে যেয়ে দিয়ে আসা হল ফেণী নদীর পানি।
সমতা,ন্যায্যতা,আন্তর্জাতিক আইন ও পারস্পরিক স্বার্থের স্বীকৃতির ভিত্তিতে ভারতের আধিপত্যবাদী ভুমিকার কারণে বাংলাদেশ এখনো তার অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই অধিকার আদায়ে আরো ক’টি লংমার্চ এখন জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে।
এদেশের কোটি কোটি নিপীড়িত বঞ্চিত মজলুম মানুষের কন্ঠস্বর ছিলেন মওলানা। এদেশের গণমানুষের স্বাধীনতা আর মুক্তির আকাংখা আর আকুতি তার মত করে আর কেউ বুঝতে পারেননি।তিনি ছিলেন এই গণমানুষের আত্মার আত্মীয়। এই মানুষের আকাংখা আর চাহিদা তিনি বুঝতেন সবার আগে,অন্যদের যা বুঝতে কয়েক বছর বা দশক লেগে যেত।
মওলানার এই লড়াই আজ আরো প্রাসঙ্গিক, আরো জরুরী। মওলানার বাংলাদেশের মানুষেরা অধিকার আর ইনসাফ প্রতিষ্ঠার এই লড়াইকে নিশ্চয়ই আরো জোরদার, আরো বেগবান করবেন।
‘ ৭০ সালে ১২ নভেম্বর দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ১০ লক্ষাধিক মানুষের করুন মৃত্যুর পর পাকিস্তানি শাসকদের দিকে অংগুলি নির্দেশ করে মওলানা উপদ্রুত অঞ্চল থেকে গর্জে উঠেছিলেন, প্রবল ক্ষোভের সাথে দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন “ওরা কেউ আসেনি ” ( দৈনিক পূর্বদেশ)।তারপর ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলন আরো জোরদার করার।
ঝড়, বন্যা,জলোচ্ছ্বাসহ যে কোন দূর্যোগেও মওলানা ছিলেন মানুষের পাশে, সবার আগে।
করোনাকালের এই গভীর অনিশ্চিত দুঃসময়েও জীবনের দাবি আর মুক্তির পথে ভাসানচরের এই ভাসানী, এই চিরদ্রোহী মওলানা আমাদের আলোরদিশারী, অনুপ্রেরণার বাতিঘর।
যুগ যুগ জিও তুমি মওলানা ভাসানী।
লেখক : সাইফুল হক, সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটি।