শনিবার ● ৩০ মে ২০২০
প্রথম পাতা » গাজিপুর » করোনায় নজিরবিহীন বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে কৃষক ও ছাত্রসমাজ অবহেলিত
করোনায় নজিরবিহীন বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে কৃষক ও ছাত্রসমাজ অবহেলিত
এম এস হাবিবুর রহমান :: মানবজাতির আদিমতম পেশা হচ্ছে কৃষি। যুগ যুগ ধরে অবহেলিত কৃষকের হয়ে খুব কম মানুষই কথা বলেছে। দেশের খাদ্য জোগান দেন কৃষকরা। দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৯.১% এবং কৃষি খাতের মাধ্যমে ৪৮.১% মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। মানুষের জীবন ধারণের জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদন অপরিহার্য। কৃষি ও কৃষক আমাদের প্রত্যেকেরই মানুষের শেকড়ের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে মিশে আছে। কিন্তু শেকড়কে আমরা ভুলে যাই অতি সহজে। আমাদের অধিকাংশ মানুষের বাপ-দাদার পেশাও কৃষি। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের চাবিকাঠি হচ্ছে এ দেশের কৃষকসমাজ। কৃষক শ্রম দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, আপন সন্তানের মতো লালন-পালন করে ফসল ফলান। শস্যের যত্ন করেন, সার কীটনাশক দেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজের ইচ্ছামতো যত্ন নেন। কখনো ঝড়-বৃষ্টি বা তীব্র রৌদ্র কোনো কিছু কষ্ট মনে না করে মাঠে কাজ করেন আমাদের দেশের কৃষকরা। তবুও ভালোবাসা আর কষ্টমিশ্রিত কৃষকরা স্বপ্ন দেখেন ফসল নিয়ে। কৃষক শব্দটির সঙ্গে কষ্টের অনেক মিল। কিন্তু যখন কোনো ফসল উৎপাদন করেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, তখন কৃষকদের কি অবস্থা হচ্ছে! আপনি একটু ভাবেন তো?
কৃষকদের জন্য আর কি হবে,সবাই শুধু চিল্লা চিল্লি করছে,সবচেয়ে যেইটা অবাক করা বিষয় যে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরাও চিল্লাইতেছে, এইটা অত্যন্ত হাস্যকর, কারন এই সরকার শুধু না বাংলাদেশের কোন সরকারই কৃষকদের জন্য ভাবেনা, তারা শুধুমাত্র চাকরিজীবীদের আর ব্যাবসায়ীদের জন্য। মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর কৃষি পণ্যের উৎপাদনের লক্ষ্যে জীবনভর ক্লান্তিহীন ছুটে চলার কারণে নিজের দিকে ফিরে দেখার অবকাশ পান না কৃষি ও কৃষক দরদী মানুষরা।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য সবার আগে দরকার অবাধ তথ্যপ্রবাহ। পাশাপাশি প্রয়োজন ভাইরাসজনিত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের প্রণোদনা উদ্যোগ বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, সততা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে অনিয়ম বন্ধ করতে না পারলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা বঞ্চিত হবে, মানুষের দুর্দশা বাড়বে, অর্থনীতি বেগবান হতে সময় লাগবে। বর্তমানে জাতীয় দুর্যোগ চলছে। প্রতিদিনই সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে। পরীক্ষার হার বাড়াতে পারলে সংক্রমণের পরিমাণ হয়তো আরও বাড়বে। তবে বাড়ুক বা কমুক, করোনা সবার শত্রু।
এই ভাইরাস আগামী ছয় মাস থেকে দুই বছর থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। বাংলাদেশের বাস্তবতায় অনির্দিষ্টকাল লকডাউন রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু জনগণের সচেতনতার ঘাটতি আছে।করোনা দুর্যোগে দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি সংকটে পড়েছে। এ জন্য সরকার সব কিছু পর্যালোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাস মোকাবিলা এবং সংশ্নিষ্ট কার্যক্রমে অনিয়ম বা দুর্নীতিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
ফসলের ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। কৃষকের উন্নতি মানে আমাদের দেশের উন্নতি। কৃষকের ক্ষতি মানে দেশের ও আমাদের ক্ষতি। আমাদের দেশে বেশ কিছু জেলায় এ মুহূর্তে বেগুন, টমেটো, চিচিঙ্গা, পটল, লাউ ও কুমড়া, বরবটি, শশাসহ অধিকাংশ তরিতরকারি দ্রুত পচনশীল হওয়ায স্বল্প সময়ের মধ্যে পচে যাচ্ছে। টমেটো পাইকারি বিক্রি করতে হচ্ছে দেড় টাকা, দুই টাকায়, বেগুন দুই টাকা, তিন টাকায়। অপরদিকে কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সংকটকালে তাদের পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। হায় আমার দেশ!
