শনিবার ● ২৩ মে ২০২০
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » কর্মহীনদের মাঝে সিলেট বৌদ্ধ সমিতির ঈদ উপহার বিতরণ
কর্মহীনদের মাঝে সিলেট বৌদ্ধ সমিতির ঈদ উপহার বিতরণ
সিলেট প্রতিনিধি :: আজ ২৩ মে শনিবার তিনি সিলেটে “ধম্মকথা” বৌদ্ধ নিউজ পোর্টাল’র উদ্যোগে চট্টগ্রাম থেকে পদ্মবীণা ফাউন্ডেশন ও পবন চৌধুরীর সহযোগিতায় আসন্ন ঈদ উপলক্ষে করোনায় ঘরবন্দি হয়ে পড়া কিছু প্রতিবন্ধী ও গরীব মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে উৎফল বড়ুয়া । তিনি আজ ঈদ উপহার বিতরণের অংশ হিসেবে ১১ জন প্রতিবন্ধী ও ২৬ পরিবার গরীবের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ করেন।
অসহায় কর্মহীন-দরিদ্র মানুষের ফোন পেয়েই নগদ অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী নিয়ে চেনা-অচেনা অলিগলি ডিঙিয়ে অবিরত ছুটে চলেছেন এক যুবক। দিন-রাত সমান তালে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন সেবামূলক কাজে। কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রিয়ভাজন হওয়ায় সহকর্মীরাও তাঁকে এ কাজে উৎসাহ দিয়ে চলেছেন। একটি বহুজাতিক কোম্পানীতে কর্মরত এই যুবক নিজের বেতনের সর্বস্ব বিলিয়ে দিচ্ছেন মানুষের কলাণে। এই করোনাকালীন সময়ের এক আলোচিত নাম উৎফল বড়ুয়া। পিতার নাম প্রিয় রঞ্জন বড়ুয়া ও মাতার নাম রেনু প্রভা বড়ুয়া । মার্চ মাসের (২০২০ইং.) শুরুতে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রথমে মা এবং পরে বাবা, দু’জনকে হারিয়ে মৃত্যু শোকে স্তম্বিত হয়ে পড়েন যুবক উৎফল। শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে মানুষের কল্যাণে নেমে পড়েন আবার পুরোদমে। এ পর্যন্ত চলছে তাঁর কর্মজজ্ঞ। চট্টগ্রামস্থ রাউজানের পুর্বগুজরা ধুমারপাড়া গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান দীর্ঘ বছর ধরে কর্মসূত্রে বাস করছেন সিলেটে এবং সিলেট বৌদ্ধ সমিতির সাধারণ সম্পাদক’র দায়িত্ব সহ বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন পদে নিয়োজিত এ ছাড়াও তিনি একজন মানবাধিকার কর্মী। দরিদ্র মানুষের কল্যাণে গড়ে নেটওর্য়াক। উদার-বিনয়ী এই যুবক সেবাকার্যক্রমের সুবাধে সিলেটের ধনী-গরীব সকলের কাছে চেনা মুখ হয়ে ওঠেন উৎফল।
মরণ ঘাতক করোনা ভাইরাস ক্ষণে ক্ষণে রুপ পরিবর্তন করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্বময়। আক্রমন করছে মানুষের পর মানুষকে। মৃত্যুপুরি বানিয়ে ছেড়েছে তাবৎ বিশ্বকে, বাদ যাচ্ছেনা পশু-পাখি পর্যন্ত। দিনের পর দিন মুত্যুর সাড়ি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। করোনা সংক্রমনে মৃত্যুর কারণে আপন মানুষ হয়ে যাচ্ছে পর। ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরীতে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো প্রতিযোগিতায় নামলেও এখনো পর্যন্ত কোন প্রকার আলোর মুখ দেখেনি। এই ক্রান্তিকালে দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানুষের জীবনমান। হয়তো একটি সময় মানুষের হাতে পরাজিত হবে মরণঘাতক করোনা, ততদিনে আরো কতো প্রাণ নিভে যাবে কেউ জানেনা। মানুষ হয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে প্রাণপণ লড়াই করে চলেছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মি, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও সাংবাদিকরা সম্মুখ যোদ্ধার প্রথম সাড়িতে থেকে কাজ করে চলেছেন। জনদরদী রাজনীতিক ও সমাজ সেবকরা প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে সেবা কার্যক্রম চালাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত করোনা যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন। এই যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে গিয়ে দেশে কয়েকজন সম্মুখ যোদ্ধা ইতিমধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। তারপরও কোন যোদ্ধাই থেমে থাকার নয় ।
মৃত্যুকে জয় করতে প্রচেষ্টার কমতি নেই। এত কিছুর পরও কেউ রোগে-শোকে ভোগে করোনার কাছে হার মানছে, আবার কেউ কেউ পেটের ক্ষুধার কাছে হার মানতে বাধ্য হচ্ছে। মানুষের কাছে করোনার চেয়ে ক্ষুধার বিষয়টি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। অসহায়-দরিদ্র-কর্মহীন মানুষদের ক্ষুধার জ্বালা নিবারণে সরকারের পাশাপাশি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছসেবী সংস্থা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেবা দিয়ে চলেছেন অনেকে। যেটি পৃথিবীর অন্যকোন দেশে দেখা যায়নি। এই সংকটকালীন সময়ে বাংলাদেশের যুবকরা নানা রকম উদ্যোগ হাতে নিয়ে এগিয়ে এসেছেন অসহায় দরিদ্র মানুষের সেবায়। সে রকম এক ব্যতিক্রমী যুবক উৎফল বড়ুয়া । মানুষের সেবা করাই যার কাছে বড় ধর্ম হয়ে উঠেছে। চলমান সময়ে তাঁর দুরন্ত ছুটে চলা গল্পের কিছু কথামালা তুলে ধরলাম।
সিলেট সদরে একটি বহুজাতিক বেসরকারি কোম্পনীতে ম্যানেজার ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত উৎফল বড়ুয়া । প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছেন কর্মহীন দরিদ্র মানুষের কল্যাণে। সিলেটে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও খাদ্য সামগ্রী নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন অভাবী মানুষের দোড়গোড়ায়। সেবা কার্যক্রমে ইতিমধ্যে সিলেটের মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন এই যুবক। সিলেটের রাজনীতিক, সমাজ ও সংস্কৃতি কর্মিদের নিকট মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছেন উৎফল বড়ুয়া । সেবামূলক কাজ করতে গিয়ে সিলেটের অলিগলি, দরিদ্র, মানুষের আবাসস্থল সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা লাভ করেছেন। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা লকডাউন ঘোষনার কয়েকদিন পর থেকে সর্বত্র তিনি চষে বেড়াচ্ছেন। সিলেট বৌদ্ধ সমিতির সাধারণ সম্পাদক তরুন সংস্কৃতিকর্মি উৎফল বড়ুয়া বলেন, একজন রক্ত মাংসের মানুষ হয়ে যদি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে না পারি, তাহলে এজীবন বৃথা বলে মনেকরি। তাই একান্ত নিজের ইচ্ছা থেকেই দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করার ব্রত হয়েছি।
