মঙ্গলবার ● ২৬ মে ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঈদের আমেজ নেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলের মানুষের মনে
ঈদের আমেজ নেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলের মানুষের মনে
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: ঈদের আমেজ নেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট সহ ১০ জেলায় উপকুলের নিম্মআয়ের মানুষের। একদিকে করোনাভাইরাস, অন্যদিকে সুপার সাইক্লোন আম্পান ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারনে উপকূবাসীর মনে নেই কোন ঈদের আনন্দ। বছর শেষে একমাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব হলো ঈদু ফিতরের ঈদ উৎসব। এবার বিধাতা যেন ম্লান করে দিয়েছে নিম্মআয়ের মানুষের সেই ঈদের আমেজকে।
‘নিজের নতুন জামা কাপড় কেনা ও সন্তানদের কিনে দিতে না পারা যেন পিছনের দিনগুলোর স্মৃতিকে মনে করে কষ্টকে আরও বাড়িয়ে তোলা। এরকম কোনদিন হয়নি, প্রতিবছর কাজকর্ম করে উপার্জিত টাকা দিয়ে পরিবারের সবাইকে নতুন জামা-কাপড়সহ চিনি সেমাই রান্না করে প্রতিবেশিদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে নিজে আনন্দবোধ করতাম।’
এমনই অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন বাগেরহাটের শরনখোলা উপজেলার বগী-সাতঘর গ্রামের বাসিন্ধা জেলে কামাল হাওলাদার।
তিনি বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে একমুঠো চিড়া ও পানি খেয়েছি, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় আশ্রয়কেদ্রে থাকা অবস্থায় যে চিড়া দিয়েছিল, তা থেকে যা রয়েছে কিছু। তাই খেলাম। আমাদের আর কষ্টের সীমা নেই। এপ্রিল মাসে একটা ভিজিডি কার্ড দিয়েছে, তা থেকে একবার ৩০ কেজি চাউল পেয়েছি। এছাড়া কোন ত্রাণ পাইনি। কারণ ভিজিডি কার্ড থাকলে নাকি অন্যকিছু সহযোগিতা পাওয়া যায় না। কর্মহীন হয়ে থাকার চার জনের সংসার কিভাবে চলছে, নিজেই জানিনা। এছাড়া ঝড়ে ঘরের টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ভাঙা ভেড়িবাঁধ থেকে জোয়ারের পানি বাড়িতে ওঠা-নামা করায় আরও দুর্ভোগে ফেলেছে।
একই গ্রামের করোনাভাইরাসে কর্মহীন হয়ে পড়া নিন্ম আয়ের মানুষ ফুলমিয়া, মাহবুব, মিজান ও মমিন উদ্দিন বলেন, এভাবে ঈদের দিন কাটবে কোনদিন বুঝতে পারিনি। না পারলাম নতুন জামা-কাপড় কিনতে, না পারলাম ছেলে মেয়েদের দিতে। ছেলেমেয়েদের দিকে তাকালে নিজেকেও বুঝাতে পারছি না। তারপরও সৃষ্টিকর্তার দিকে তাকিয়ে আছি। এছাড়া নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধের পাশে বাস করার কারণে প্রতিবছর ঝড়-বন্যা যেন আমাদের পিছু ছাড়ছে না। প্রতিবছর ঈদের আগে ১০ কেজি করে সরকার চাল দিতো । এবার দেয়নি, ঈদে অনেক কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে।
স্থানীয় ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, আমাদের ওয়ার্ডের অধিকাংশ বাসিন্দার বলেশ্বর নদীর কোল ঘেষে বসবাস। আমার ওয়ার্ডে ৭০০ খানা রয়েছে, ৮০ শতাংশ জেলে সম্প্রদায়। এসব পরিবারে লোকসংখ্যা তিন হাজারের বেশি। করোনা ও ঝড়ের কারণে এবার ঈদে নতুন পোষাক তো দুরে থাক, সবমিলিয়ে ২৫-৩০ টি পরিবার সেমাই রান্না করেছে। বাধঁ ভাঙায় জোয়ারের লবণ পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার দূর্ভোগে রয়েছে। বাগেরহাটের শরনখোলা উপজেলার গাবতলা, তেরাবেকা, রায়েন্দা, সাউথখালী গ্রামসহ একই অবস্থা বিরাজ করছে উপকূল জুড়ে ।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর বাগেরহাট জেলার ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৪০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, সমপরিমাণ পরিবারকে নগদ ৯২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, আট হাজার ৩৮০ শিশুর জন্য খাদ্য কেনার নগদ ১৮ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
“এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে জেলার অসহায় ৭৫ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী আড়াই হাজার টাকা করে দিয়েছেন, যা অনেকেই ইতিমধ্যে পেয়ে গেছেন।”
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য ৫০০ বান্ডিল ঢেউটিন, ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তালিকা করে বিতরণ করা হচ্ছে।
জেলা শাসক জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর দিন থেকে সরকারের যে বিদ্যমান মানবিক সহায়তা রয়েছে, তা ঈদের আগেই আরও জোরদার করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস ও ঝড়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধির কারণে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ভাইরাস রোগ থেকে মুক্তি কামনায় ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদে ঈদের জামাত
বাগেরহাট :: মরণব্যাধি করোনা ভাইরাস রোগ মুক্তি কামনায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযোগ্য মর্যাদায় বাগেরহাটে ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাগেরহাটের ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। সকাল সাড়ে সাতটায় বাগেরহাটের বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এই মসজিদের বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন।
নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের জন্য কর্তৃপক্ষ মসজিদের প্রবেশ পথে হাত ধোয়ার জন্য সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখে। মুসল্লিরা মূখে মাস্ক পরে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কাতারে দাড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে সারিবদ্ধভাবে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মুসল্লিরা একে অপরের সাথে মুখে কুশলাদি বিনিময় করলেও যুগযুগ ধরে চলে আসা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন কোলাকুলি কেউ করেননি।
মুসল্লিরা বলেন, এবারের ঈদে মনে আনন্দ নেই। দেশে যেভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে তা থেকে যেন সবাই আমরা মুক্তি পেতে পারি নামাজ পড়ে সেই দোয়াই করলাম মহান আল্লাহ’র কাছে।
নামাজ আদায় শেষে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুসল্লিরা যেন নামাজ আদায় করতে পারেন সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। ষাটগম্বুজ মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা সব মুসল্লি সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। জেলার সকল মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যেন নামাজ আদায় করেন সেজন্য মসজিদ কমিটি ও সংশ্লিষ্ট ইমামদের পরামর্শ দেয়া হয়।