বুধবার ● ২৭ মে ২০২০
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » সুন্দরবন উপকূলে বৈরী আবহাওয়া মোংলাবন্দরে পণ্য খালাস কাজ ব্যাহত
সুন্দরবন উপকূলে বৈরী আবহাওয়া মোংলাবন্দরে পণ্য খালাস কাজ ব্যাহত
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: করোনা ভাইরাসের মধ্যেই বাগেরহাটের মোংলা বন্দরসহ সুন্দরবন উপকূল অঞ্চলে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট বায়ু চাপের প্রভাবে । যার কারনে মোংলা বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়ার ফলে হঠাৎ সকাল থেকে মুষলধরে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় একানকার মানুষ ঘর থেকে নামতে পারছেনা। অপরদিকে, কখনও হালকা ও আবার কখনও ভারী বৃষ্টির ফলে বন্দরে অবস্থানরত বানিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের আধিক্য বিরাজ করায় আজ বুধবার সুন্দরবন উপকূল অঞ্চলে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। থেমে থেমে কখনও মাঝারী আবার কখনও মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। উপকুলীয় এলাকায় প্রচন্ড বাতাস ছাড়াও বিরাজ করছে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া।
বৃষ্টির কারনে এখানকার নিম্ন আয়ের মানুষ ঘর থেকে নামতে না পারায় পরিবার নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়তে হচ্ছে তাদের। এদিকে বৃষ্টির ফলে মোংলা বন্দরে অবস্থানরত বানিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত এ বন্দরে সার, কিংকার, পাথর, গ্যাস, ফাই আ্যাশসহ ৮টি বাণিজ্যিক জাহাজ এ বন্দরে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় এখানে অবস্থান করছিল বলে জানায় বন্দর কর্তপক্ষ।
আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামত করা হবে : পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
বাগেরহাট :: ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে নদীর তীরবর্তী উপজেলা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা সরেজমিনে দেখতে মোরেলগঞ্জ পৌছেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় তিনি নৌপথে ভাঙ্গনকবলিত মোরেলগঞ্জ সদর বাজার, বারইখালী, কাঠালতলা, গাবতলা এলাকা পরিদর্শন করেন।পরিদর্শণকালে বলেন আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামত করা হবে।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের জন্য প্রাথমিক ভাবে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এ বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ টেকসই করার জন্য ১শ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড.আমিরুল আলম মিলন, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ, পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাট জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নহিদ-উদ-জামান, মোরেলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মনিরুল হক তালুকদার এ সময় তার সাথে ছিলেন।
গত বুধবার ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে পানগুছি নদীর তীরবর্তী এসব এলাকার রাস্তাঘাট, ব্লক পায়লিং, নদীতে ধ্বসে যায়। ৫ শতাধীক কাঁচা বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। প্রতিমন্ত্রী এরপরে শরণখোলার গাবতলী এলাকার বিধ্বস্ত ২ কিলোমিটার বেরিবাঁধ পরিদর্শন করেন।
করোনা আক্রান্ত’র বাড়িতে ঔষধ পৌঁছে দিল ইউএন ও
বাগেরহাট :: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কুমিল্লা থেকে বাগেরহাটের চিতলমারীতে আসা জুটমিল শ্রমিকের বাড়িতে উপজেলা প্রশাসন খাদ্য সামগ্রী ও ঔষধ পৌঁছে দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে চিতলমারী উপজেলার হিজলা কাজিপাড়া গ্রামে আক্রান্তের বাড়িতে গিয়ে এগুলো পৌঁছে দেয়া হয়। এ সময় করোনা ভাইরাস আক্রান্তের ঘটনায় আরও একটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। এর আগে আক্রান্ত’র বাড়িসহ আশেপাশের ৪ টি বাড়ি লকডাউনে ছিল। এ নিয়ে ওই এলাকার মোট ৫ টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হল। এছাড়া আগামী বৃহস্পতিবার আক্রান্ত ওই ব্যাক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হবে।
মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মারুফুল আলম এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মামুন হাসান মিলন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, এ নিয়ে চিতলমারীতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ জন। এরা সবাই বাইরে থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে এলাকায় ফিরেছেন। এদের মধ্যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে আসা পাটরপাড়া গ্রামের মোঃ কবিরুল মোল্লা (৩৫) ও ঢাকার জুরাইন থেকে আসা চরচিংগুড়ী গ্রামের স্বামী মোঃ ইমনার শেখ (২৫) এবং তার স্ত্রী সুমি আক্তার (১৮) (মোট ৩ জন) সুস্থ্য হয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মারুফুল আলম জানান, আক্রান্ত ওই ব্যাক্তি (৪২) উপজেলার হিজলা কাজিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কুমিল্লার একটি জুটমিলে কাজ করতেন। গত ২০ মে তিনি কুমিল্লা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন। করোনা উপসর্গ থাকায় তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে পালিয়ে তিনি পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এক আত্মীয়র বাড়িতে যান। সেখানে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৩ মে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তার নমুনা সংগ্রহ করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পাঠায়। ২৪ মে সে পুনরায় চিতলমারীর হিজলায় চলে আসে। ২৫ মে তার রিপোর্ট পজেটিভ আসে। এ খবর পেয়ে সোমবার রাতেই আক্রান্ত ব্যাক্তির বাড়িসহ আশেপাশের ৪ বাড়ি লকডাউন করে উপজেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে আজ মঙ্গলবার (২৬ মে) সকাল ১১ টার দিকে ওই বাড়ির পাশের আরো একটি বাড়িসহ মোট ৫টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সাথে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত জুটমিল শ্রমিকের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী ও ঔষধ পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মামুন হাসান মিলন জানান, আগামী বৃহস্পতিবার আক্রান্ত ওই ব্যাক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হবে।
সুন্দরবনে আম্ফানে ক্ষয়ক্ষতি পৌনে দুই কোটি টাকা
বাগেরহাট :: সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে পূর্ব সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ ৬৭ হাজার আটশ’ টাকা। এর মধ্যে বনের গাছের ক্ষতি সাত লাখ ৬০ হাজার একশ’ টাকা। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৬০ লাখ ৬৭ হাজার আটশ’ টাকা। তবে, বন্যপ্রাণীর কোনো ক্ষতি করতে পারেনি ঘূর্ণিঝড় আম্ফান।
শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের দুই সহকারী বন সংরক্ষকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির দাখিলকৃত রিপোর্টে এ ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টটি গতকাল সোমবার সকালে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সুন্দরবনের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় উপকূলবাসী রক্ষা পেলেও বনের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ২১ মে, শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন ও চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. এনামুল হকের নেতৃত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। ওই কমিটি তিন দিন সুন্দরবন পরিদর্শন করে (রোববার) বিভাগীয় দফতরে রিপোর্ট দাখিল করেন।
দাখিলকৃত ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, দুই রেঞ্জের তাল, বট, ঝাউ, শিরিস ও নাড়িকেলসহ বিভিন্ন প্রকারের ২৬টি গাছ উপড়ে গেছে এবং বেশ কয়েকটি গাছের লট ভেসে গেছে। এছাড়া অবকাঠামোগত ১৭টি পুকুর, ১৮টি কাঠের জেটি, ১৬টি অফিস, আটটি স্টাফ ব্যারাক, ২১টি সোলার, ১৬টি পানির ট্যাঙ্ক, পল্টুন একটি, ওয়াচ টাওয়ার একটি, ফুট ট্রেইল দুইটি, হরিণের শেড একটি, ডলফিনের শেড একটি ও দুইটি গোলঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী বা ম্যানগ্রোভ গাছের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি ঘূর্ণিঝড় আম্ফান।
বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, এসব ক্ষয়ক্ষতি টাকার হিসাবে ২৬টি গাছের মূল্য এক লাখ ৩৪ হাজার পাঁচশ’, ভেসে যাওয়া লটের মূল্য পাঁচ লাখ ৭১ হাজার ছয়শ’ এবং অবকাঠামোর ক্ষতির মূল্য এক কোটি ৬০ লাখ ৬৭ হাজার আটশ’ টাকা হিসাবে মোট এক কোটি ৬৭ লাখ ৭৩ হাজার নয়শ’ টাকা। ক্ষয়ক্ষতি এ রিপোর্ট এরইমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে অবকাঠামোগুলো মেরামত করা হবে।
করোনা ভাইরাসের মধ্যেই কৃষকের দুটি গরু বজ্রপাতে মারা গেল
বাগেরহাট :: করোনা ভাইরাসের মধ্যেইবাগেরহাটের শরণখোলায় বজ্রপাতে দুটি গরু মারা গেছে। আজ বুধবার উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। গরু দুটি রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহীম বেপারীর বলে জানা গেছে।
রায়েন্দা ইউনিয়নের এক নম্বব উত্তর রাজাপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন খান জানান, ইব্রাহিম বেপারী সকালে গরু দুটি গোয়াল থেকে ছাড়ার পর ঘাস খেতে খেতে পার্শ্ববর্তী ধানসাগর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে ঢুকে পড়ে। প্রবল বেগে বৃষ্টি শুরু হলে ওই গ্রামের সেলিম হাওলাদারে বাড়ির সামনে একটি গাছের নিচে গরু দুটি আশ্রয় নেয়। এসময় বজ্রপাত ঘটলে ঘটনাস্থলেই গরু দুটি মারা যায়। দরিদ্র কৃষকের গরু দুটির দাম প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা বলে ওই ইউপি সদস্য জানান।