উৎফল বড়ুয়া বলেন, আমি এ পর্যন্ত অগণিত ক্ষুধার্ত-দরিদ্র মানুষকে খাদ্য সামগ্রী ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছি। সিলেটের আখালিয়া নতুন বাজার, সিলেট বৌদ্ধ বিহার, লাক্কাতুরা চা বাগান, শেখঘাট, তেররতন, সোবানীঘাট, সুবিদ বাজার, মদিনা মার্কেটের আশপাশেসহ আরো বহু এলাকায় কর্মহীন মানুষের ঘরে ঘরে সেবাকার্যক্রম চালিয়েছি। কারো ফোন পেয়েও অবিরত ছুটে চলেছেন মানবতাবাদী কল্যানকামী এই যুবক। সিলেটের অনেক সাংস্কৃতিক ও নাট্য সংগঠনেও তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিশেষকরে যে চা শিল্পের জন্য সিলেট বিখ্যাত সেই চা বাগানের শ্রমিকরা মানবেতর দিনযাপন করে। তা দেখে আমি হতবাক হয়েছি। বহু চা শ্রমিককে আমি অর্থ এবং খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। তাঁর স্বপ্ন সিলেটে কোন মানুষ যাতে ক্ষুধার যন্ত্রনায় কষ্ট না পায়, সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমি কাজ করে যাচ্ছি।
উৎফল বড়ুয়া বলেন, আমি উদ্যোগ নিয়েছি ঠিকই। কিন্তু এ কাজ আমার একার পক্ষে কোনভাবে করা সম্ভব হতো না- যদি চট্টগ্রাম ও সিলেটে আমার কিছু শুভানুধ্যায়ী আর্থিকভাবে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে না আসতেন। তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সে তালিকায় আছেন- চট্টগ্রামের চিকিৎসক ডাঃ দিবাকর বড়ুয়া, দীপংকর বড়ুয়া , যুব সংগঠক-ব্যবসায়ী উজ্জ্বল কান্তি বড়ুয়া , ডাঃ স্নেহাশীষ বড়ুয়া , সুজন বড়ুয়া , মনিবালা বড়ুয়া , অসীম বড়ুয়া , শর্মিলা বড়ুয়া , কৃশানু বড়ুয়া , উৎপলা বড়ুয়া , মনচন্দ্র-শুশীলা-বিমান-পটু ফাউন্ডেশন। সিলেট থেকে রামেন্দ্র বড়ুয়া , প্রকৌশলী রানা বড়ুয়া , অংশু মারমা, সাধন কুমার চাকমা, পলাশ বড়ুয়া , প্রকৌশলী সাজু বড়ুয়া ,উর্মি বড়ুয়া, সীমান্ত বড়ুয়া , সেতু বড়ুয়া মুক্তা প্রমূখ। উচ্চশিক্ষিত যুবক উৎফল বড়ুয়া “ধম্মকথা” নামের একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় পোর্টাল পরিচালনা করেন- তার এই অভিযাত্রায় সহযাত্রী হয়েছেন ধম্মকথার কলাকুশলী বৃন্দ।
আজ ২৩ মে শনিবার তিনি সিলেটে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে করোনায় ঘরবন্দি হয়ে পড়া কিছু প্রতিবন্ধী ও গরীব মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে উৎফল বড়ুয়া । তিনি আজ ঈদ উপহার বিতরণের অংশ হিসেবে ১১ জন প্রতিবন্ধী ও ২৬ পরিবার গরীবের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ করেন। ঈদ উপহার বিতরণ কাজে আমাকে চট্টগ্রাম থেকে সহযোগিতা করেন পদ্মবীনি ফাউন্ডেশন ও পবন চৌধুরী।
বিশেষ করে তিনি তার বড় ভাই চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, যিনি এবার সন্ধীপনা চট্টগ্রাম থেকে একুশে সন্মাননা অর্জন করেন, দানশীল ব্যক্তিত্ব সংগঠক, মানবাধিকার কর্ম উজ্জ্বল কান্তি বড়ুয়ার প্রেরণার কথা অকপটে তুলে ধরেন। মূলত তাঁর উৎসাহেই এ কাজে আমাকে সবচেয়ে বেশি শক্তি যুগিয়েছে। সেই সাথে তাঁর সহধর্মীনিও এ কাজে নিয়মিত সঙ্গ দিয়ে চলেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, পরিবারের সবাই যদি আমাকে মনেপ্রানে সহযোগিতা না করতো, তাহলে আমি এ কাজে কোনভাবে এগোতে পারতাম না। তিনি তাদের প্রতিও সমান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মানবতাবাদী এই যুবক করোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সকলের সহযোগিতা নিয়ে সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। স্বপ্নবান পুরুষ স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাক আমাদের নিরন্তর প্রত্যাশা।