ছাত্ররাই একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকে দেশ ও সমাজ। তারা ভোরের শিশির, প্রভাতের আলোর মতো নবজীবনের দ্যুতি ছড়ায়। তারা তাদের কর্মে দেশ ও সমাজের সব অনাচার, অবিচার, অসঙ্গতি দূরে ঠেলে দেয়। তাদের মধ্যে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তারা পারে না এমন কাজ পৃথিবীতে নেই। ছাত্রসমাজ জেগে উঠলে পুরো জাতি, দেশ ও পৃথিবী জেগে উঠে। তারা তাদের সংগ্রাম দিয়ে যেমন দেশকে সংঘাত মুক্ত করে তোলে, তেমনি নৈতিকতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যতা দিয়ে দেশকে সুখী ও সুন্দর করে তোলে।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তৎকালীন ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে এখনকার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার আমতলা থেকে মিছিল বের করে। আর সে মিছিলে গুলি চালিয়ে শহীদ করা হয় রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, শফিউরসহ আরও অনেককে। মাতৃভাষার জন্য এ জীবন দেয়া বিশ্বের বুকে আমাদের জাতিকে সম্মানিত করেছে। এমনকি ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ঐতিহাসিক বাঁকে ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনায় ছাত্ররা সামনে থেকে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, সেই স্বাধীন দেশে বর্তমানে ছাত্রসমাজ অবহেলিত, বঞ্চিত ও নিষ্পেষিত।
দেশের লাখো ছাত্র-ছাত্রীর অধিকাংশই আবাসিক হলে কিংবা মেসে থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরতদের টিউশনিও সঙ্গত কারণেই বন্ধ হয়ে গেছে। টিউশনি আর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষমের টাকায় যাদের পড়াশুনা, মেস ভাড়া ও আনুসঙ্গিক খরচ চলত এমন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা পড়েছে চরম বিপাকে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্থানে সেমিস্টার ফি ও বাসা ভাড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি ও বাসা ভাড়া প্রদান করা দুরূহ।
করোনা ভাইরাসের এই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পারবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটে পড়েছে। একারণে তারা অনেকেই নিজ নিজ স্থানে লকডাউন হয়ে আছেন। কিন্তু তাদের মাসিক বেতন তারা দিতে পারছেন না, বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক অসহায় শিক্ষার্থী তাদের সেমিস্টার ফি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ঝরে পড়ার আশংকা রয়েছে।
দেশের এই কঠিন ক্রান্তিকালে, করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আগামী এক বছরের বেতন-ফি মওকুফ ও অবিলম্বে বিপদগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সহায়তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবি। আজকের ছাত্রসমাজ আগামী দিনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবিলায় সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। ১২ এপ্রিল ‘কৃষি খাতে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’ শীর্ষক পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিন ৫ শতাংশ সুদের কথা বলা হলেও পরদিন ৪ শতাংশ সুদের হার ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার প্রকাশ করে। সরকার কৃষকের জন্য ঘোষিত প্রণোদনাতেও কৃষকের চেয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়েছে।তবু আমাদের কথা বলে যেতে হবে।
পরিশেষে শুধু এটাই বলবো যে, কৃষকদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থেই আমাদের কথা বলতে হবে কৃষকের পক্ষে। জীবনের চেয়ে মুনাফাকে প্রাধান্য দেওয়ার নীতিকে গুঁড়িয়ে দিতে হবেই।
লেখক : এম এস হাবিবুর রহমান, সম্পাদক ও প্রকাশক, নিউজ সমাহার। সিইও, জোনাকি মিডিয়া গ্রুপ।