রবিবার ● ১৭ মে ২০২০
প্রথম পাতা » কুষ্টিয়া » ৫০ লাখ পরিবারকে ২৫০০ টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঈদ উপহার নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে কুষ্টিয়া দৌলতপুরে
৫০ লাখ পরিবারকে ২৫০০ টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঈদ উপহার নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে কুষ্টিয়া দৌলতপুরে
শামসুল আলম স্বপন, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :: কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে করোনা ভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্থ দুস্থ্য, হতদরিদ্র ও কর্মহীনদের মাঝে সরকারীভাবে আড়াই হাজার টাকার নগদ সহায়তার তালিকা নিয়েও নয়ছয় অবস্থা চলছে। যারা এই অর্থ পাওয়ার কথা অথচ সে অর্থ পাওয়ার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে স্বচ্ছল বা ধনী ব্যক্তিদের নাম। আবার দেশে নেই প্রবাসে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন এমন ব্যক্তির নামও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে এই তালিকায়।
ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে এ তালিকা প্রস্তুত করার কথা থাকলেও ওয়ার্ড কমিটির কোন সদস্যকে না জানিয়ে ঘরে বসে পছন্দের ব্যক্তিদের নাম বা আত্মীয় স্বজনদের নাম তালিকা ভূক্ত করা হয়েছে। আবার একই পরিবারের পিতা-পুত্রসহ একাধিক ব্যক্তির নামও অন্তর্ভূক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দৌলতপুর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে ১২হাজার ৬০০জন দরিদ্র ব্যক্তি নগদ অর্থ পাওয়ার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী তালিকাও প্রস্তুত করে তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রেরিত তালিকায় হতদরিদ্র, দিনমজুর, দুস্থ্য ও করোনার কারনে কর্মহীন হয়ে পড়া গরীব মানুষের নাম বাদ দিয়ে স্বচ্ছল ও বিত্তবানদের নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের পচামাদিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন প্রবাসে বিলাসবহুল জীবন যাপন করে সদ্য দেশে ফিরেছেন অথচ তার নাম এ তালিকায় রয়েছে।
একই অভিযোগ শিরিনা খাতুনের নামে। তার স্বামী বাহারুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে রয়েছেন। পচামাদিয়া গ্রামে অর্থ-সম্পদশালীদের মধ্যে সে একজন। সরকারীভাবে আড়াই হাজার টাকার নগদ সহায়তার তালিকায় রয়েছে তার নাম। একই ইউনিয়নের তেলিগাংদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শামীম নামে এক শিক্ষক পরিবারের ৬সদস্যের নামে অর্থসহায়তার তালিকাভূক্ত করার অভিযোগ রয়েছে।
মরিচা ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের তালিকাতেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর করোনাকালীন সরকারী ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করায় তার নামে আদালত স্বপ্রনোদিত মামলা করেছেন। তারপরও তিনি সরকারীভাবে আড়াই হাজার টাকার নগদ সহায়তার তালিকাতে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। এ ইউনিয়নের বালিরদিয়াড় গ্রামে তাঁর শ্বশুরের অর্থ সম্পদশালী তিন ছেলে এ কে এম শাহ জামাল, রিপন থান্ডার ও কামাল থান্ডারের নাম তালিকাভূক্ত করেছেন। একইভাবে বালিরদিয়াড় গ্রামের সম্পদশালী অনেকের নাম তালিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর তার ইউনিয়নের মহসিন আলী, শহিদুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান ও মানিকসহ সব গ্রাম পুলিশের নামে সরকারীভাবে আড়াই হাজার টাকার নগদ সহায়তার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করার।
