রবিবার ● ১৭ মে ২০২০
প্রথম পাতা » কৃষি » ভূট্টা চাষির মুখে ফুটেছে হাঁসির ঝিলিক
ভূট্টা চাষির মুখে ফুটেছে হাঁসির ঝিলিক
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: উত্তরাঞ্চলের শষ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে এবার রেকর্ড পরিমান জমিতে ভূট্টা চাষ করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে এখন আগাম জাতের ভূট্টা কর্তন শুরু হয়েছে। কর্তনকৃত ভুট্টার বাম্পার ফলনে ও ভালো দামে কৃষকে মুখে ফুটেছে হাঁসির ঝিলিক।
উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ও নদীর তীর জুড়ে এখন ভূট্টা কর্তনে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা। উপজেলার প্রতিবারের ন্যায় এবার বন্যা না হওয়া ও অনুকুল আবহাওয়া, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বল্প খরচে যথাসময়ে কৃষকরা এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন ও ভাল দাম পেয়ে আনন্দিত।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবারে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে লক্ষ্যামাত্রা ছাড়িয়ে অধিক জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। ভুট্টা চাষে খরচ কম অথচ ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে ভূট্টা চাষের আগ্রহ বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
উপজেলার হাতিয়াপাড়া গ্রামের খলিলুর রহমান বলেন, এলাকার যেসব জমিতে পূর্বে বোরোচাষ করা হত সেসব জমির অনেক গুলোতেই আমরা এবার ভুট্টাচাষ করেছি। বোরোচাষে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি অথচ যখন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয় তখন ধানের বাজারে ধস নামে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচই উঠেনা। কিন্তু ভূট্টার উৎপাদন খরচ যেমন কম দামও তেমন বেশি থাকে। এ জন্য আমরা ভুট্টা চাষে বেশি ঝুঁকে পড়েছি। এবারে ভূট্টার ফলন ও দাম ভাল পাওয়ায় আমরা খুশি।
উপজেলার ক্ষিদ্র কালিকাপুর গ্রামের কৃষক আকরাম হোসেন বলেন, আমাদের এলাকা আলু চাষের জন্য দীর্ঘদিন থেকে বিখ্যাত। উপজেলার সিংহভাগ আলু আমাদের এলাকায় উৎপন্ন হয়ে থাকে। গতবার আলুচাষে লোকসানের শিকার হয়েছি। মৌসুমের শেষদিকে আলুর দাম বাড়লেও এর মুনাফা কৃষকরা পায়নি। মুনাফা পেয়েছে মজুদদাররা। তাই এবার ভূট্টা চাষ করেছি অনেক জমিতে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের কালিকাপুর ও শলিয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কে এম মাহবুব লিংকন বলেন, গত বছরের তুলনায় আমাদের এলাকায় এবার ভূট্টার আবাদ অনেক বেশি হয়েছে। এলাকার কৃষকরা যাতে ভুট্টা যথাযথভাবে উৎপাদন করতে পারে এবং স্বল্প খরচে উচ্চ ফলনশীল ভুট্টা উৎপাদন করতে পারে এ জন্য আমরা শুরু থেকেই প্রতিনিয়ত কৃষকদের নিকট গিয়ে পরামর্শ প্রদান করছি। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে ভুট্টাকে মুক্ত রাখতেও পরিমিত পরিমান ঔষধ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছি।
এ ব্যাপারে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা কেরামত আলী বলেন, আমাদের এলাকায় এক সময় ধান ছাড়া অন্য কোন আবাদ হতো না বললেই চলে। কিন্তু বর্তমানে কৃষক ধানের পাশাপাশি ভুট্টার আবাদ করছে এবং অনেক লাভবানও হচ্ছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে আসছি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কেএম কাউছার হোসেন বলেন, সকল প্রকার ফসল উৎপাদনে আমরা কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করেছি। যাতে করে কৃষকরা সহজভাবে কৃষি উপকরণ পায়। বিশেষ করে বীজ, সার ও তেল এর জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা চালু রেখেছি। আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার ও পরামর্শ অনুযায়ী চাষ করায় এবারে উপজেলায় ভুট্টার ফলন ভাল হয়েছে। এতে কৃষকরা যথেষ্ট উপকৃত হয়েছে।