বৃহস্পতিবার ● ৪ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাঙামাটিতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রত্যকটি করোনা রিপোর্ট প্রদানের দাবি জানিয়েছেন জুঁই চাকমা
রাঙামাটিতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রত্যকটি করোনা রিপোর্ট প্রদানের দাবি জানিয়েছেন জুঁই চাকমা
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: তিনি রাঙামাটি জেলার সংগ্রহীত নমুনার ফলাফল ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রদানের জন্য সরকার ও রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও রাঙামাটি গণ তদারকি কমিটির সদস্য সচিব জুই চাকমা। এছাড়া রাঙামাটিতে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য দাবি জানান, সেই সাথে ফোরহেড ইনফ্রারেড থার্মোমিটারের জন্য জন্য রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন এই বাম নেতা।
আজ ৪ জুন বৃহষ্পতিবার সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর সাথে বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতির বিষয়ে এক সাক্ষাতকারে এ দাবি জানান।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও রাঙামাটি গণ তদারকি কমিটির সদস্য সচিব জুই চাকমা বলেন, চট্টগ্রাম রয়েল হাসপাতালের নার্স কাপ্তাইয়ের বাসিন্দা থুইঅং প্রু মারমার মৃত্যুর ৪ দিন পরও রিপোর্ট না পাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। সে একজন স্বাস্থ্যকর্মী, তার মৃত্যুর ফলাফলের সাথে পরিবারের অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। কারণ মৃত্যুর ২দিন আগে থেকে সে তার পরিবারের সাথে ছিল, একসপ্তাহ আগে তার সহকর্মীদের সাথে ছিল, কাজে থুইঅং প্রু মারমার পরিবারের লোকজন বা সহকর্মীরা তার মাধ্যমে সংক্রমন হলো কিনা, সংক্রমিত হয়ে থাকলে তারা আরো লোকজনকে সংক্রমিত করছে বা করোনা ছড়াচ্ছে। পাশাপাশি তার করোনায় মৃত্যু হলে সরকারের ঘোষিত প্রনোদনার বিষয়টাও জরুরী। এটা দেশের এক কোনায় এই থুইঅং মারমা সমাজের কাছে করোনায় মৃত অথচ সরকারী খাতায় এখনো অজ্ঞাত। এরকম হাজার হাজার মৃত্যুর পরিসংখ্যান আমাদের অজানা থেকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে না এমন নয়, তারা কাজ করছে তবে শুধুমাত্র রুটিন ওয়ার্ক করছে। করোনা সংক্রমনের এবং মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে আমাদের এবং সাধারন মানুষের যথেষ্ট খটকা আছে। এই মহামারী করোনা সংক্রমনের এবং মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে না পারা হালকাভাবে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই বলেন জুই চাকমা।
উল্লেখ্য যে, রাঙামাটিতে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের ৫ম সপ্তাহ পূর্ণ হলো। শনাক্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৬৯ জনে। পরীক্ষার ধীরগতির কারণে আমরা অধিকাংশ সাধারন মানুষ জানিনা নিজেরাই না নিরবে বহন করে বেড়াচ্ছি করোনাভাইরাস। তার ভয়ংকর উদাহরণ রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের বাসিন্দা চট্টগ্রাম রয়েল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স থুইঅং প্রু মারমা। গত ৩১ মে করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনি মারা যান। কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা থানার অফিসার ইনচার্জ আশরাফ উদ্দিন, রাইখালী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এনামুল হক, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মাসুদ আহমেদ চৌধুরী করোনা উপসর্গ নিয়ে থুইঅং প্রু মারমার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মৃত্যুর ৪ দিন পরও তার করোনা রিপোর্ট রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে পৌঁছেইনি। ফলে সংক্রমনের ঝুঁকিও বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। হয়তো তার পরিবার বা সহকর্মীরাও তার মাধ্যমে সংক্রমিত। তাহলে চিকিৎসা ব্যবস্থাহীন করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার একমাত্র হাতিয়ার করোনা পরীক্ষার ফলাফল। যত দ্রুত রিপোর্ট সাধারন মানুষের তত সতর্কবস্থান। করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য জেলাবাসীর গণদাবির মধ্যেও সত্ত্বর আলোর মুখ দেখছেনা এ উদ্যোগ। যা স্বাস্থ্য বিভাগের “পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য আমরা চেষ্টা করছি” বক্তব্যর মধ্যে সীমাবদ্ধ। যদিও বেশকিছু ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিজেদের নাম পরিচয় গোপন রেখে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম দিয়েছে রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগকে।
এদিকে দেশের সর্ববৃহৎ জেলা রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে আজ পর্যন্ত একটিও ফোরহেড ইনফ্রারেড থার্মোমিটার নাই বলে জানা গেছে। যে যন্ত্রটি দিয়ে কোন ব্যাক্তির শারিরীক অবস্থা বিশেষ করে তাপমাত্রা জানা যায়। ফলে কোন করোনা সন্দেহজনক ব্যাক্তিকে প্রশাসন কোয়ারেন্টিনে রাখলে বা ব্যাক্তির ঘর বা অবস্থান লকডাউন দিলে শুধুমাত্র আইনী আদেশই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম। ব্যাক্তির শারিরীক অবস্থা সম্পর্কে সবকিছুই অজ্ঞাত থেকে যায়। তাই করোনা সংক্রমন সীমিত রাখতে জেলাবাসীর দাবি উঠেছে পিসিআর ল্যাব স্থাপন ও ফারহেড ইনফ্রারেড থার্মোমিটার এর ব্যবস্থা করা।
আজ ৪ জুন রাত ১০টা পর্যন্ত জেলায় মোট কোয়ারেন্টাইনে ২৯০৪ জন। হোম কোরেন্টাইনে ১৯৩০ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ৯৭৪ জন। এরমধ্যে কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করেছেন ২৬৭১ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ১১ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৩ জন।
এ পর্যন্ত ১২০৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ইন্সষ্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকসাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ফলাফল পাওয়া গেছে ৯৭৯ জনের রিপোর্ট অপেক্ষমান আছে ২২৯ জনের। তথ্যটি সিএইচটি মিডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা ফোকাল পারসন ডা. মোস্তফা কামাল।