এছাড়াও মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর গ্রামে স্বামী মকলেছুর রহমান ও তার স্ত্রী রেনুয়ারা খাতুনের নামে নগদ অর্থ সহায়তার তালিকায় নাম রয়েছে। নাম রয়েছে একই পরিবারের আপন দুই ভাই ইদ্রিস আলী ও জিন্দার আলী এবং মিঠুন ও তার ছোট ভাইয়ের। করোনাকালীন ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে এমন ব্যক্তির মধ্যে বৈরাগীরচর গ্রামের বিল্লাল, কালু ও হবিবরসহ অনেকের নাম রয়েছে নগদ অর্থ পাওয়ার তালিকা
অভিযোগ রয়েছে ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম ফজলুল হক কবিরাজের বিরুদ্ধে। সে ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের সাথে সমন্বয় না করে তালিকা প্রস্তুত করেছেন। ওই ইউনিয়নের গোলাম কিবরিয়া নামে ওয়ার্ড কমিটির এক সদস্য জানান, আমাদের না জানিয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। তবে এসব তালিকায় অসঙ্গতি রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তালিকা করার সময় কমিটির সদস্যদের সম্মতি নিয়ে না করার বিষয়টি অস্বীকার করেন ৩ নম্বর ফিলিপ নগর ইউনিয়নের চেযারম্যান ফজলুল হক কবিরাজ। তিনি বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়। কমিটির সদস্যদের সম্মতিতে করা হয়েছে। তালিকায় কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর রয়েছে।
এছাড়াও দৌলতপুরের আদাবাড়িয়া, বোয়ালিয়া, খলিশাকুন্ডি, পিয়াপুর, হোগলবাড়িয়া, আড়িয়া, মথুরাপুর ও রিফায়েতপুরহ প্রায় সব ইউনিয়নেই তালিকা প্রস্তুতে এমন জোড়াতালি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
আর সেসব ক্ষেত্রে ভোট হারানোর ভয়ে হতদরিদ্র, দিনমজুর, দুস্থ্য ও অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের পরিবর্তে অর্থবিত্তশালীদের নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।
সরকারীভাবে আড়াই হাজার টাকার নগদ সহায়তার তালিকার বিষয়ে দৌলতপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান জানান, দৌলতপুরে ১৪ ইউনিয়নের ১২ হাজার ৬০০ জনের নামে তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তালিকা আপলোডিংয়ের কাজ চলছে। তবে তালিকাভূক্তরা নগদ অর্থ সহায়তা কবে নাগাদ পাবে সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।
এবিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, অফিসে বসে তালিকা আপলোডিংয়ের কাজ করছি। তালিকা প্রস্তুত করেছে ওয়ার্ড কমিটি। এক্ষেত্রে আমাদের কিবা করার আছে। আর তালিকার বিষয়ে সারা দেশেই এমন অভিযোগ উঠেছে।
এমপি বাদশা নীরব কেন ?
শামসুল আলম স্বপন :: এমপি সারওয়ার জাহান বাদশা দুনীতি কিংবা স্বজন প্রীতি প্রশয় দেয়া মানুষ নয় । তার সম্পর্ক-এ জেলাবাসী ভালোই জানে । বন্ধু এবং রুমমেট হওয়ার কারণে আমার জানানাটা একটু বেশী । যখন কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যায়ল কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি তখন তার সততা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে নি। ছাত্র সংসদের টাকা নয় ছয় করার কোন ইতিহাসও তার নেই । এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর দৌলতপুর সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের মহা-দুনীতি তিনি লাগাম টেনে ধরেছিলেন । দৌলতপুরবাসী তাকে স্বাগত জানিয়েছিল । তিনি বিভিন্ন সভায়-জনসভায় স্পষ্ট জানিয়েছিলেন অন্যায়-অবিচার আর দুনীতির বিরুদ্ধে জিরাটলারেন্স ভূমিকা থাকবে তার। তার কাজ-কামে অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা । কিন্তু বুঝতে পারছিনা হঠাৎ করে দৌলতপুরে কি হলো ? করোনা ভাইরাসের এই মহামারীতে