শনিবার ● ৬ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » উখিয়াকে রেড জোনে ভাগ করে লকডাউনের কঠোর সিদ্ধান্ত
উখিয়াকে রেড জোনে ভাগ করে লকডাউনের কঠোর সিদ্ধান্ত
পলাশ বড়ুয়া, উখিয়া প্রতিনিধি :: মহামহারি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) আগ্রাসী থাবায় উখিয়ায় দিনদিন বাড়ছে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এবং জনগণকে নিরাপদে রাখতে উপজেলার কিছু অংশ করোনা ঝুঁকিতে থাকায় ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোর লকডাউন কার্যকর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উপজেলার রাজাপালং ও পালংখালীতে আক্রমণের সংখ্যা বেশি হওয়ায় কুতুপালং, থাইংখালীসহ বেশ কয়েকটি এলাকা রেড় জোনের আওতায় আনা হচ্ছে। এসব এলাকায় ১৪ দিনের জন্য কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হবে।
আজ শনিবার উখিয়া উপজেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে উখিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: নিকারুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে কোভিড-১৯ নোভেল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করণীয় বিষয়ক সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় উখিয়ার করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে অতিদ্রুত উখিয়াকে তিনটি জোনে ভাগ করে আরো কঠোর লকডাউন কার্যকর করার ব্যাপারে মতবিনিময় হয়।
উপস্থিত ছিলেন উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী, উখিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলার কমিশনার (ভূমি) আমিমুল এহসান খান, উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ রনজন বড়ুয়া রাজন,উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিনা আকতার, কুতুপালং বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতিহেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উপজেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, উখিয়ায় আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা শনাক্ত। বিশেষ করে যেসব এলাকায় করোনা রোগীর সংখ্যা বেশি সেসব এলাকাকে রেড জোনের আওতায় আনা হচ্ছে।
উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ২ নং, ৫, ৬ এবং ৯ নং ওয়ার্ড ও পালংখালী ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। আগামী সোমবার (৮জুন) দুই সপ্তাহের জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মতে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হবে।
জরুরি কাজের সাথে জড়িতরা রেড জোনে সীমিত আকারে চলাচল করতে পারবেন। স্বাস্থ্য বিধি মেনে সপ্তাহে দুইদিন রবিবার ও বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শুধুমাত্র মুদি, কাঁচাবাজার মাছ বাজার এবং ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে লকডাউনকৃত এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষকে সরকারিভাবে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিকারুজ্জামান চৌধুরী।
সভায় উখিয়া উপজেলার করোনা আক্রান্তের ধারা বিবরণী তুলে ধরা হয়।
এ পর্যন্ত উখিয়ায় উপজেলায় ১৩৪ জন করোনা আক্রান্তের শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। তার মধ্যে জালিয়া পালং ইউনিয়নে ১২জন, রত্মাপালং ইউনিয়নে ১৪ জন, হলদিযা পালং ইউনিয়নে ২জন, রাজাপালং ইউনিয়নে ৬৩ জন এবং পালংখালী ইউনিয়নে ৪৩ জন। তার মধ্যে সুস্থ হয়েছেসন ৩০জন বিবরণে উল্লেখ করা হয়।
এবার উখিয়ায় সেনাবাহিনীর উদ্যোগে অসহায়দের জন্যে ১ মিনিটের “সেনা বাজার”
উখিয়া :: এবার কক্সবাজারের উখিয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে অসহায় কর্মহীনদের জন্য বিনামূল্যে এক মিনিটের সেনা বাজার এর আয়োজন করেছে।
আজ ৬ জুন শনিবার ১০ পদাতিক ডিভিশন কর্তৃক কক্সবাজারের উখিয়া কলেজ মাঠে এই সেনা বাজারের আয়োজন করা হয়।
প্রতিবারের ন্যায় এবারো দূস্থ ও অসহায় ৫০০ পরিবার বিনামূল্যে এ বাজার হতে সুবিধা গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক দিকনির্দেশনা ও সেনাবাহিনী প্রধানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রভাব ও সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পানে কারনে ক্ষতিগ্রস্ত, অসহায় ও কর্মহীন হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সেবায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী শুরু থেকেই নিজেদের সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত করে মাঠ পর্যায়ের যোদ্ধা হিসাবে সম্মুখ সমরে নিয়োজিত রয়েছে।
