রবিবার ● ১৭ মে ২০২০
প্রথম পাতা » ঢাকা » করোনায় মৃতদের দাফনে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবীরা
করোনায় মৃতদের দাফনে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবীরা
ঢাকা :: করোনায় আক্রান্ত হয়ে কিংবা করোনার উপসর্গে মৃতদের দাফন ও সৎকারে নীরবে কাজ করে যাচ্ছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের একদল স্বেচ্ছাসেবক। শতাধিক স্বেচ্ছাসেবককে দাফনকাজে প্রশিক্ষণ দিয়ে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই প্রস্তুত কোয়ান্টামের কর্মীরা। ফোন পেলেই ঝটপট প্রস্তুত হয়ে যান। করোনায় মৃতদের বিদায়বেলায় শেষ সম্মান জানাতে কখনো মুগদা হাসপাতাল, কখনো ঢাকা মেডিকেল, কখনো মিরপুর, কখনো উত্তরা, কখনোবা মৃতের বাসায়। দিনরাত নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছে নিবেদিতপ্রাণ মানুষগুলো।
কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবক দল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিধি মেনে হাসপাতাল বা বাসায় গিয়ে মৃতদের ধোয়ানো, ওযু করানো, কাফনের কাপড় পরানো সম্পন্ন করে । এরপর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) নির্ধারিত বিশেষ ব্যাগে লাশ প্যাকেট করে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় সরকার নির্ধারিত কবরস্থানে। সেখানে জানাজা পড়ানো হয় সাধারণ মৃহদেহের মতোই। কবরস্থ করার পর মৃতের জন্যে করা হয় আন্তরিক দোয়া।
কোয়ান্টামের করোনায় দাফন কার্যক্রম শুরু হয় গত ৭ এপ্রিল। ১৫ মে পর্যন্ত ঢাকায় ১২৯টি এবং ঢাকার বাইরে ২০টির অধিক দাফন ও সৎকার সম্পন্ন করে কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবক দল।
এ প্রসঙ্গে দাফন কার্যক্রমের সমন্বয়ক ছালেহ আহমেদ জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশেষ পিপিইসহ সুরক্ষা পোশাক পরেন তারা। সৎকারের পুরো প্রক্রিয়ায় ৮০% অ্যালকোহল, ৬% হাইড্রােজেন-পার-অক্সাইড এবং হাইফো ক্লোরাইড সলিউশন ব্যবহার করা হয়। শুধু নিজেদের সুরক্ষাই নয়, হাসপাতালে যেখানে মরদেহ থাকে সেই স্থানসহ কবরস্থানের যে এলাকায় কাজ করেন- পুরো এলাকা জীবাণুনাশক ব্যবহার করে সুরক্ষা দেয়া এবং প্রতিবার কাজ শেষে নিজেদের পরনের পিপিইসহ অন্যান্য পরিধেয় জিনিসপত্র তাৎক্ষণিক পুড়িয়ে পরিবেশ সুরক্ষিত রাখতে সচেতন থাকেন স্বেচ্ছাসেবক দল।
দাফন বা সৎকার কাজে ব্যবহৃত হয় ২৭ ধরনের উপকরণ। পিপিই, মাস্ক, সেফটি গাস, ফেস শিল্ড, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গাভস, হেবি গাভস, নেক কভার, গামবুট, মরদেহের কাফনের কাপড়, মরদেহ বহনের জন্যে বিশেষ বডি ব্যাগ ইত্যাদি উলেখযোগ্য। কোনো সরকারি বা অন্য কোনো অনুদান নয়; পিপিই সহ সকল প্রকার জীবাণুনাশক, কাফনের কাপড়, ব্যাগসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের পুরো খরচ কোয়ান্টামের স্বেচ্ছা অর্থায়নে সম্পন্ন হয়।
তিনি আরো জানান, কোয়ান্টামের পক্ষ থেকে শুধু মুসলিমই নয়, সনাতন ধর্মের মৃতদেহ সৎকারের জন্যেও আলাদা টিম কাজ করছে। মহিলা মৃতদেহের জন্যে রয়েছে কোয়ান্টামের মহিলা স্বেচ্ছাসেবী দল।
মানবিক আবেদন জানিয়ে সংশিষ্ট দায়িত্বশীল ছালেহ আহমেদ জানান, শেষবেলায় আপনজনের সৎকারে স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি এগিয়ে আসুক পরিবারের মানুষজন। মমতা নিয়ে পাশে থাকুক স্বজনেরা।
দাফন কার্যক্রমের পাশাপাশি করোনাকালে পিপিই বিতরণেও এগিয়ে আসে কোয়ান্টাম। দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে সংগ্রহ করে উন্নত মানের কয়েক হাজার পিপিই সেট। ঢাকাসহ সারাদেশের পাঁচ শতাধিক চিকিৎসক এবং ঢাকার অনেকগুলো সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে তাদের চাহিদামতো বিনামূল্যে পৌঁছে দেয় এই পিপিই। পিপিই-র এই সরঞ্জামাদি তৈরি, সংগ্রহ ও সেট প্রস্তুত করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা।