রবিবার ● ২৪ মে ২০২০
প্রথম পাতা » কুষ্টিয়া » সাহসী সাংবাদিকতায় শরীফ বিশ্বাসের বিষ্ময়কর উত্থানে আমি মুগ্ধ
সাহসী সাংবাদিকতায় শরীফ বিশ্বাসের বিষ্ময়কর উত্থানে আমি মুগ্ধ
শামসুল আলম স্বপন :: ব্যক্তি স্বার্থে একশ্রেনীর দালাল সাংবাদিক যখন দুর্নীতিবাজ আমলা, নীতিহীন রাজনৈতিক নেতা ও শিল্পপতিদের “লেগ টাচ করে লেগ ডাচ মাথায় লাগানো’র মত নতজানু ও বেহায়াপনা সাংবাদিকতায় লিপ্ত হয়ে কুষ্টিয়ার সাংবাদিকতা পেশাকে বির্তকিত করে তুলেছে ঠিক তখন ছোট ভাই শরীফ বিশ্বাসের বিষ্ময়কর সাহসী সাংবাদিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে । সংবাদপত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ আর সাংবাদিকরা জাতির বিবেক । দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আজ সাংবাদিকদের মর্যাদা কতিপয় দালাল সাংবাদিকরাই ভূলুন্ঠিত করেছে । দু:খ হয় অনেক প্রকাশক-সম্পাদকই জানেন না তার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা কতটুকু । ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) পত্রিকার ছাড়পত্র দেয়ার পর পরই একজন প্রকাশক ডেপুটি কমিশনারের মর্যাদার সম মর্যাদা লাভ করেন । এটা হয় তারা জানে না অথবা জেনেও ব্যক্তি স্বার্থে তেল মারতে যেয়ে সমমর্যাদার মানুষকে স্যার ডেকে অস্থির করে ফেলেন ।
এ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়ার সাবেক জেলা প্রশাসক জনাব নজরুল ইসলামের সাথে ঘটে যাওয়া কুষ্টিয়ার দুইজন প্রথিতযশা সাংবাদিকের বাস্তব ঘটনা মনে পড়ে গেল । তখন বিএনপির শাসন আমল। অনেক নাটকীয়তার মধ্য দিয়েই কুষ্টিয়ায় জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলী হয়ে আসলেন এনজিও ব্যুরোর মহা-পরিচালক জনাব নজরুল ইসলাম। তখনও কুষ্টিয়াতে সাংবাদিকদের মাঝে চরম বিরোধ ছিল । কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব ও কুষ্টিয়া জেলা প্রেসক্লাব নামে দুটি প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের মাঝে ছিল সাপে-নেওলে সম্পর্ক। যে দিন জনাব নজরুল ইসলাম কুষ্টিয়াতে আসলেন সেদিন দুপুর থেকে একটি প্রেসক্লাবের দু’জন কর্মকর্তা ফুলের ডালি নিয়ে কুষ্টিয়া সার্কিট হাউজে অপেক্ষায় ছিলেন নবাগত জেলা প্রশাসককে স্বাগত জানানোর জন্য । মাগরিবের কিছুক্ষণ আগে নবাগত জেলা প্রশাসক সার্কিট হাউজে পৌছালেন। সার্কিট হাউজের কেয়ার টেকার শাহাবুদ্দিন ও অন্যান্য কর্মচারি তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত । কিন্তু গাড়ির দরজা খোলার সাথে সাথে দুজন সাংবাদিক ফুলের তোড়া জেলা প্রশাসকের হাতে সমর্পণ করার জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন । নবাগত জেলা প্রশাসক ফুলের তোড়া না নিয়ে ওই দুই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলেন । প্রখ্যাত (!) দুই সাংবাদিক তাদের পরিচয় ও অবস্থানের তুলে ধরলেন । তখন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম বিরোক্তির সুরে বললেন সাংবাদিক পেশাকে আমি শ্রদ্ধা করি কারণ আমি দেশবরেণ্য সাংবাদিক জনাব গাফফার চৌধুরীর সম্পদিত দৈনিক জনপদে ষ্টাফ রিপোর্টার হিসেবে অনেক দিন কাজ করেছি । সাংবাদিকতার কি মর্যাদা আমি জানি। আমাদের অফিসে আগাম জানিয়ে মন্ত্রী, এমপি, ঢাকার জেলা প্রশাসকসহ অনেক কর্মকর্তা এসেছিলেন কই আমরা তো তাদের রিসিভ করার জন্য কখনো ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকিনি। যেদিন আপনারা আমার কাজের ভুল ধরে সংবাদ প্রকাশ করে আমার চেম্বারে আসবেন আমি সেদিন সব চেয়ে বেশী খুশি হবো । এখন আপনার যান । দয়া করে দালালী আর তেলবাজি করে সাংবাদিকতা পেশাকে কলুষিত করবেন না।
ঘটনাটি ওই রাতেই আমাকে হুবহু জানান সার্কিট হাউজের কেয়ার টেকার শাহাবুদ্দিন । আমি তখন দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকার চীফ রিপোর্টার । বিষয়টি জেনে আমি হতবাক হই। “ ওরা এবারো দেখা করেছে ” শিরোনামে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখে আন্দোলনের বাজারে প্রকাশ করতে বাধ্য হই । লেখাটি নিয়ে হইচই পড়ে যায় সাংবাদিক মহলে। আসলে এখন বুঝতে পারি যত জ্ঞানই দেয়া হোক না কেন - ভেটুল গাছ লাগিয়ে আমের আশা করা ভুল । আমার সাংবাদিকতা হাতে খড়ি হয় সাপ্তাহিক ইস্পাতে । ওস্তাদ ছিলেন জনাব ওয়ালিউল বারী চৌধুরী । যার নাম শুনলে কাপতো দুর্নীতিবাজরা । অন্যায়ের সাথে কোনদিন আপোষ করেননি তিনি। তারপর হাতে কলমে কাজ শিখি দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকার সম্পাদক মনজুর এহসান চৌধুরীর সাথে প্রায় ৫ বছর । যে পত্রিকা অফিসে নিয়মিত জেলা প্রশসক, পুলিশ সুপার , রাজনৈতিক নেতারা নিত্য আসা যাওয়া করতেন। দালালী কাকে বলে আমরা জানতাম না । জনগণ ও পাঠকের স্বার্থের বাইরে কোন নিউজ করতাম না আমরা ।
ওই পত্রিকা অফিসেই এক সময় কাজ করতো শরীফ বিশ্বাস । সাংবাদিকতা শুরু থেকেই তাকে প্রতিবাদী হিসেবেই দেখেছি । অন্যায়ের কাছে তাঁকে মাথানত করতে দেখিনি । আমার মনে হয় এই কারণে সে আজ চ্যানেল ২৪ এর মত জনপ্রিয় একটি টেলিভিশনের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ।
তাঁর কারণে যদিও আমি ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ। শরীফ বিশ্বাসের একটি রিপোর্টের কারণে একজন শিল্পপতির সাথে আমার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় । তবুও আমি শরীফ বিশ্বাসের মানষিকতাকে ধন্যবাদ জানাই । আমি দেখেছি অপর এক শিল্পপতির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ করতে। সম্প্রতি চাল চুরি নিয়ে একটি ইউনিয়নের প্রভাশালী চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চ্যানেল ২৪ এর রিপোর্ট আমাকে মুগ্ধ করেছে । টাকার বিনিময়ে সংবাদ পাশ কাটিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ কুষ্টিয়াতে থাকলেও শরীফ বিশ্বাসের মাঝে তা দেখিনি কখনো। চ্যানেল ২৪ এর ৮ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে শরীফ বিশ্বাসকে শুধু ধন্যবাদ জানাবো না দোয়াও করবো প্রাণ ভরে । শরীফ বিশ্বাসের মত সকল সাংবাদিক জনগণের কল্যাণে সাংবাদিকতা করুক এমন স্বপ্ন দেখি আমি। তেলবাজি ও দালালী সাংবাদিকতা করে সাংবাদিক পেশাকে কলুষিত না করার জন্য অনুরোধ জানাবো সকল সাংবাদিককে । আসুন আমরা ঘুরে দাঁড়ায় দুর্নীতিবাজ আমলা, দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক নেতা ও সমাজের কীটদের বিরুদ্ধে।