প্রান্তিক জনপদে নিন্ম আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রাকে সহজ করার লক্ষ্যে সেনা সদস্যদের নিজেদের রেশন বাঁচিয়ে মানুষের মাঝে পৌঁছানোর পাশাপাশি ব্যতিক্রমধর্মী ১ মিনিটের “সেনা বাজার” আয়োজন করা বলে সংস্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন।
৬৫ পদাতিক ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই বাজার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন ৬৫ ব্রিগেড এর ব্রিগেড কমান্ডার, রামু সেনানিবাসের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাবৃন্দ ও জেলা-উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
রামু সেনানিবাসের মিডিয়া সমন্বয়ক ও মুখপাত্র মেজর তানজিল এর বরাতে জানা যায়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী যেমন চাল, আটা, তৈল, লবন, ডাল এবং বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি সম্বলিত এই ব্যতিক্রমধর্মী সেনাবাজারের আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য যে, পূর্বের মতো এবারও প্রত্যন্ত এলাকায় প্রান্তিক কৃষকদের নিকট হতে উপযুক্ত মূল্যে সবজি ক্রয় করে বাজারে নিয়ে আসা হয়।
তিনি আরো বলেন, “আপনাদের সুস্থতাই আমাদের কাম্য” এই স্লোগানকে সামনে রেখে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অসহায় ও দুস্থ মানুষদের জীবনযাত্রাকে সহজ করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর গৃহীত নানাবিধ কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পূর্ব পাহাড়, লম্বার ঘোনা, শৈলেরডেবা, ফলিয়া পাড়া, রাজা পালং, গুচ্চগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী কর্তৃক হত দরিদ্র মানুষদের তালিকা তৈরী করতঃ বিশেষ টোকেন প্রদান করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেনা বাজারের প্রবেশ পথে সেনাসদস্যদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল জীবাণুনাশক বুথ ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। সারি সারি টেবিলে পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা ছিল বিভিন্ন ধরনের দরকারি ত্রাণ সামগ্রী। অসহায় ব্যক্তিরা জীবানুনাশক টানেলের মধ্যে দিয়ে জীবাণুমুক্ত হয়ে নির্ধারিত সময়ে বাজারে উপস্থিত হয়ে টোকেন দেখিয়ে কোন প্রকার জটিলতা ছাড়াই স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ব্যাগে ভরে বাসায় নিয়ে যান।
এ সময় হত দরিদ্র মানুষদেরকে এই দুঃসময়ে বিশেষ মানবিক সহায়তা পেয়ে আনন্দে উচ্ছসিত হতে দেখা যায়।
এ সময় উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যদের মানবিক এই উদ্যোগ ও সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশংসা প্রকাশ করেন।
বাজার করতে আসা টিএন্ডটি এলাকার কবির আহমদ বলেন, করোনার কারণে সব ধরনের কাজ বন্ধ থাকায় আমরা অত্যন্ত কষ্টের মাঝে আছি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চাল, আটা, লবণ, তৈল, আলু, বরবটি, কচুর লতি, কাঁচামরিচসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেয়ে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। সেনাবাহিনীর এ ধরনের কার্যক্রম অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় “সেনা বাজার” পরিচালনা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জেলার অন্যান্য এলাকাতেও এ ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
উল্লেখ্য যে, কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম জেলার ৪টি উপজেলায় গত ২৪ মার্চ থেকেই মাঠে আছে সেনাবাহিনী। টহল কার্যক্রমসহ করোনার ভয়াবহতার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং মাস্ক বিতরন করছেন তারা। এছাড়া নিজেদের রেশন বাঁচিয়ে কর্মহীন অসহায়দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও কক্সবাজারের প্রবেশদ্বার চকরিয়ায় এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রবেশদ্বারে একাধিক ডিজইনফেকশন বুথের মাধ্যমে জরুরী সরবরাহ কাজে নিয়োজিত যানবাহনসমূহকে ও মানুষজনদের জীবাণুমুক্ত করছে সেনাবাহিনী। তারা সর্বশেষ সুপার সাইক্লোন “ঘূর্ণিঝড় আম্পান” উপদ্রুত এলাকাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও বাঁধ পুনঃনির্মাণ এবং দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা ও ত্রান প্রদানের মাধ্যমে দেশের কল্যাণে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।