দৌলতপুরের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা যেন বে-পরোয়া হয়ে উঠেছে । সরকারি ত্রাণের চাল চুরি করে জেলায় তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে । পাশাপাশি দৌলতপুরে করোনা ভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্থ দুস্থ্য, হতদরিদ্র ও কর্মহীনদের মাঝে সরকারীভাবে ২৫০০ টাকার নগদ সহায়তার তালিকা নিয়েও নয়ছয় অবস্থা চলছে। যারা এই অর্থ পাওয়ার কথা অথচ সে অর্থ পাওয়ার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে স্বচ্ছল বা ধনী ব্যক্তিদের নাম। আবার দেশে নেই প্রবাসে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন এমন ব্যক্তির নামও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে এই তালিকায়। ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে এ তালিকা প্রস্তুত করার কথা থাকলেও ওয়ার্ড কমিটির কোন সদস্যকে না জানিয়ে ঘরে বসে পছন্দের ব্যক্তিদের নাম বা আত্মীয় স্বজনদের নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। আবার একই পরিবারের পিতা-পুত্রসহ একাধিক ব্যক্তির নামও অন্তর্ভূক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আমি বুঝতে পারছিনা দৌলতপুরের এমপি সাহেব এত অন্যায় দেখেও কেন নীরব ? তিনি কি দুনীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ নাকি স্বেচ্ছায় দুনীতিবাজদের কাছে স্যারেন্ডার করেছেন,কোনটি ?
কুষ্টিয়ায় লালন শাহ্ মাজারের সিন্দুকের টাকা চুরি
কুষ্টিয়া :: কুষ্টিয়ায় লালন মাজারের সিন্দুক চুরির ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকালে লালন মাজারের খাদেম রিপন মাজারের দরজা খুলে দেখেন সিন্দুকগুলোর তালা ভাঙা। ঘরের মধ্যে থাকা তিনটি সিন্দুকের তালা ভেঙ্গে চুরি হয়ে গেছে সব টাকা। লালন মাজারের যে ঘরটি রয়েছে ওই ঘরে লালনের পালিত মা মতিজান এবং ফকির লালন শাহের কবর রয়েছে। ওই ঘরের মধ্যে দানবাক্স হিসেবে সিন্দুক রয়েছে। রবিবার সকালে মাজারের খাদেম ঘরটি খুলে দেখেন দানবাক্সগুলোর তালা ভেঙ্গে চুরি হয়ে গেছে। রোববার সকালে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমীর সভাপতি মোঃ আসলাম হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গোটা লালন মাজারের সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সিসি ক্যামেরার মধ্যে কি ভাবে চুরি হলো এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। ২০১৩ সালে সর্বশেষ লালন একাডেমীর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তৎকালীন জেলা প্রশাসক ২০১৩ সালে নির্বাচিতদের কমিটিতে রেখে এডহক কমিটি গঠন করেন। দীর্ঘদিন ধরে ওই কমিটি গঠনতন্ত্র বহিভূত ভাবে ক্ষমতায় বসে আছেন। চুরির ঘটনায় সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচন না দিয়ে কয়েকজনকে ব্যক্তিকে দিয়ে এই ভাবে লালন একাডেমী পরিচালনা করার কারণে কাজের ওপর যতœ কমে গেছে। তাই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, সিসি টিভির ফুটেজ আমরা দেখেছি। ১৪ তারিখ রাতে ঝড় বৃষ্টি হয়। সেই সময় বিদ্যুৎ ছিলো না। সেই সময়ের ফুটেজ নেই। ওই সময় চুরি হয়ে থাকতে পারে। সকালে ঘটনাস্থলে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাজারের ঘরে যে স্কাইলেট আছে তা দিয়ে মানুষ অনায়েসে ঢুকতে পারে। লালন একাডেমীর আজীবন সদস্য ও সাবেক নির্বাচিত নির্বাহী সদস্য এ্যাড. মনোয়ার হোসেন মুকুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জেলা প্রশাসক যাদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন তারা উদাসীন। অবহেলার কারণে লালন মাজারে চুরি হয়েছে।এখন পর্যন্ত আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।