সোমবার ● ১ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » করোনা যুদ্ধে কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগের ৩ জন ফন্ট্রলাইন যোদ্ধা
করোনা যুদ্ধে কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগের ৩ জন ফন্ট্রলাইন যোদ্ধা
অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই প্রতিনিধি :: বৈশ্বিক মহামারি কোভিট-১৯ করোনা ভাইরাস যেটি , চীনের উহান রাজ্য থেকে আজ বিশ্বের প্রতিটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও এই মরনব্যধি ভাইরাসের ব্যাপকতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলাতে ৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং গতকাল ১ জন ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, কোনো মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলো কি না তা নিশ্চিত হতে তার নাক এবং গলার ভেতর থেকে নিঃস্বরণ নিয়ে তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয়। যাকে বলা হয় সেম্পল বা নমুনা। অবশ্য এই নমুনা সংগ্রহ ওই ব্যক্তি থেকেই করা হয় যার মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়।
আর সেই সব সেম্পল কালেকশনে প্রতিনিয়ত
প্রাণের ভয়কে সঙ্গী করে সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং নিজের কর্মক্ষেত্রকে সম্মান রেখে প্রতিনিয়ত কাপ্তাইের দুর্গম এলাকাতে গিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেম্পল কালেকশন করছেন কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগের তিন ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা। তারা হলেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) হোসনে আরা, অমর চন্দ্র দাশ এবং তাপস চন্দ্র বণিক।
এদিকে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি ও সংস্পর্শ থেকে এই রোগ অন্যদের সংক্রমিত করে। তাই এই রোগীর কাছাকাছি যাওয়া মানে এই ভাইরাসটাকে আলিঙ্গন করে নিজেও আক্রান্ত হওয়া। তাই তো এটি নিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন আরো কতো কী সতর্কতা। অথচ ভয়াবহ এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করে যাচ্ছেন কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগের ৩ জন ল্যাব টেকনিশিয়ানরা।
নিজেও প্রাণঘাতী এই মহামারী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন এমন সমূহ আশঙ্কা নিয়েই তাঁরা সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাক এবং গলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আসছেন। তাই তো এদেরকে করোনা যুদ্ধের ‘ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা’ বলা হচ্ছে।
কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) অমর চন্দ্র দাশের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কতটা জীবনঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সেবায় তাঁদের সেম্পল কালেকশনে যেতে হয়। তিনি বলেন, গতকাল(৩১মে) করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া যুবকের সেম্পল কালেকশনে যেতে হয়েছে রাইখালী ইউনিয়ন এর দুর্গম এলাকায়। যেখানে প্রতিনিয়ত বন্যহাতি চলাচল করে এবং গতকালও তিনি বন্যহাতির আক্রমনের ভয় নিয়ে, মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে সেম্পল কালেকশন করেছেন। তিনি আরো বলেন, এই করোনা যুদ্ধে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হওয়ার পরেও তাদের সমাজের কিছু মানুষ খারাপ চোখে দেখে। তবুও পরিবারের সবাইকে নিরাপদ রেখে, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং নিজের কর্মক্ষেত্রকে সম্মান রেখে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাবেন তারা।
এদিকে কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগের অপর দুইজন ল্যাব টেকনিশিয়ান হোসনে আরা এবং তাপস চন্দ্র বণিক জানান, কাপ্তাই উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তারা ৬৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন যার মধ্যে ৩ জন পজিটিভ পাওয়া গেছে। এবং তারা আরো জানান, এই সেম্পল কালেকশন করতে গিয়ে তারা দেখেন করোনা সন্দেহে রোগীদের হেয় করছে সমাজের কিছু মানুষ। তাই তারা অনুরোধ জানান, যেন করোনা রোগীদের সবাই সুদৃষ্টিতে দেখেন এবং তারা আরো বলেন করোনা রোগ হওয়া মানে অপরাধ নয় বা করোনা হলেই যে মারা যাবে এমনটা নয়। সবাই সচেতন হলে করোনা আক্রান্ত রোগী যদি যথাযথ নিয়মকানুন মেনে চলে অবশ্যই সুস্থ হবে তারা আশা করেন।
এদিকে এই বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মাসুদ আহমেদ চৌধুরী জানান, করোনা রোগির নমুন কিংবা সন্দেহজনক রোগির নমুনা কালেকশান করে তাদের হাসপাতাল এর এই তিন জন ল্যাব টেকনিশিয়ান। তাঁরা যদিও পিপিই পরিধান করে নমুনা সংগ্রহ করে, কিন্ত এরপরও এই কাজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোন মূহুর্তে তারা আক্রান্ত হতে পারে। এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরোও জানান, হাসপাতাল এ এখন আরোও ল্যাব টেকনিশিয়ান প্রয়োজন। কারন প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহের পরিমান বাড়ছে।
করোনা যুদ্ধে এই তিন ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাকে জানাই স্যালুট।